‘বাংলাদেশের ভাষা পরিস্থিতি এবং বাংলা ভাষার উন্নতি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক। ঢাকা, ২৮ ফেব্রুয়ারি
‘বাংলাদেশের ভাষা পরিস্থিতি এবং বাংলা ভাষার উন্নতি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক। ঢাকা, ২৮ ফেব্রুয়ারি

অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক

এ অবস্থা চললে বাংলা ভাষা শুধু কিতাবেই থাকবে, বাস্তবে থাকবে না

অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেছেন, বর্তমানে রাষ্ট্রভাষা বাংলা যে অবস্থানে আছে তাতে করে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে এ ভাষা শুধু কিতাবেই থাকবে, বাস্তবে থাকবে না। বাংলা ভাষা রক্ষায় উচ্চ আদালত, উচ্চ শিক্ষাসহ সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলনে রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকা জরুরি।

বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) মুনীর চৌধুরী মিলনায়তনে রাষ্ট্রভাষা বাংলা রক্ষা কমিটি আয়োজিত ‘বাংলাদেশের ভাষা পরিস্থিতি এবং বাংলা ভাষার উন্নতি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত এই অধ্যাপক বলেন, ইংরেজি ভাষা নিয়ে কোনো বিরোধিতা নেই। তবে দেশে ইংরেজি ভাষার প্রাধান্য বাড়ছে। বাংলা একাডেমি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা ভাষার উন্নয়নে তেমন কিছু করেনি।

সভায় বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে শহীদ রফিকের ছোট ভাই ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. খোরশেদ আলম, রফিকের ভাতিজা আবদুর রউফ এবং ভাষা শহীদ বরকতের ভাতিজা আইন উদ্দিন বরকত বক্তব্য দেন। তাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ভাষার জন্য তাঁদের স্বজনেরা রক্ত দিলেন, শহীদ হলেন অথচ এখনো রাষ্ট্রভাষা বাংলা রক্ষা করার জন্য কমিটি করতে হয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাস এলে শহীদ পরিবারের সদস্যদের খোঁজ খবর নেওয়া হলেও পরে আবার সবাই ভুলে যান।

রাষ্ট্রভাষা বাংলা রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ হারুন-অর-রশীদ সভায় সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি জানান, ২০১৫ সালে এ কমিটি গঠিত হয়েছে। কমিটির পক্ষ থেকে একুশে ফেব্রুয়ারিকে রাষ্ট্র ভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা, উচ্চ আদালতের রায় বাংলায় দেওয়া, বাংলা উন্নয়ন বোর্ড গঠনসহ বিভিন্ন দাবি জানানো হয়েছে।

আলোচনায় বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক সাবেক ছাত্রনেতা নাজমুল হক প্রধান বলেন, বাংলা ভাষাটা রাষ্ট্র দরবারে গৃহীত হচ্ছে না। জাপান বা কোরিয়ায় কেউ গেলে তাকে সেই দেশের ভাষা শিখে তারপর যেতে হচ্ছে। অথচ বাংলাদেশে উচ্চতর শিক্ষা, মেডিকেল বা ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে কোনো বাংলা বই পর্যন্ত পাওয়া যায় না।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শওকত হোসেন বলেন, বাংলা ও ইংরেজি ভাষার মিশেলে ক্লাস নিতে হচ্ছে। বেসরকারি অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে বলতে গেলে বাংলা প্রায় নিষিদ্ধ ভাষা।

আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে দৈনিক সমকালের সম্পাদকমণ্ডলীর উপদেষ্টা আবু সাঈদ খান, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবু ইয়াহিয়া দুলাল এবং আশি ও নব্বই দশকের সাবেক ছাত্রনেতা, রাষ্ট্রভাষা বাংলা রক্ষা কমিটির সদস্যরা কথা বলেন।