অর্থনীতিবিদ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র জ্বালানি খাতের সাদা হাতি। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের নানা দুর্নীতির প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি এ কথা বলেন।
সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজের (সিজিএস) উদ্যোগে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এলাকার একটি হোটেলে আয়োজিত ‘গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের জন্য সংলাপ’ শিরোনামে আয়োজিত এক সংলাপে তিনি এ কথা বলেন। আজ শনিবার সকালে অনুষ্ঠিত এই সংলাপে মইনুল ইসলাম ছাড়াও আলোচক হিসেবে ছিলেন সংসদবিষয়ক গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক প্রফেসর নিজাম উদ্দিন আহমদ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান। এ ছাড়া শিক্ষক-শিক্ষার্থী, আইনজীবী, রাজনীতিক, শিল্পোদ্যোক্তা, নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যমকর্মী, অধিকারকর্মী, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, নারী সংগঠক, স্বেচ্ছাসেবকসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের পেশাজীবীরা মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে সংস্কারের বিষয়ে তাঁদের মতামত জানান।
সংলাপে অধ্যাপক মইনুল ইসলাম বলেন, বিগত সরকার দেশকে লুটপাটের আখড়ায় পরিণত করেছে, যার কারণে রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি ঢুকে গেছে। ভারতের আদানি গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি দেশের বড় অর্থনৈতিক ক্ষতি সাধন করেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সংবিধান সংস্কার প্রসঙ্গে অধ্যাপক মইনুল বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য স্থাপন করা জরুরি। এ ছাড়া রাষ্ট্রপতি নির্বাচনও সরাসরি ভোটের মাধ্যমে হওয়া কাম্য। এই প্রসঙ্গে তিনি ফরাসি সংবিধানের উদাহরণ দেন। তিনি সংবিধানকে দ্বিকক্ষীয় কাঠামোতে রূপান্তর করার পরামর্শ দেন। সংসদের উচ্চকক্ষে সংখ্যালঘু প্রতিনিধি রাখার প্রস্তাবও দেন তিনি।
অধ্যাপক নিজাম উদ্দিন আহমদ সংবিধান পরিবর্তন প্রসঙ্গে বলেন, সংবিধানে মৌলিক অধিকার রক্ষার বিষয়টি থাকতে হবে। নির্বাচনের পর যে দল ক্ষমতায় আসে, তাদের মধ্যে পরিবর্তন করার প্রবণতা থাকে। ফলে তিনি মনে করেন, নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার হতে হবে। নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার হলে সব ব্যবস্থার সংস্কার সম্ভব। তিনি সংবিধান সংস্কারের কাজ সফল করার জন্য সবার ঐক্যবদ্ধ হওয়া জরুরি বলে করেন।
আলোচনায় জিল্লুর রহমান বলেন, ‘ফলাফল তাৎক্ষণিকভাবে দৃশ্যমান না হলেও একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। শেষ পর্যন্ত সরকার ব্যর্থ হতে পারে, তবে এটি সামগ্রিকভাবে জাতির ব্যর্থতা নয়। জনগণকে গণতান্ত্রিক দেশ গঠনে আশাবাদী ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকতে হবে।’
অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী শিক্ষার মান উন্নয়ন, গবেষণার কাজে শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করা, কারিগরি শিক্ষার প্রসার বাড়ানোর কথা বলেন। এ ছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের প্রতিনিধিত্ব করে একজন দর্শক নিজের মতামত দেন। তিনি তিন পার্বত্য জেলার মানবাধিকার লঙ্ঘনে কোনো তদন্ত না হওয়ার জন্য জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে দায়ী করেন।