পরিবেশবিষয়ক নতুন সংগঠন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) আত্মপ্রকাশ করেছে। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে নতুন সংগঠনের আত্মপ্রকাশের ঘোষণা দেওয়া হয়।
রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল বলেন, প্রাথমিকভাবে তাঁকে সভাপতি করে পাঁচ সদস্যের উপদেষ্টা কমিটি এবং গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরীকে আহ্বায়ক ও ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিলকে সদস্যসচিব করে ১৩ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে সুলতানা কামাল বলেন, সংবিধান অনুসারে এই দেশের মালিক দেশের জনসাধারণ। সরকারের দায়িত্ব সংরক্ষক হিসেবে কর্তব্য পালন করা। কিন্তু কখনে কখনো সরকারের আচরণ খারাপ ধরনের মালিকের মতো হয়ে ওঠে। দেশের প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকারকে সংরক্ষকের ভূমিকা পালন করতে হবে। নতুন সরকার গঠন হচ্ছে। আশা করব অতীতের ভুলত্রুটিগুলোর আর পুনরাবৃত্তি হবে না। তারা নতুন মনোভঙ্গি নিয়ে কাজ করবে।
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন ধরার আহ্বায়ক রাশেদা কে চৌধূরী। সংগঠনটির পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন, পরিবেশ বিপর্যয়, জলবায়ু পরিবর্তন, বাস্তুতান্ত্রিক সংকটময় পরিস্থিতিতে কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশে অনেক নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। ক্রমেই পরিবেশগত বিপর্যয় চরম আকার ধারণ করছে। এই সংকট মোকাবিলার জন্য সবাইকে নিয়ে একটি বড় সামাজিক শক্তি গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়েছে। সেখান থেকেই ধরা নামের এই সংগঠনটির যাত্রা। ধরা রাজধানীসহ সারা দেশের স্থানীয় পরিবেশকর্মীদের নিয়ে নদী ও পরিবেশ রক্ষায় কাজ করবে।
প্রাথমিকভাবে ১১ দফা কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে ধরা। এটি উপস্থাপন করেন সংগঠনের সদস্যসচিব শরীফ জামিল। এর মধ্যে রয়েছে—পরিবেশ নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন শ্রেণির ব্যক্তি ও সংগঠনগুলোকে সংগঠিত করে জন আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে দাবিগুলো জোরালোভাবে উপস্থাপন করা। ধরিত্রীকে দূষণমুক্ত রাখতে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া। উপযুক্ত নীতি ও আইন প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নে উদ্বুদ্ধ করা। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ ও সম্প্রদায়কে সংগঠিত করা। যথাযথভাবে তাদের স্বার্থ রক্ষা ও স্বচ্ছতা, জবাবদিহি নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখা। পরিবেশ ও জলবায়ুসংক্রান্ত আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক আন্দোলনকে শক্তিশালী করা। নদী, জলাশয়, বন, বাতাস দখল-দূষণমুক্ত রাখতে কর্মপরিকল্পনা নেওয়া এবং এ বিষয়ে গবেষণাকাজে সহায়তা করা।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন ধরার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান হাওলাদার, যুক্তরাষ্ট্র থেকে অনলাইনে যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন টেম্পল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক জিয়াউদ্দিন আহমেদ ও ঢাকা রোমান ক্যাথলিক চার্চের আর্চবিশপ বিজয় নিসফরাস ডি ক্রুজ।
আরও বক্তব্য দেন ধরার আহ্বায়ক কমিটির সহ–আহ্বায়ক ব্রতীর নির্বাহী পরিচালক শারমিন মুরশিদ, একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা এম এস সিদ্দিকী, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি আদিল মোহাম্মদ খান, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং ও মানবাধিকারকর্মী ফাদার জোসেফ গমেজ।
এ ছাড়া সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন সংসদ সদস্য রশিদুজ্জামান ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৭৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আকবর হোসেন। মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী, ‘চুনতি অভয়ারাণ্য রক্ষায় আমরা’ নামের আন্দোলনের সানজিদা রহমানসহ অনেকে।