সিরাজগঞ্জে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের সেই শিক্ষক তদন্ত কমিটির কাছে স্বীকার করেছেন যে তিনিই শিক্ষার্থীকে গুলি করেছেন। তবে তা অনিচ্ছাকৃত বলে দাবি করেছেন তিনি।
তদন্ত কমিটি সূত্রে বিষয়টি জানা গেছে।
ছাত্রকে গুলি করার ঘটনায় গতকাল সোমবার স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক বায়জীদ খুরশীদকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়। কমিটির সদস্যরা আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মেডিকেল কলেজটিতে গিয়ে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেন। তাঁরা থানায় গিয়ে রায়হান শরীফ নামের ওই শিক্ষকের সঙ্গেও কথা বলেন।
তদন্ত কমিটি সূত্রে জানা যায়, শিক্ষক রায়হান জানিয়েছেন যে তাঁর কাছে দুটি আগ্নেয়াস্ত্র ছিল, দুটোই পিস্তল। সে দুটির লাইসেন্স নেই। বিভিন্ন সময় আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শনের বিষয়টি তিনি স্বীকার করেছেন। শিক্ষার্থীদের রাতে ফোন করার বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষক রায়হান তদন্ত কমিটিকে বলেছেন, এটা তিনি করতেন শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় আরও মনোযোগী করার জন্য।
তদন্ত কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক মহিউদ্দিন মাতুব্বর এবং স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন।
কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। কমিটি সূত্র জানিয়েছে, তারা তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার চেষ্টা করবে। তবে তার আগেই অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।
সিরাজগঞ্জ সদরের শিয়ালকোল এলাকায় অবস্থিত শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজে শিক্ষক রায়হানের বিরুদ্ধে আরাফাত আমিন নামের এক শিক্ষার্থীকে শ্রেণিকক্ষেই গুলি করার অভিযোগ উঠে গতকাল।
এ ঘটনায় রায়হানকে আটক করা হয়। তাঁর কাছ থেকে সেভেন পয়েন্ট ফাইভ সিক্স বোরের ২টি বিদেশি পিস্তল, ৮১টি গুলি, ৪টি ম্যাগাজিন ও ১২টি বিদেশি চাকু উদ্ধার করা হয়েছে। পরে আহত শিক্ষার্থী আরাফাতের বাবা আবদুল্লাহ আল আমিনের করা মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
এদিকে তদন্তকারী দলের সদস্যরা আজ গুলিবিদ্ধ শিক্ষার্থী ছাড়া তাঁর সহপাঠী, সাধারণ শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অধ্যক্ষের সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলে সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। তাঁরা যখন সাক্ষ্য গ্রহণ করছিলেন, তখন সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে বিক্ষোভ করছিলেন। তাঁদের দাবি, অভিযুক্ত শিক্ষকের চিকিৎসক সনদ বাতিল করতে হবে।
শিক্ষার্থীরা এই দাবিতে কলেজের সামনের সিরাজগঞ্জ-নলকা আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করেন। বেলা সোয়া ১১টা থেকে দুপুর সোয়া ১২টা পর্যন্ত প্রায় ঘণ্টাব্যাপী চলা এই বিক্ষোভে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। দুপাশে তৈরি হয় দীর্ঘ যানজট।
শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ আমিরুল হোসেন চৌধুরী এ সময় দাবি আদায়ের আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা দুপুর সোয়া বারোটার দিকে অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন।
রায়হান কমিউনিটি মেডিসিনের শিক্ষক। এক বছরের বেশি সময় আগে তিনি এই কলেজে যোগ দেন। তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ৫২তম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। সেখানকার সূত্রে জানা গেছে, তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সহসভাপতি ছিলেন।
শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ আমিরুল হোসেন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, রায়হানকে চাকরিচ্যুত করার জন্য বিধি মোতাবেক সুপারিশ করা হবে।
তদন্ত কমিটি সূত্র জানিয়েছে, আহত শিক্ষার্থীর আঘাত তেমন গুরুতর নয়। গুলিটি লেগেছে ওই শিক্ষার্থীর প্যান্টের পকেটের কাছে। সেখানে তাঁর মুঠোফোন ছিল। গুলিটি আগে মুঠোফোনে লাগে, সেটি ভেদ করে আঘাত লাগে।