জ্বালানি খাত সংস্কার নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে সংলাপের আয়োজন করে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। ঢাকা, ০৫ ডিসেম্বর
জ্বালানি খাত সংস্কার নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে সংলাপের আয়োজন করে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। ঢাকা, ০৫ ডিসেম্বর

জ্বালানি খাতে বিগত সরকারের লুণ্ঠনমূলক খরচের হিসাব করতে হবে: ক্যাব

নির্বাচনী ইশতেহারে জ্বালানি রূপান্তর যুক্ত করার দাবি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে শিগগিরই সভা করতে যাচ্ছে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। তারা বলেছে, গত দেড় দশকে একটি দল লুণ্ঠন করেছে। আর রাষ্ট্র তাদের জন্য লুণ্ঠনের ক্ষেত্র তৈরি করে দিয়েছে। অবিলম্বে জ্বালানি খাতের লুণ্ঠনমূলক খরচের হিসাব করতে হবে।

জ্বালানি খাত সংস্কার নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে সংলাপে এসব কথা বলেছে ক্যাব। রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের একটি মিলনায়তনে আজ বৃহস্পতিবার এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।

সংলাপে বক্তারা বলেন, আগের সরকার ছিল লুণ্ঠনের অধিনায়ক। তাদের বিদায় একটি সুযোগ তৈরি করেছে। তাই অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নিয়েই বলা উচিত ছিল, জ্বালানি খাতে সরকার কোনো মুনাফা করবে না। তারা এটি করেনি। বরং বিশেষ বিধান আইন বাতিল করার প্রজ্ঞাপনে আগের কাজের বৈধতা দিয়েছে। জ্বালানিকে সেবা খাত ঘোষণা দিতে হবে।

ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম বলেন, জ্বালানি খাত শুধু দেশ থেকে নয়, বিদেশ থেকেও নিয়ন্ত্রিত হয়। বর্তমান সরকারের সংস্কারের বিবেচনা দেশের ভেতর থেকে আসছে না, জনগণের স্বার্থ থেকে আসছে না। আগের সরকার যে বিবেচনায় চালিত হয়েছে; এখনো তাই হচ্ছে। গত ১৫ বছরে যারা অলিগার্ক (ধনী গোষ্ঠী) তৈরি করেছে, তারাই বিভিন্ন দায়িত্ব পাচ্ছে এখন। এটা নিয়ে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।

ক্যাবের জ্বালানি রূপান্তর নীতিমালা নিয়ে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান। তিনি বলেন, আমলাতন্ত্র ও একটি গোষ্ঠী মিলে অলিগার্কদের স্বার্থ রক্ষা করেছে। ফ্যাসিস্ট সরকারের দুর্নীতির বড় একটা জায়গা ছিল জ্বালানি খাত। জ্বালানি খাতের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করা হয়েছে। তাই এ খাতের সংস্কার খুবই জরুরি। আর যেকোনো চুক্তি স্বাক্ষরের ক্ষেত্রে জনস্বার্থ বিবেচনা করতে হবে।

জ্বালানি খাতের রূপান্তরে ২১ দফা দাবি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছে ক্যাব। তবে আজ বর্তমান সরকারের কাছে জনগণের পক্ষ থেকে কিছু দাবি তুলে ধরেন তাঁরা। এতে বলা হয়, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বিদ্যুৎ ও জ্বালানির আমদানি, উৎপাদন, সঞ্চালন, পরিবহন ও বিতরণে প্রকৃত ব্যয় এবং লুণ্ঠনমূলক ব্যয়ের পরিমাণ অবিলম্বে নির্ধারণ করতে হবে। জ্বালানি সুবিচার নিশ্চিত করার মাধ্যমে জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা সংরক্ষণের লক্ষ্যে লুণ্ঠনমুক্ত ব্যয়ে ভোক্তার বিদ্যুৎ ও জ্বালানিসেবা পাওয়ার অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।

ক্যাবের দাবিগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন (রহিতকরণ) অধ্যাদেশ ২০২৪–এর ২(২) (ক) ও (খ) ধারা বাতিল করতে হবে। কস্ট প্লাস নয়, খরচের ভিত্তিতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত পরিচালনা ও উন্নয়ন নীতির ভিত্তিতে সরকারি সেবা খাত হিসেবে এ খাতের সংস্কার করা লাগবে। পেট্রোলিয়াম পণ্যসমূহসহ সব জ্বালানি পণ্যের দাম বিইআরসিতে শুনানির মাধ্যমে নির্ধারণ করতে হবে। মূল্য নির্ধারণে ২০১২ সাল থেকে আটকে থাকা প্রবিধানমালা দ্রুত অনুমোদন করতে হবে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৮ ও বিইআরসি আইন ২০০৩–এর আওতায় জ্বালানি অপরাধীদের বিচার করার দাবি জানিয়েছে ক্যাব।

ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়া সবাইকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। সংলাপ সঞ্চালনা করেন সাংবাদিক শুভ কিবরিয়া। এতে বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকেরা বক্তব্য দেন।