উপাত্ত সুরক্ষা সংস্থার মহাপরিচালক উপাত্ত সরবরাহ করার নির্দেশ দিতে পারবেন। নির্দেশনা পালন করতেই হবে।
সরকারের প্রস্তাবিত উপাত্ত সুরক্ষা আইনের নতুন খসড়ায় উপাত্ত দেশে রাখার ক্ষেত্রে কিছুটা শিথিলতা আনা হয়েছে। তবে নির্বাহী বিভাগের অগাধ ক্ষমতা, সরকার চাইলেই উপাত্ত নেওয়া, মানবাধিকার ও বাক্স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হওয়ার ঝুঁকির মতো বেশ কিছু বিষয় রয়ে গেছে, যা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছিলেন অংশীজনেরা।
সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগ (আইসিটি) আইনটির নতুন খসড়া গতকাল মঙ্গলবার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে। এর আগে আইসিটি বিভাগ গত বছরের মার্চে উপাত্ত সুরক্ষা আইনের খসড়া প্রথমবারের মতো মতামত নেওয়ার জন্য ওয়েবসাইটে দিয়েছিল। এরপর কয়েকটি খসড়া হয়েছে। সেগুলোর ওপর দেশি ও বিদেশি সংস্থা, মানবাধিকার সংগঠন, দূতাবাস, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান থেকে মতামত ও পর্যবেক্ষণ জানানো হয়েছে।
উপাত্তের সংজ্ঞা আরও স্পষ্ট হওয়া দরকার। এ ছাড়া ব্যক্তিগত গোপনীয়তার সংজ্ঞা ও মানদণ্ড কী হবে, তা–ও খসড়ায় উল্লেখ নেই।মুহাম্মদ এরশাদুল করিম, শিক্ষক, ইউনিভার্সিটি অব মালয়া
নতুন খসড়াটি পর্যালোচনা করে মালয়েশিয়ার ইউনিভার্সিটি অব মালয়ার আইন ও উদীয়মান প্রযুক্তি বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক মুহাম্মদ এরশাদুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, আশার দিক যে সরকার খসড়ায় পরিবর্তনের কথা ভেবেছে। তবে খসড়াটি এখন পর্যন্ত অনেক বেশি বিধিনির্ভর। আইন বিধিনির্ভর হলে তা উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। তিনি বলেন, উপাত্তের সংজ্ঞা আরও স্পষ্ট হওয়া দরকার। এ ছাড়া ব্যক্তিগত গোপনীয়তার সংজ্ঞা ও মানদণ্ড কী হবে, তা–ও খসড়ায় উল্লেখ নেই।
নতুন খসড়ায় উপাত্ত স্থানীয়করণ, অর্থাৎ দেশের উপাত্ত দেশে রাখার কথাই বলা হয়েছে। তবে আন্তরাষ্ট্রীয় বাণিজ্য, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বা সরকার কর্তৃক নির্দিষ্টকৃত অন্য কোনো বিষয়ের প্রয়োজনে উপাত্ত স্থানান্তরের সুযোগ রাখা হয়েছে। সরকার প্রয়োজনে অন্য কোনো রাষ্ট্র বা বহুপক্ষীয় সংস্থা বা জোটে যোগদান করতে পারবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
অংশীজনদের একটি দাবি ছিল, আইনটি কার্যকরের ক্ষেত্রে তাদের প্রস্তুতির সময় দেওয়া। নতুন খসড়ায় আইনটি পাস হওয়ার পর তিন বছর পর্যন্ত কার্যকর করার সময় দেওয়া হয়েছে।
নতুন খসড়ায় উদ্বেগের দিক রয়ে গেছে। যেমন উপাত্ত সুরক্ষা এজেন্সির মহাপরিচালক নিয়ন্ত্রক, প্রক্রিয়াকারী বা সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তিকে প্রয়োজনীয় উপাত্ত সরবরাহ করার নির্দেশ দিতে পারবেন। নিয়ন্ত্রক, প্রক্রিয়াকারী বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এ নির্দেশনা পালনে বাধ্য থাকবেন। অর্থাৎ সরকার চাইলেই উপাত্ত নিতে পারবে।
খসড়ায় ধারা ১০–এ বলা আছে, জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বা অপরাধ প্রতিরোধ, শনাক্ত ও তদন্ত করার উদ্দেশ্যে উপাত্তধারীর কাছ থেকে উপাত্ত সংগ্রহ করা যাবে। এ বিষয়ে জাতিসংঘ উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছিল, এই ধারা বলবৎ হলে বাংলাদেশের ডেটা সেন্টার (উপাত্ত সংরক্ষণ কেন্দ্র) ও সার্ভারগুলোয় (তথ্যভান্ডার) সংরক্ষিত উপাত্ত নজরদারির আওতায় আসবে। বেসরকারি সংস্থাগুলোর ওপর গোপনীয় তথ্য প্রকাশের চাপের সৃষ্টি হবে। এই ধারা গণতান্ত্রিক শাসনকে দুর্বল করতে পারে।
উপাত্ত সুরক্ষা আইনের অধীনে স্বাধীন উপাত্ত সুরক্ষা সংস্থা (এজেন্সি) গঠনের সুপারিশ এসেছিল বিভিন্ন সংস্থা থেকে। খসড়ায় বলা হয়েছে, সরকার পৃথক এজেন্সি গঠন করবে। সরকারই জনবল নিয়োগ দেবে। সরকার প্রয়োজনে মহাপরিচালকের কাছে এ আইনের অধীন সম্পাদিত যেকোনো বিষয়ে প্রতিবেদন বা বিবরণী আহ্বান করতে পারবে এবং মহাপরিচালক তা সরবরাহ করবেন।
কোনো ব্যক্তির অধিকার লঙ্ঘিত হলে তিনি সরাসরি আদালতের দ্বারস্থ হতে পারবেন না—নতুন খসড়ার বিধানও এমনই।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গতকাল সচিবালয়ে গিয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও প্রস্তাবিত উপাত্ত সুরক্ষা আইন নিয়ে বৈঠক করেন নাগরিক সমাজের পাঁচজন প্রতিনিধি। তবে বৈঠকে উপাত্ত সুরক্ষা আইন নিয়ে আলোচনা হয়নি। বৈঠক শেষে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, খসড়াটি পর্যালোচনা করার পর তাঁরা আইনমন্ত্রীর সঙ্গে আগামী ৬ এপ্রিল এটি নিয়ে বৈঠক করবেন।