প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম বৃহৎ শক্তি। বিদেশে গিয়ে কঠোর পরিশ্রম করে তাঁরা দেশে যে অর্থ পাঠান, তা দেশপ্রেমের বড় উদাহরণ। তাই অভিবাসন খাতে গণমাধ্যমের আরও গুরুত্ব দেওয়া উচিত। আজ রোববার রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে ‘ব্র্যাক মাইগ্রেশন মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক ও প্রকাশক মাহ্ফুজ আনাম। অনুষ্ঠানে অভিবাসন খাতে অবদানের জন্য ১৫ গণমাধ্যমকর্মীর হাতে পুরস্কার তুলে দেন তিনি।
মাহ্ফুজ আনাম বলেন, প্রবাসীরা প্রতিবছর ২২ বিলিয়ন ডলারের মতো দেশে পাঠান। এটি বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম বড় শক্তি। নিজের টাকা খরচ করে বিদেশে গিয়ে কঠোর পরিশ্রম করে তাঁরা দেশে যে টাকা পাঠান, সেটিই দেশপ্রেমের বড় উদাহরণ। ডলার রিজার্ভের এই সংকটময় সময়ে দেশের সবাই তাঁদের দিকে তাকিয়ে আছেন।
অভিবাসীরা শুধু অর্থ পাঠানোর যন্ত্র নয়—মন্তব্য করে মাহ্ফুজ আনাম বলেন, মানবিক দৃষ্টিতে এই খাতকে দেখতে হবে। অভিবাসন খাতে গণমাধ্যমের আরও গুরুত্ব দেওয়া উচিত। এই খাতের সমস্যাগুলোর গভীরে যেতে হবে। কেন বাংলাদেশ থেকে বিদেশে যাওয়ার খরচ নেপাল বা ভারতের চেয়ে এত বেশি? কেন আরও বেশি দক্ষ কর্মী পাঠাতে পারছি না? এই খাতে সরকারের বিনিয়োগ কত? প্রবাসীদের কল্যাণের টাকা কোথায়–কীভাবে খরচ হচ্ছে? কেন সরকার অভিবাসন খাতের সিন্ডিকেট ভাঙতে পারছে না? এসব নিয়ে গণমাধ্যমের গভীরে গিয়ে কাজ করা উচিত।
মাহ্ফুজ আনাম বলেন, ‘সাংবাদিকতার মাধ্যমে এসব বিষয়ে আমরা সরকারকে সহায়তা করতে চাই। বিশেষ করে অভিবাসন খরচ কমাতে পারলে, অদক্ষ কর্মীকে দক্ষ করে বিদেশ পাঠাতে পারলে আরও বেশি প্রবাসী আয় আসবে। পাশাপাশি যাঁরা বিদেশ থেকে ফেরত আসছেন, তাঁদের দক্ষতাকে কাজে লাগানো উচিত।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের গবেষণা ও নীতি অনুবিভাগের প্রধান ও যুগ্ম সচিব আয়েশা হক বলেন, অভিবাসন খাতে গণমাধ্যমের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। মন্ত্রণালয় প্রবাসীদের নিয়ে গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদনগুলো গুরুত্ব দিয়ে দেখে সমাধানের চেষ্টা করে।
অনুষ্ঠানে ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্ বলেন, ‘৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় আমাদের নির্মাণশ্রমিকেরা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রবাসে কাজ করেন—কতজন সেটা বুঝতে পারি? অভিবাসীদের স্বার্থ ও অধিকারের বিষয়গুলোতে নজর দিতে হবে।’
আসিফ সালেহ্ বলেন, ‘কর্মীদের দক্ষ করে বিদেশে পাঠানোর জন্য আমরা কিছু মডেল তৈরির চেষ্টা করছি। সিঙ্গাপুর সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা কম খরচে দক্ষ কর্মীদের পাঠানোর একটা চেষ্টা করছি। পার্বত্য চট্টগ্রামসহ যে জেলাগুলো থেকে মানুষ কম বিদেশ যাচ্ছে, সেই জেলাগুলো থেকে যেন আরও কর্মী বিদেশে যেতে পারে, সেদিকে নজর দিতে হবে।’
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্র্যাকের মাইগ্রেশন ও ইয়ুথ প্ল্যাটফর্মের সহযোগী পরিচালক শরিফুল হাসান। স্বাগত বক্তব্য দেন শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়ন এবং অভিবাসন কর্মসূচির পরিচালক সাফি রহমান খান। এ ছাড়া এবারের বিচারকমণ্ডলীর সদস্য প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মির্জা শাকিলা দিল হাছিন ও অভিবাসনবিশেষজ্ঞ আসিফ মুনীর বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠান শেষে অভিবাসন বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে ডেইলি স্টারের সঙ্গে ব্র্যাকের একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম ও ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্ এতে স্বাক্ষর করেন।
এ বছর জাতীয় সংবাদপত্র বিভাগে দৈনিক সমকালের রাজিব আহাম্মদ প্রথম পুরস্কার পেয়েছেন। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের মো. মাসুম বিল্লাহ দ্বিতীয় এবং দৈনিক বাংলার জেসমিন আকতার তৃতীয় স্থান অধিকার করেছেন। আঞ্চলিক সংবাদপত্র বিভাগে প্রথম হয়েছেন একুশে পত্রিকার শরীফুল ইসলাম, দ্বিতীয় দৈনিক চট্টগ্রাম খবরের ইফতেখায়রুল ইসলাম এবং তৃতীয় হয়েছেন দৈনিক জৈন্তা বার্তার শাকিলা ববি।
টেলিভিশন নিউজ বিভাগে যমুনা টেলিভিশনের আহমেদ রেজা প্রথম স্থান অধিকার করেছেন। যৌথভাবে দ্বিতীয় হয়েছেন ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের তালাশ দলের দুই অনুসন্ধানী সাংবাদিক এনামুল হক ও মো. নাজমুল সাইদ। তৃতীয় হয়েছেন নিউজ ২৪-এর খন্দকার বদরুল আলম।
রেডিও বিভাগে পুরস্কার পেয়েছেন ইরানের জাতীয় সম্প্রচার সংস্থা ও রেডিও তেহরানের এম এম বাদশা। অনলাইন সংবাদপত্র বিভাগে প্রথম পুরস্কার জিতেছেন জাগো নিউজের জাহাঙ্গীর আলম। দ্বিতীয় হয়েছেন ঢাকা পোস্টের আদনান রহমান ও তৃতীয় ঢাকা মেইলের মো. ইমরুল কায়েস। গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুরস্কার পেয়েছে বাংলা টিভি। বিজয়ীরা পুরস্কার হিসেবে একটি ক্রেস্ট, স্বীকৃতির সনদ এবং পুরস্কারের অর্থমূল্যের চেক পেয়েছেন।
অভিবাসন খাতে সাংবাদিকদের অবদানকে স্বীকৃতি দিতে ২০১৫ সালে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক প্রথমবারের মতো মাইগ্রেশন মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড প্রদান শুরু করে। এ বছর অষ্টমবারের মতো এ পুরস্কার দেওয়া হলো।