গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী কল্যাণকর রাষ্ট্র ও সমাজের চিন্তা করেছেন। রাজনৈতিক কাঠামোতে ঢুকতে না পারা প্রান্তিক মানুষের কথা ভেবেছেন। তিনি ছিলেন সত্যিকার বুদ্ধিজীবী। দেশকে বদলাতে, সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করতে চাওয়া তরুণদের জন্য তিনি বড় অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর স্মরণে আজ শনিবার তরুণদের সংগঠন রিডিং ক্লাব ট্রাস্ট আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা। ‘ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর স্বপ্ন, সাধনা ও রাজনীতি’ শিরোনামে অনলাইনে আয়োজিত আলোচনা সভায় মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদান, স্বাস্থ্য খাত নিয়ে তাঁর পদক্ষেপ এবং রাজনৈতিক ভাবনা নিয়ে কথা বলেন বক্তারা।
গত মঙ্গলবার রাত ১১টায় রাজধানীর ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
আলোচনায় অংশ নিয়ে কবি ফরহাদ মজহার বলেন, দরিদ্রদের প্রতি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর পক্ষপাত ছিল। তিনি দরিদ্রদের জন্য কম টাকায় ওষুধ তৈরি করতে চেয়েছিলেন। তাঁকে বুঝতে হলে, জানতে হলে তাঁকে নিয়ে পড়তে হবে। তিনি ছিলেন সত্যিকার বুদ্ধিজীবী। দেশে এখন বুদ্ধিজীবীদের অন্তঃসারশূন্য অবস্থা তৈরি হয়েছে। আগামী দিনে বাংলাদেশকে বদলাতে হবে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, দেশকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা ও দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জায়গায় বড় ভূমিকা রেখেছেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি কল্যাণকর রাষ্ট্র ও সমাজের চিন্তা করেছেন। স্বাস্থ্যের বাণিজ্যিকীকরণ এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে গেছে। স্বাস্থ্য খাতে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের প্রয়োজনীতা নিয়ে তিনি গভীরভাবে চিন্তা করেছেন।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর রাজনৈতিক ভাবনা নিয়ে অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের জবাবে হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর ভাবনার সঙ্গে তাঁর নিজের ভাবনারও মিল রয়েছে। তিনি বলেন, দেশে এখন রাজনৈতিক স্থবিরতা রয়েছে। গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি হওয়া জরুরি। গণতান্ত্রিক বাস্তবতার দিকে এগিয়ে যাওয়া জরুরি।
একই প্রসঙ্গে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী বলেন, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী মনে করতেন, তুলনামূলক ভালো নির্বাচনের জন্য গণতান্ত্রিক বন্দোবস্ত লাগবে। তিনি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অন্তবর্তীকালীন বা জাতীয় সরকারের কথা বলেছিলেন। রাজনৈতিক বিভক্তি বিপজ্জনক প্রবণতার দিকে যাচ্ছে, সেটা তিনি পরিষ্কার বুঝতে পেরেছিলেন। তাই অপবাদের ঝুঁকি নিয়েও তিনি তাঁর অবস্থান স্পষ্ট করেছিলেন। তিনি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে পথনির্দেশক হয়ে থাকবেন।
দৈনিক সমকালের পরিকল্পনা সম্পাদক ফারুক ওয়াসিফ বলেন, প্রতিষ্ঠান গড়ার মধ্য দিয়ে মানুষের কাছে যাওয়া, মানুষের চাহিদা অনুযায়ী জ্ঞান অর্জনের জায়গা তৈরি করেছিলেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। মুক্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞতা একজন মানুষকে কতটা উজ্জীবিত করতে পারে, তা তিনি বহন করে দেখিয়ে গেছেন। যে স্বপ্নের জন্য কাজ করেছেন, অঙ্গীকার দিয়ে সেই স্বপ্নকে জীবিত রেখেছেন। অঙ্গীকার অন্যদের মধ্যেও সঞ্চারিত করেছেন। তরুণদের সামনে তিনি উদাহরণ হয়ে রয়েছেন।
ব্র্যাকের পরিচালক (জেন্ডার কর্মসূচি) নবনীতা চৌধুরী বলেন, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী নিজে কোনো মডেলে আটকে থাকেননি। রাজনৈতিক কাঠামোতে ঢুকতে না পারা প্রান্তিক মানুষের কথা ভেবেছেন। তিনি প্রান্তিক মানুষের চিকিৎসাসেবা নিয়ে কাজ করেছেন। নারীদের কাজের সুযোগ সৃষ্টি করেছেন। তিনি ছিলেন একরোখা বীর মুক্তিযোদ্ধা। সাম্য ও মানবিক স্বার্থে স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে নিজ হাতে কাজ করেছেন।
আলোচনা সভাটি সঞ্চালনা করেন রিডিং ক্লাব ট্রাস্টের অনুবাদ ও গবেষণা বিভাগের প্রধান রাশেদ রাহম। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে রিডিং ক্লাব ট্রাস্ট।