লাঠিতে ভর দিয়ে হাঁটুসমান পানি মাড়িয়ে এলেন ষাটোর্ধ্ব সানু আরা বেগম। খাবারের প্যাকেট আর পানির বোতল পেয়ে বললেন, ‘আইজ তিন দিন খাইয়া না–খাইয়া আছিলাম। তোমডার উছিলায় খানাপানি পাইছি। ঘরে নাতি, নাতিন, পুত আর পুতের বউ আছে। জীবনেও কল্পনা করছি নারে আমডার ঘরে পানি আইবো, আমডা না খাইয়া থাইক্কাম।’
কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার শংকুচাইল এলাকায় সোমবার সকালে প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। সেখানে ত্রাণ নিতে এসেছিলেন সানু আরা বেগম। শংকুচাইলে গতকাল ২৫০টি পরিবারের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যরা।
ক্রাচে ভর দিয়ে হেঁটে ত্রাণ নিতে এসেছিলেন হারুন মিয়া (৭০) নামের একজন। ত্রাণসামগ্রী হাতে হারুন বলেন, ‘পানির জন্য আইজ চাইর দিন ঘরের বাইরে। আমডা ১২ জন মানুষ। কেমনে বাঁইচ্চা আছি, কেউ জানে না। আইজ যে খাওন দিছো, এডি লইয়া হগলে মিল্লা খাইয়াম।’
ত্রাণ পেয়ে মমতাজ বেগম নামের এক নারী বলেন, ‘উপজেলা থাইক্কা দূরে আছি বইলা আমডার লাইগ্গা কেউ আইয়ে না। তোমডাই পরথম আইলারে বাপ। আল্লায় তোমডারে ফেরেশতা কইরা পাডাইছে।’
বুড়িচংয়ের পাশাপাশি আজ প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে ও নিজেদের সংগ্রহ করা অর্থে ফেনী পৌরসভা ও ছাগলনাইয়া উপজেলার ৩০০টি বন্যার্ত পরিবারের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন চট্টগ্রাম বন্ধুসভার সদস্যরা।
ফেনী নদীর তীরঘেঁষা ছেওরিয়া গ্রামের বাসিন্দারা পাঁচ দিন ধরে পানিবন্দী। নৌকা ছাড়া চলাচল প্রায় অসম্ভব। বিশুদ্ধ পানি ও শুকনা খাবারের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে গ্রামটিতে। নৌকায় ত্রাণসামগ্রী নিয়ে কাউকে আসতে দেখে দূর থেকে আওয়াজ দিলেন গ্রামের দুই বাসিন্দা মিঠুন চন্দ্র দাস ও সুমন চন্দ্র দাস। সবার আগে চাইলেন খাওয়ার পানি।
গ্রামটির এ দুই বাসিন্দা জানালেন, পাঁচ দিন ধরে পুরো গ্রাম পানিবন্দী। কোথাও যাওয়ার উপায় নেই। ত্রাণ নিয়েও সেভাবে কেউ আসছে না। এর আগে এক দিন শুধু সেনাবাহিনী ত্রাণ দিয়ে গেছে। এমন অবস্থায় খাবার ও বিশুদ্ধ পানি পেয়ে স্বস্তি ফিরে পেলেন বলে জানালেন তাঁরা।
চট্টগ্রাম বন্ধুসভার উপদেষ্টা ফাহিম উদ্দিন বলেন, ‘প্রত্যন্ত অনেক এলাকার মানুষ তেমন ত্রাণ পাচ্ছেন না। আমরা চেষ্টা করেছি এখন পর্যন্ত ত্রাণ না পাওয়া মানুষগুলোর কাছে ত্রাণ পৌঁছে দিতে।’
হিসাবের নাম: প্রথম আলো ট্রাস্ট/ ত্রাণ তহবিল। হিসাব নম্বর: ২০৭২০০০০১১১৯৪, ঢাকা ব্যাংক পিএলসি, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা।
অথবা বিকাশে পেমেন্ট করতে পারেন: ০১৭১৩-০৬৭৫৭৬ এই মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট নম্বরে। বিকাশ অ্যাপে ডোনেশন অপশনের মাধ্যমেও আপনার অনুদান পাঠাতে পারেন।