এবারের ঈদযাত্রায় ৩১২ দুর্ঘটনা, সবচেয়ে বেশি মোটরসাইকেলে

দুর্ঘটনার প্রতীকী ছবি
দুর্ঘটনার প্রতীকী ছবি

এবারের ঈদযাত্রার ১৫ দিনে সড়ক, রেল ও নৌপথে ৩১২টি দুর্ঘটনায় ৩৪০ জন নিহত ও ৫৬৯ জন আহত হয়েছেন। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

আজ শনিবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। গত ২২ জুন থেকে শুরু করে ৬ জুলাই বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা হিসাব করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ঈদে সড়কপথে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বেশি হয়েছে। ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ড ভ্যান দুর্ঘটনাও বেড়েছে। এবারের ঈদে ৯১টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ৯৪ জন নিহত ও ৭৭ জন আহত হয়েছেন, যা মোট দুর্ঘটনার ৩২ দশমিক ৮৫ শতাংশ।

আর ৮৮টি ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ড ভ্যান দুর্ঘটনায় ৯৩ জন নিহত এবং ১৯৩ জন আহত হয়েছেন, যা মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৩১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২৭৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৯৯ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৫৪৪ জন। একই সময়ে রেলপথে ২৫টি দুর্ঘটনায় ২৫ জন নিহত ও ১০ জন আহত হয়েছেন। নৌপথে ১০টি দুর্ঘটনায় ১৬ জন নিহত এবং ১৫ জন আহত হয়েছেন। নিখোঁজ ৬ জন।

সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, আমাদের সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের সদস্যরা বহুল প্রচারিত ও বিশ্বাসযোগ্য জাতীয় দৈনিক, আঞ্চলিক দৈনিক ও অনলাইন দৈনিকের প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছেন। তবে তিনি মনে করেন, বিভিন্ন চিকিৎসাকেন্দ্রের যে পরিস্থিতি, তাতে হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা প্রতিবেদনের থেকে কয়েক গুণ বেশি হতে পারে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, মোট দুর্ঘটনার ৩৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ২৯ দশমিক ২৪ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ২৯ দশমিক ৬০ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়। এ ছাড়া মোট দুর্ঘটনার ১ দশমিক ৮ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে হয়েছে।

দুর্ঘটনার কারণ

ঈদে সড়ক দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে প্রতিবেদনে বলা হয়, ঈদের তিন দিন আগে থেকে জাতীয় মহাসড়কে ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান চলাচলের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করা, দেশের সড়ক-মহাসড়কে মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকের অবাধে চলাচল, অতিরিক্ত গতি, মহাসড়কের নির্মাণ ত্রুটি, যানবাহনের ত্রুটি এবং ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবণতা।

এ ছাড়া উল্টো পথে যানবাহন চালানো, সড়কে চাঁদাবাজি, পণ্যবাহী যানে যাত্রী পরিবহন, অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, অতিরিক্ত যাত্রী বহন এবং দ্রুতগতির বাসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ধীরগতির পশুবাহী ট্রাক-পিকআপ চলাচলকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সুপারিশ

দুর্ঘটনা প্রতিরোধে যাত্রী কল্যাণ সমিতি কিছু সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে আছে মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকের মতো ছোট যানবাহনের আমদানি ও নিবন্ধন বন্ধ করা। দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ, ডিজিটাল পদ্ধতিতে যানবাহনের ফিটনেস প্রদান, ধীরগতির যান ও দ্রুতগতির যানের জন্য আলাদা লেনের ব্যবস্থা করা, সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধ করা, চালকদের বেতন ও কর্মঘণ্টা সুনিশ্চিত করা।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করতে হলে সড়ক পরিবহন আইন যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে এবং ডিজিটাল পদ্ধতিতে ট্রাফিক আইন প্রয়োগ করতে হবে। ঈদের তিন দিন আগে থেকে জাতীয় মহাসড়কে ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান চলাচলের নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন করার সুপারিশ করা হয়েছে।