চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটে এসে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন শিক্ষকেরা। রোববার বিকেল সাড়ে পাঁচটায়
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটে এসে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন শিক্ষকেরা। রোববার বিকেল সাড়ে পাঁচটায়

চবির চারুকলায় ৯ ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর ছাড়া পেলেন ১২ শিক্ষক

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটে ৯ ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর ছাড়া পেয়েছেন ১২ শিক্ষক। তাঁদের মধ্যে ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহকারী প্রক্টর আছেন।

গতকাল রোববার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তাঁরা ইনস্টিটিউটে এসেছিলেন। বিকেল ৫টা থেকে তাঁরা অবরুদ্ধ ছিলেন। দিবাগত রাত সোয়া ২টার দিকে তাঁরা ইনস্টিটিউট থেকে বের হন।

অবরুদ্ধ থাকা ব্যক্তিরা হলেন ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রণব মিত্র চৌধুরী, ইনস্টিটিউটের শিক্ষক জাহেদ আলী চৌধুরী, মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, সুফিয়া বেগম, উত্তম কুমার বড়ুয়া, নিত্যানন্দ গাইন, শারদ দাশ, উম্মে তানিয়া, কাজল দেব নাথ, মুহাম্মদ ওবায়দুল কবির, হ্লু বাই শু চৌধুরী, বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর মুহাম্মদ ইয়াকুব ও উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এম এ সাকুর।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলছেন, চারুকলাকে মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের কাগজপত্র নেবেন বলে ইনস্টিটিউটের ভেতরে ঢুকতে চান শিক্ষকেরা। এ কারণে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ইনস্টিটিউটের মূল ফটকের তালা খুলে দেন। কিন্তু শিক্ষকেরা ব্যক্তিগত কাগজপত্র নিয়ে যাচ্ছিলেন। তাই তাঁরা শিক্ষকদের অবরুদ্ধ করে রেখেছিলেন।

সহকারী প্রক্টর মুহাম্মদ ইয়াকুব প্রথম আলোকে বলেন, চারুকলাকে মূল ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করতেই তাঁরা ইনস্টিটিউটের ভেতরে গিয়েছিলেন। তবে শিক্ষকদের আয়কর রিটার্নের কিছু কাগজপত্র ইনস্টিটিউটের কার্যালয়ে ছিল। কয়েকজন শিক্ষক তা নিয়েছিলেন। কিন্তু তার জেরে শিক্ষার্থীরা যে ধরনের আচরণ শিক্ষকদের সঙ্গে করেছেন, তা দুঃখজনক, অসম্মানজনক।

চারুকলাকে মূল ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নেওয়ার দাবিতে গত বুধবার থেকে ইনস্টিটিউটের ফটকে তালা দিয়ে অবরোধ কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থী। ফলে সেদিন থেকেই কার্যত অচল রয়েছে ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম।

চারুকলার সমস্যা সমাধানে ১১ নভেম্বর ১৪ সদস্যের একটি কমিটি করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কমিটিতে চারুকলার ১১ শিক্ষক ছাড়াও সহকারী প্রক্টর মুহম্মদ ইয়াকুব আছেন।

গতকাল সন্ধ্যায় ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ইনস্টিটিউটের মূল ফটকে তালা দিয়ে অবস্থান করছেন শিক্ষার্থীরা। মূল ক্যাম্পাসে ফিরে যাওয়ার দাবিতে তাঁরা স্লোগান দিচ্ছিলেন। তখন ইনস্টিটিউটের ভেতরে প্রশাসনিক ভবনে অবস্থান করছিলেন শিক্ষকেরা। শিক্ষকদের ব্যক্তিগত কোনো জিনিস নিয়ে ইনস্টিটিউটের বাইরে যেতে দেওয়া হবে না বলে একপর্যায়ে দাবি তোলেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

ইনস্টিটিউটের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ শহীদ বলেন, স্থানান্তরের কাগজপত্র নেওয়ার শর্তে ইনস্টিটিউটের ভেতরে শিক্ষকদের ঢুকতে দেওয়া হয়েছিল। এ কারণে শিক্ষকদের কোনো ব্যক্তিগত জিনিসপত্র নিয়ে বের হতে দেওয়া হয়নি। দিবাগত রাত সোয়া ২টার দিকে ব্যক্তিগত জিনিসপত্র ছাড়াই শিক্ষকেরা ইনস্টিটিউট থেকে বের হন।
১১ দাবিতে ২ নভেম্বর ক্লাস বর্জন করে বিক্ষোভ শুরু করেন ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। তখন থেকে ক্লাস বর্জন অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি তাঁরা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন।

ইনস্টিটিউটকে মূল ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নেওয়ার দাবিতে ৫ নভেম্বর উপাচার্য শিরীণ আখতার বরাবর চিঠি দেন শিক্ষার্থীরা। ইতিমধ্যে তাঁরা ক্যাম্পাসের শহীদ মিনারের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত না আসায় ১০ নভেম্বর চট্টগ্রাম নগরের বাদশা মিয়া সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এরপর গত বুধবার সকাল থেকে ইনস্টিটিউটের ফটকে তালা দিয়ে অবরোধ করে রেখেছেন তাঁরা।

চবিতে চারুকলা বিভাগের যাত্রা শুরু হয় ১৯৭০ সালে। ২০১০ সালে নগরের সরকারি চারুকলা কলেজের সঙ্গে এক হয়ে গঠিত হয় চারুকলা ইনস্টিটিউট।

ইনস্টিটিউটের অবস্থান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে নগরের মেহেদীবাগের বাদশা মিয়া সড়কে। বর্তমানে ইনস্টিটিউটে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৫৩। তাঁদের মধ্যে ছাত্রী ১৭৯ ও ছাত্র ১৭৪ জন।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, ইনস্টিটিউটের শ্রেণিকক্ষগুলোর অবস্থা জীর্ণশীর্ণ। ছাত্রীদের জন্য মাত্র একটি শৌচাগার আছে। আবাসনসুবিধা পান মাত্র ১৩ শিক্ষার্থী। গ্রন্থাগারে বই নেই। ডাইনিংয়ে খাবারের ব্যবস্থা নেই। পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না থাকায় তাঁরা মূল ক্যাম্পাসে ফিরে যেতে চান।