নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে যেমন আর্থিক খাতে গুরুত্ব দিতে হবে তেমনি সংস্কার প্রয়োজন প্রশাসন, পুলিশ, আইন প্রয়োগের ব্যবস্থাপনায়ও। সম্প্রীতির বাংলাদেশ তৈরি করতে হলে মুছে দিতে হবে সাদা- কালো ভেদাভেদের রেখা।
আদর্শ প্রকাশনীর পক্ষ থেকে আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা উঠে আসে। শনিবার বিকেলে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
‘বাংলাদেশের গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী অর্থনীতির রূপান্তর’ নিয়ে আলোচনা করেন লেখক জিয়া হাসান। তিনি বলেন, এই আন্দোলন সফল হওয়ার একমাত্র কারণ শেখ হাসিনার বানানো বিভাজনের রেখা অতিক্রম করেছে ছাত্র-জনতা। শেখ হাসিনার পতন হওয়ার কথা ছিল, আর্থিক সংকটের জন্য। তিনি সেই অবস্থাই তৈরি করেছেন দেশে।
জিয়া হাসানের বক্তব্যে উঠে আসে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন খাত ধরে ধরে খরচ কমানো, আইন ব্যবস্থার উন্নতি, দেশের মাঝারি মাপের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বড় পরিসরে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শের কথা। উঠে আসে মুদ্রাস্ফীতির আশঙ্কার কথাও। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে লুটপাটের জন্য খেলাপি ঋণের পরিমাণ ও উন্নয়নের প্রোপাগান্ডা তুলে ধরেন তিনি।
‘বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভবিষ্যৎ’ নিয়ে লেখক ফাহাম আবদুস সালাম ষাটের দশকে বাঙালি জাতীয়তাবাদের উদ্ভব প্রসঙ্গে কথা বলেন। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ তৈরি ও সম্প্রীতির সম্পর্কের সূত্রের উদাহরণ হিসেবে এই ভূখণ্ডে শত শত বছর ধরে হিন্দু- মুসলমানের পাশাপাশি বসবাসের ইতিহাস তুলে ধরেন। এ সময় ভারতীয় গবেষক লেখক দীপেশ চক্রবর্তীর উদাহরণ দেন তিনি।
লেখক ও গবেষক ফয়েজ আহমদ তৈয়ব বলেন, নতুন বাংলাদেশ করতে চাইলে চিন্তার সততা অক্ষুণ্ন রাখতে হবে। সাদা ও কালো এই ভাগে ভাগ করার রাজনীতি থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, টেকসই উন্নয়নকে স্থায়ী করার প্রক্রিয়া নিয়ে ভাবতে হবে। তরুণদের জনবান্ধব রাজনীতিতে আগ্রহী করার উদ্যোগ নিতে হবে।
বাসসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক লেখক মাহবুব মোর্শেদ বলেন, ‘স্বৈরাচার সরকার উৎখাতের মধ্যে দিয়ে বিজয়ের সূচনা হয়েছে। বিজয়ের প্রক্রিয়ায় আছি আমরা। সমাজের মধ্যে যে মাফিয়া বীজ আছে তা উৎপাটন করতে হবে।’
লেখক জাহিদুর রহমান বলেন, ‘বন্যায় যেভাবে সমর্থন এসেছে তাতে বোঝা যায় আওয়ামী লীগের সময় আমরা আর আমাদের দেশটাকে নিজের ভাবছিলাম না। শেখ হাসিনার পতন ও পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে আমরা আবার এই দেশটাকে নিজের মনে করছি। ক্রমশ নাগরিক হয়ে উঠছি আমরা।’
আলোচনায় আরও বক্তব্য দেন আদর্শ প্রকাশনীর প্রকাশক মাহবুবুর রহমান, সাংবাদিক সালাউদ্দিন শুভ্র, কবি ও সাংবাদিক এহসান মাহমুদ।
২০২৩ সালের অমর একুশে বইমেলার আগে বাংলা একাডেমি ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, জিয়া হাসান ও ফাহাম আব্দুস সালামের বই নিয়ে আপত্তি তোলে। প্রতিষ্ঠানটি এই ৩ জন লেখকের আপত্তিকৃত ৩টি বই মেলায় বিক্রির নিষেধাজ্ঞা দেয় এবং বইটির প্রকাশক আদর্শ প্রকাশনীর বইমেলার স্টল বরাদ্দ বাতিল করে।