হেনরি কিসিঞ্জার
হেনরি কিসিঞ্জার

১৯৭১ সালে আর্চার ব্লাডকে কেন ঢাকা থেকে সরিয়ে নেন কিসিঞ্জার

মার্কিন কূটনীতিক আর্চার ব্লাড ১৯৭১ সালে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের কনসাল জেনারেল ছিলেন। বাংলাদেশে পাকিস্তানি নৃশংসতার বিবরণ দিয়ে তিনি ওয়াশিংটনে কূটনীতিক বার্তা (মেমো) পাঠিয়েছিলেন।

আর্চার ব্লাড কূটনীতিক বার্তায় বলেছিলেন, পাকিস্তান ভিটেমাটি ছাড়া করে, গুলি করে পদ্ধতিগতভাবে বাংলাদেশিদের নির্মূল করছে।

এক মাস পর আর্চার ব্লাড ওয়াশিংটনে আরেকটি টেলিগ্রাম পাঠান। এতে পূর্ব পাকিস্তানে সহিংস দমন–পীড়নের নিন্দা জানানো বা সহিংস দমন–পীড়ন নিয়ন্ত্রণ চেষ্টায় অস্বীকৃতির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নৈতিক দেউলিয়াত্ব প্রদর্শনের অভিযোগ আনেন তিনি।

টেলিগ্রামে আর্চার ব্লাড বলেন, ‘গণতন্ত্র দমনের বিষয়ে আমাদের সরকার নিন্দা জানাতে ব্যর্থ হয়েছে। আমাদের সরকার নৃশংসতার নিন্দা জানাতে ব্যর্থ হয়েছে।’

পাকিস্তান নিয়ে এমন মেমো পাঠানোর অল্প সময়ের মাথায় আর্চার ব্লাডকে ঢাকা থেকে ওয়াশিংটনে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। তাঁকে ওয়াশিংটনে অন্য একটি কূটনৈতিক পদে দায়িত্ব দেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ও তাঁর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জার।

কিসিঞ্জারের মৃত্যুর পর তাঁকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রগতিশীল সংবাদ ওয়েবসাইট হাফপোস্টের এক দীর্ঘ প্রতিবেদনে অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি এই ঘটনা উল্লেখ করা হয়।

গতকাল বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের কানেটিকাট অঙ্গরাজ্যে নিজ বাড়িতে কিসিঞ্জার মারা যান। তাঁর বয়স হয়েছিল ১০০ বছর।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ও জেরাল্ড ফোর্ডের প্রশাসনে কাজ করেছেন কিসিঞ্জার। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন।

১৯৭১ সালে নিক্সনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ছিলেন কিসিঞ্জার। হাফপোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, কিসিঞ্জার পাকিস্তানের কাছে অবৈধ অস্ত্র বিক্রির নির্দেশ দিয়েছিলেন। ১৯৭১ সালে বাঙালির বিরুদ্ধে নৃশংস দমন–পীড়নে এই অস্ত্র ব্যবহার করেছিল পাকিস্তান।

১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনী পরিচালিত হত্যাযজ্ঞকে ব্যাপকভাবে উপেক্ষা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। তখন নিক্সন-কিসিঞ্জার সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে পশ্চিম পাকিস্তানকে ওয়াশিংটনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হিসেবে দেখছিলেন।

নিক্সন প্রশাসন চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্ক চালুর ‘দ্বার’ হিসেবে দেখছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানকে। এই দরজা খোলা রাখার প্রয়াসে তৎকালীন নিক্সন-কিসিঞ্জার প্রশাসন বাঙালি নির্মূলে পশ্চিম পাকিস্তানের নৃশংসতার নিন্দা জানাতে অস্বীকার করে। এমনকি তারা পশ্চিম পাকিস্তানে সম্ভাব্য অবৈধ অস্ত্রের চালান অনুমোদন দেয়।

ভারতের সহায়তায় একপর্যায়ে পাকিস্তানি বাহিনীকে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করে বাঙালি। সৃষ্টি হয় স্বাধীন বাংলাদেশ। তবে তার আগে পাকিস্তানি বাহিনী ও তার দোসরেরা ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করে। প্রায় চার লাখ নারী ধর্ষণের শিকার হয়। লাখ লাখ মানুষ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। কিসিঞ্জারের কাছে এসব বিষয়ের গুরুত্ব খুব কমই ছিল।

হাফপোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বে লাখ লাখ মানুষের মৃত্যুতে কিসিঞ্জারের ভূমিকা ছিল। কিন্তু তিনি তাঁর সিদ্ধান্তের জন্য কখনো অনুশোচনা প্রকাশ করেননি।