রূপপুরের পণ্য খালাস না করে ভারত থেকে ফিরে গেছে রুশ জাহাজ

মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় থাকা রাশিয়ার জাহাজটি
ছবি: সংগৃহীত

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সরঞ্জাম খালাস না করেই ভারতের জলসীমা ছেড়ে গেছে মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় থাকা রুশ জাহাজ ‘উরসা মেজর’।

প্রায় দুই সপ্তাহ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে পণ্য খালাসের জন্য অপেক্ষা করেছিল জাহাজটি। কিন্তু পণ্য খালাসের জন্য জাহাজটি নয়াদিল্লির অনুমতি পেতে ব্যর্থ হয়। এ অবস্থায় ১৬ জানুয়ারি ভারতের জলসীমা ছেড়ে যায় জাহাজটি।

সেদিনই (১৬ জানুয়ারি) রাশিয়ার পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে জানানো হয়, উরসা মেজরের পরিবর্তে এখন অন্য জাহাজে করে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সরঞ্জাম বাংলাদেশে পাঠানো হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আজ বৃহস্পতিবার সকালে প্রথম আলোকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, উরসা মেজরের পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়া বন্দরে পণ্য খালাসের কথা ছিল। কিন্তু হলদিয়া বন্দরে পণ্য খালাস না করে জাহাজটির ফিরে যাওয়ার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর সাম্প্রতিক সফরের যোগসূত্র রয়েছে। সম্প্রতি ডোনাল্ড লু ভারত ও বাংলাদেশ সফর করেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সরকারের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে বলেন, ডোনাল্ড লুর বাংলাদেশ সফরের সময় উরসা মেজরে রূপপুরের পণ্য পরিবহনের প্রসঙ্গটি আলোচনায় আসে। ১৫ জানুয়ারি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আলোচনার সময় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ডোনাল্ড লুরকে বলা হয়, জাহাজটিতে পণ্য খালাসে জটিলতার কারণে রূপপুর প্রকল্প বিলম্বিত হবে। তা ছাড়া একই জাহাজে আগে ভারতে পণ্য খালাস হয়েছে। এখন বাংলাদেশে পণ্য খালাসের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞার প্রসঙ্গটি সামনে এনেছে যুক্তরাষ্ট্র। তখন ডোনাল্ড লু জানান, উরসা মেজরের ওপর থাকা মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কথা ভারতকেও জানানো হয়েছে। ভারতেও জাহাজটি পণ্য খালাস করতে পারবে না।

রাশিয়ার পতাকাবাহী জাহাজটির রূপপুর প্রকল্পের সরঞ্জাম নিয়ে গত ২৪ ডিসেম্বর মোংলা বন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল। তার আগেই ২০ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে জানানো হয়, জাহাজটি আসলে ‘উরসা মেজর’ নয়। এটি মার্কিন নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা ‘স্পার্টা-৩’ জাহাজ। জাহাজটির আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক সংস্থার (আইএমও) সনদ নম্বর: ৯৫৩৮৮৯২, যা প্রকৃতপক্ষে ‘স্পার্টা-৩’ জাহাজের সনদ নম্বর। বিষয়টি যাচাই করে বাংলাদেশ নিশ্চিত হয়ে জাহাজটিকে বন্দরে ভিড়তে নিষেধ করে দেয়। অবশ্য রাশিয়া দাবি করে, জাহাজটি ‘স্পার্টা-৩’ ওরফে ‘উরসা মেজর’।

সামুদ্রিক জাহাজের সবশেষ অবস্থান শনাক্তকরণ-সংক্রান্ত ওয়েবসাইট গ্লোবাল শিপ ট্র্যাকিং ইন্টেলিজেন্সের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, উরসা মেজর ১৬ জানুয়ারি ভারতের জলসীমা ছেড়ে যায়। এদিনই ঢাকায় রুশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে উরসা মেজরের ভারতের জলসীমা ছেড়ে যাওয়ার তথ্য জানানো হয়। দুই দিনের বাংলাদেশ সফর শেষে ১৫ জানুয়ারি রাতে ঢাকা ছাড়েন মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু।

ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস গত বছরের ২০ ডিসেম্বর এক কূটনৈতিক পত্রে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় আছে ‘উরসা মেজর’। তাই জাহাজটিতে পণ্য ওঠানো-নামানো, জ্বালানি সরবরাহ, নাবিকদের যেকোনো ধরনের সহযোগিতায় যুক্ত হলে সংশ্লিষ্ট দেশের মার্কিন নিষেধাজ্ঞা বা বড় আর্থিক দণ্ডের মুখে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হবে।

মার্কিন কূটনৈতিক পত্রের বিষয়টি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে জানায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় জাহাজটিকে বাংলাদেশের কোনো বন্দরে ভিড়তে দিতে অসম্মতি জানায়। বন্দরে জাহাজটির ভেড়ার জন্য আগে দেওয়া অনুমতি তারা বাতিল করে। এ নিয়ে রাশিয়া কূটনৈতিক চিঠির মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করে। জাহাজটিকে যাতে বন্দরে ভিড়তে দেওয়া হয়, সে জন্য ঢাকার ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করে মস্কো। তবে তাতেও ঢাকা রাজি হয়নি। বরং জাহাজটিকে ফিরে যেতে বাধ্য করে বাংলাদেশ। পরে জাহাজটি পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়া বন্দরে গিয়ে পণ্য খালাসের চেষ্টা করে। সংশ্লিষ্ট স্থানীয় এজেন্ট হলদিয়া বন্দর থেকে পণ্য বাংলাদেশের রূপপুরে পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল বলে জানা যায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা-ও সম্ভব হয়নি।