প্রথম সংসদের প্রথম বৈঠকেই হয়েছিল সাংবিধানিক বিতর্ক

আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বিরোধী দল না থাকলেও সংসদের প্রথম বৈঠকেই সাংবিধানিক ইস্যুতে তুমুল বিতর্ক হয়েছিল। সেই বিতর্ক শুরু হয়েছিল সংসদ সদস্যদের শপথ নেওয়ার আগেই। শপথ নেওয়ার পরও বিতর্ক চলেছে দীর্ঘ সময় ধরে।

জাতীয় সংসদের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয় পুরো সংসদ ভবন এলাকা। গতকাল রাতে

৫০ বছর আগে জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনের প্রথম দিনের বৈঠকেই হয়েছিল প্রাণবন্ত সাংবিধানিক বিতর্ক। প্রথম এই অধিবেশন বসেছিল ১৯৭৩ সালের ৭ এপ্রিল। স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ অনুষ্ঠিত হয়েছিল প্রথম জাতীয় নির্বাচন। সেই নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত হয়েছিল এই সংসদ।

প্রথম এই সংসদের সংসদ নেতা নির্বাচিত হয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। অধিবেশনের প্রথম দিনের বৈঠকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ‘আমরা যে ইতিহাস সৃষ্টি করেছি, সে ইতিহাসে যেন খুঁত না থাকে। দুনিয়ার পার্লামেন্টারি কনভেনশনে যেসব নীতিমালা আছে, সেগুলো আমরা মেনে চলতে চাই।’

দেশের প্রথম এই সংসদে কোনো বিরোধী দল ছিল না। ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৯৩টিতেই জয়ী হয়েছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ। এর বাইরে জাসদ ১টি, বাংলাদেশ জাতীয় লীগ ১টি আসনে এবং ৫টি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয় পেয়েছিলেন।

আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বিরোধী দল না থাকলেও প্রথম বৈঠকেই সাংবিধানিক ইস্যুতে তুমুল বিতর্ক হয়েছিল। সেই বিতর্ক শুরু হয়েছিল সংসদ সদস্যদের শপথ নেওয়ার আগেই। শপথ নেওয়ার পরও বিতর্ক চলেছে দীর্ঘ সময় ধরে।

অবশ্য সংসদের প্রথম অধিবেশন শেরেবাংলা নগরের বর্তমান সংসদ ভবনে বসেনি। তখনো এই সংসদ ভবনের নির্মাণকাজ চলছিল। প্রথম সংসদের অধিবেশন বসেছিল তেজগাঁওয়ের সংসদ ভবনে, এখন যেটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।

শুরুতেই বিতর্ক

প্রথম সংসদ অধিবেশনের প্রথম দিনের বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে জানা যায়, ১৯৭৩ সালের ৭ এপ্রিল সংসদের প্রথম বৈঠকের দিনটি ছিল শনিবার। অধিবেশনের শুরুতে পবিত্র কোরআন ও গীতা পাঠ করা হয়। নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের মধ্যে প্রথম শপথ নেন মুহম্মদুল্লাহ এবং তিনি বসেন স্পিকারের আসনে। এরপর অন্য সংসদ সদস্যদের শপথ নেওয়ার পালা। কিন্তু তখনই শুরু হয় বিতর্ক।

সেই বিতর্কের সূচনা করেন জাতীয় লীগ থেকে নির্বাচিত একমাত্র সংসদ সদস্য (ঢাকা-১৯) আতাউর রহমান খান। তিনি পয়েন্ট অব অর্ডারে ফ্লোর নিয়ে সংসদ সদস্য হওয়ার যোগ্যতার বিধান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

স্পিকারের উদ্দেশে আতাউর রহমান খান বলেছিলেন, ‘শপথ গ্রহণের পূর্বে আমি আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। সংবিধানের ৬৬ নম্বর অনুচ্ছেদ মতে কোনো ব্যক্তি সদস্য নির্বাচিত হবার বা সদস্য থাকবার যোগ্য হবেন না যদি তিনি আইন-দ্বারা পদাধিকারীকে অযোগ্য ঘোষণা করছে না, এমন পদ ব্যতীত প্রজাতন্ত্রের কর্মে কোন লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত থাকেন।

উক্ত অনুচ্ছেদের ৩ নম্বর দফায় বলা হয়েছে যে, এই অনুচ্ছেদের উদ্দেশ্যসাধনকল্পে কোন ব্যক্তি কেবল মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রী হবার কারণে প্রজাতন্ত্রের কর্মে কোন লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত বলে গণ্য হবেন না।’

স্পিকারের উদ্দেশে আতাউর রহমান খান আরও বলেন, ‘এখানে কেবল মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রী বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীকে এখানে উল্লেখ না করায় তাঁকে একটু বেকায়দায় ফেলা হয়েছে বলে মনে হয়। কারণ, সংবিধানের প্রতি জায়গায় প্রধানমন্ত্রীর জন্য স্বতন্ত্রভাবে তাঁর অস্তিত্বের উল্লেখ করা হয়েছে।’

সংবিধানে এই বিষয়টি ইচ্ছাকৃত হয়েছে না বিচ্যুতি হয়েছে, তা পরিষ্কার করার জন্য স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন আতাউর রহমান খান।

তবে সংসদ সদস্যদের শপথ নেওয়ার আগে সাংবিধানিক এই বিষয়ে আলোচনা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন নুরুল হক। নোয়াখালী-৭ আসনের এই সংসদ সদস্য পয়েন্ট অব অর্ডারে কথা বলেন। স্পিকারের উদ্দেশে সংসদ সদস্য নুরুল হক বলেন, ‘মাননীয় সদস্য শপথ গ্রহণের পূর্বে আলোচনা করে চলেছেন। এই রকম অবস্থায় আলোচনায় অংশগ্রহণ করা যায় কি না, সেদিকে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’

কিন্তু আতাউর রহমান খান আবারও ফ্লোর নিয়ে তাঁর বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। এরপর এ বিষয়ে কথা বলতে দাঁড়ান আরেক সংসদ সদস্য তাহের উদ্দিন ঠাকুর। স্পিকারের রুলিং দাবি করে তিনি বলেন, ‘এই সভা পার্লামেন্টের সভা এবং জাতীয় সংসদের সদস্য হিসাবে এই মুহূর্তে আমাদের শপথ গ্রহণ করা কর্তব্য এবং কোনো বৈধতার প্রশ্ন উত্থাপন না করে সংসদ সদস্য হিসাবে কাজ করার সুযোগ দেওয়া দরকার।’

তখন স্পিকার মুহম্মদুল্লাহ বলেন, ‘আমারও মনে হচ্ছে যে শপথ গ্রহণের পূর্বে সংসদ পূর্ণাঙ্গ হচ্ছে না। কাজেই শপথ গ্রহণ আগে অনুষ্ঠিত হোক। তারপর মাননীয় সদস্য জনাব আতাউর রহমান খান সাহেব তাঁর বৈধতার প্রশ্ন লিখিতভাবে দিলে পরে পরবর্তী কোন সময় তার আলোচনা হবে।’

স্পিকারের বক্তব্যের পর সে মুহূর্তে এই বিতর্ক থেমে যায়। তখন সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেন নতুন নির্বাচিতরা।

সংসদ সদস্যদের শপথ নেওয়ার পর ভিন্ন এক বিষয়ে বিতর্ক তোলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম-১ থেকে নির্বাচিত মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা। তিনি বলেন, বৈঠকের শুরুতে শুধু কোরআন ও গীতা পাঠ করা হয়েছে। দেশে শুধু হিন্দু বা মুসলমান নয়—বৌদ্ধ, খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীরাও আছেন। ত্রিপিটক এবং বাইবেল থেকেও পাঠের প্রয়োজন আছে। এই ইস্যুতে আবার সংসদ সদস্য নুরুল হক দাঁড়িয়ে বলেন, ‘জনাব স্পিকার সাহেব, মিস্টার লারমা জৈন ধর্ম সম্বন্ধে কিছুই বলেন নাই।’

এরপর আবারও আগের বিতর্ক অর্থাৎ বৈধতার প্রশ্নটি নিয়ে কথা বলেন আতাউর রহমান খান। তিনি বলেন, ‘জনাব স্পিকার সাহেব, আমার মনে হয়, আমি যে প্রশ্ন প্রথমে উত্থাপন করিয়াছিলাম, সেটা আলোচনা করিতে এখন আর অসুবিধা নাই। কারণ শপথ গ্রহণের পর এখন আমরা পুরাপুরিভাবে সদস্য হইয়াছি।’ জবাবে স্পিকার তাঁকে বিষয়টি লিখিতভাবে দেওয়ার আহ্বান জানান। তখন আরেকজন সদস্য কথা বলতে চাইলে স্পিকার বলেন, ‘একজন করিয়া কথা বলুন। আপনারা সকলে একত্রে কথা বলিতে চেষ্টা করিবেন না।’

তখন তৎকালীন আইন ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী মনোরঞ্জন ধর ফ্লোর নেন। তিনি বলেন, আতাউর রহমান খান ও মানবেন্দ্র লারমার প্রশ্ন নিয়ে পরে আলোচনা করার সুযোগ থাকবে। আইনমন্ত্রী আগে নতুন সংসদের স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার এবং সভাপতিমণ্ডলী নির্বাচনের আহ্বান জানান। এ নিয়েও আতাউর রহমান খানের সঙ্গে আইনমন্ত্রীর বাহাস হয়। পরে পাঁচ সদস্যের সভাপতিমণ্ডলী মনোনয়ন দেওয়া হয়। আর স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার পদে মনোনয়ন জমা দিতে আধা ঘণ্টার জন্য বৈঠক মুলতবি করা হয়।

স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন

বেলা ১১টা ৪ মিনিটে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আছাদুজ্জামান খানের সভাপতিত্বে আবার বৈঠক শুরু হয়। এরপর আবার বিরতি দিয়ে ১১টা ৪২ মিনিটে বৈঠক শুরু হয়। এই পর্বে অনুষ্ঠিত হয় স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন। শিল্পমন্ত্রী সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্পিকার পদে মুহম্মদুল্লাহর নাম প্রস্তাব করেন। ‘হ্যাঁ’ ‘না’ ভোটে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় স্পিকার নির্বাচিত হন মুহম্মদুল্লাহ। এরপর ডেপুটি স্পিকার পদে মোহাম্মদ বয়তুল্লাহর নাম প্রস্তাব করেন তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী এম মনসুর আলী। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মোহাম্মদ বয়তুল্লাহ ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হন। এই নির্বাচন শেষ হলে বৈঠক আবারও মুলতবি করা হয়।

স্পিকার, ডেপুটি স্পিকারকে বঙ্গবন্ধুর অভিনন্দন

দুপুর সাড়ে ১২টায় স্পিকার মুহম্মদুল্লাহর সভাপতিত্ব আবার বৈঠক শুরু হয়। এই পর্বে নতুন নির্বাচিত স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারকে অভিনন্দন জানিয়ে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে স্পিকারের উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘জনাব স্পিকার সাহেব, আপনাকে এবং জনাব বয়তুল্লাহকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত করা হয়েছে। আমি আপনাকে এবং ডেপুটি স্পিকার সাহেবকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। আপনারা দুজনই দেশের জন্য যথেষ্ট ত্যাগ স্বীকার করেছেন। আপনাদের ত্যাগের কথা জনসাধারণ জানে। আমি নতুন করে সে কথা আলোচনা করতে চাই না।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্পিকারের উদ্দেশে আরও বলেন, ‘যখন শাসনতন্ত্র তৈরি করা হয়, তখন আপনি স্পিকার ছিলেন এবং জনাব বয়তুল্লাহ সাহেব ডেপুটি স্পিকার ছিলেন। আপনারা সুষ্ঠুভাবে গণপরিষদের কার্য পরিচালনা করেছেন। আমাদের দেশের কাছে একটা সংবিধান দিতে পেরেছি, সে জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ না জানিয়ে পারছি না।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তাঁর বক্তব্যে স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারকে সহযোগিতার অঙ্গীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আপনার কর্তব্যপালনে সংসদের সদস্যবৃন্দ সব সময় আপনার সঙ্গে সহযোগিতা করবেন। আমি আশা করব, যে ট্র্যাডিশন পার্লামেন্টারি সিস্টেমে আছে, আপনি সেটার প্রতি লক্ষ রেখে নিরপেক্ষভাবে আপনার কার্য পরিচালনা করবেন। আমাদের কাছ থেকে আপনি সাহায্য ও সহযোগিতা পাবেন।’

সংসদের মর্যাদা রক্ষার প্রশ্নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বলেন, ‘এই সংসদের মর্যাদা যাতে রক্ষা পায়, সেদিকে আপনি খেয়াল রাখবেন, কারণ আমরা যে ইতিহাস সৃষ্টি করেছি, সে ইতিহাসে যেন খুঁত না থাকে। দুনিয়ার পার্লামেন্টারি কনভেনশনে যেসব নীতিমালা আছে, সেগুলো আমরা মেনে চলতে চাই। সঙ্গে সঙ্গে যেন এমন একটি পার্লামেন্টারি প্রসিডিউর ফলো করতে পারি, যাতে দুনিয়া আমাদের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।’

সংসদে আওয়ামী লীগের বাইরে অন্য দলের অবস্থান সেভাবে ছিল না—সে প্রসঙ্গও আসে বঙ্গবন্ধুর বক্তব্যে। স্পিকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনাকে এক দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। দুঃখের বিষয়, অন্য কোনো দল অ্যাসেম্বলিতে আসতে পারেনি। সে জন্য আমি দুঃখিত। কিন্তু জোর করে জনসাধারণকে বলতে পারি না, ভোট দাও। অন্য দল ভোট না পেলে আমার কিছু বলার নেই। আপনি প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত স্পিকার।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বলেন, ‘এখানে কোনো দল বা মতের নয়, এখানে এই দেখব যে, প্রত্যেক সদস্য যেন যাঁর যে অধিকার আছে, সে অধিকার ব্যবহার করতে পারেন। সেদিকে আপনিও খেয়াল রাখবেন বলে আমি আশা পোষণ করি। এ সম্পর্কে আপনি আমাদের পূর্ণ সহযোগিতা পাবেন। পার্লামেন্টারি ট্র্যাডিশন পুরোপুরিভাবে ফলো করতে আমরা চেষ্টা করব। আমি আপনার সহকর্মী ডেপুটি স্পিকার জনাব বয়তুল্লাহ সাহেবকেও অভিনন্দন জানিয়ে আমার বক্তব্য শেষ করছি। ধন্যবাদ।’

আবারও বিতর্ক

প্রথম বৈঠকের শেষ পর্যায়ে আতাউর রহমান খান বিতর্ক তোলেন অধিবেশনের প্রথম দিনে রাষ্ট্রপতির ভাষণ না দেওয়ার বিষয়ে। তিনি বলেন, সংবিধানের ৭৩ অনুচ্ছেদে বলা আছে, প্রত্যেক সাধারণ নির্বাচনের পর প্রথম অধিবেশনের সূচনায় এবং প্রত্যেক বছর প্রথম অধিবেশনের সূচনায় রাষ্ট্রপতি সংসদে ভাষণ দেবেন। কিন্তু কার্যসূচিতে সে রকম কিছু দেখা যাচ্ছে না।

এই বিষয় নিয়ে সংসদে দীর্ঘ বিতর্ক হয়। আছাদুজ্জামান খান (ময়মনসিংহ-২৬), আইনমন্ত্রী মনোরঞ্জন ধর, নুরুল ইছলাম চৌধুরী (চট্টগ্রাম-১১), স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মালেক উকিল, আমীরুল ইসলাম (কুষ্টিয়া-৩), তাহের উদ্দিন ঠাকুর (কুমিল্লা-২), পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন, কোরবান আলী (ঢাকা-৬), যোগাযোগমন্ত্রী এম মনসুর আলী, অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, আমানউল্লাহ খান (বগুড়া-৭) প্রমুখ এই বিতর্কে অংশ নেন। তবে সেই বিতর্কের নিষ্পত্তি না করেই স্পিকার পরবর্তী কার্যক্রমে চলে যান।

এ ছাড়া প্রথম বৈঠকে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে নির্বাচিত গণপরিষদ সদস্য সওগাতুল আলম সগীর এবং আবদুর রবের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব নেয় জাতীয় সংসদ। এই শোক প্রস্তাবের ওপর বক্তব্য দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

বৈঠকের শেষ দিকে কয়েকটি সংসদীয় কমিটি গঠন করা হয়। বেলা সোয়া দুইটায় শেষ হয় প্রথম জাতীয় সংসদের প্রথম বৈঠক।

স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৩ সালে নির্বাচনের মাধ্যমে প্রথম সংসদ গঠনের আগে ছিল গণপরিষদ। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিজয় লাভের পর গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন বসেছিল ১৯৭২ সালের ১০ এপ্রিল। ১৯৭০ সালের ডিসেম্বর ও ১৯৭১ সালের জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে নির্বাচিত পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের ১৬৯ জন এবং পূর্ব পাকিস্তান আইন পরিষদের ৩০০ জন—মোট ৪৬৯ জন সদস্যের সমন্বয়ে গণপরিষদ গঠিত হয়েছিল।

এই গণপরিষদে দেশের সংবিধান প্রণয়ন করা হয়েছিল। গণপরিষদ ১৯৭১ থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের অস্থায়ী সংসদ হিসেবে ছিল।