ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট দুপুরে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে ৬ আগস্ট পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন থানা থেকে ৫ হাজার ৮২৯টি আগ্নেয়াস্ত্র লুট হয়েছে বা খোয়া গেছে। এর পর থেকে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের ৩ হাজার ৭৬৩টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। বাকি ২ হাজার ৬৬টি অস্ত্র উদ্ধার করা যায়নি। এমন পরিস্থিতিতে বুধবার (আজ) থেকে অস্ত্র উদ্ধারে যৌথ বাহিনী অভিযান শুরু করতে যাচ্ছে।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, লুট হওয়া বা খোয়া যাওয়া অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের রাইফেল, পিস্তল, শটগান, সাউন্ড গ্রেনেড ও গ্যাসগান। ৫ ও ৬ আগস্ট বিভিন্ন থানা থেকে ৬ লাখ ৬ হাজার ৭৪২টি গুলি খোয়া যায়। এর মধ্যে ২ লাখ ৮৬ হাজার ৮২টি গুলি উদ্ধার হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ শাখার সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) ইনামুল হক গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, লুট হওয়া সব অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারে শুরু হওয়া যৌথ অভিযানে পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, বিজিবি, আনসার ও সশস্ত্র বাহিনীর (সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী) সদস্যরা অংশ নিচ্ছেন। যৌথ অভিযানে কারও কাছে লুট হওয়া অস্ত্র পাওয়া গেলে তাঁর বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা করা হবে।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, সারা দেশে থানা আছে ৬৬৪টি। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ৫ আগস্ট বিকেল থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন থানা, ফাঁড়ি, পুলিশ বক্সসহ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট ও স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। পুড়িয়ে দেওয়া হয় থানা-পুলিশের কাজে ব্যবহৃত গাড়ি। এসব জায়গা থেকে আগ্নেয়াস্ত্রসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম ও নথি লুট হয়। কার্যত ৫ আগস্ট দুপুরের পর সারা দেশে পুলিশি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ সদস্যরা থানায় আসতে সাহস পাননি। একপর্যায়ে পুলিশের বিভিন্ন স্থাপনা পাহারা দেওয়ার জন্য আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়। ১৩ আগস্ট ঢাকাসহ সারা দেশে থানার কার্যক্রম আবার শুরু হয়।
পুলিশের বিশেষ শাখার ফায়ার আর্মস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের ২০২৩ সালের ২০ আগস্ট পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী, সারা দেশে ৫০ হাজার ৩১০টি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স রয়েছে। গত ২৫ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এসব বৈধ অস্ত্র ৩ সেপ্টেম্বরের (গতকাল) মধ্যে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। এর মধ্যে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত কত বৈধ অস্ত্র জমা পড়েছে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কোনো তথ্য জানাতে পারেনি পুলিশ সদর দপ্তরের সংশ্লিষ্ট বিভাগ।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত বেসামরিক জনগণকে দেওয়া আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করা হয়েছে। ওই সময় পর্যন্ত যাঁদের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে, তাঁদের ৩ সেপ্টেম্বরের (গতকাল) মধ্যে গোলাবারুদসহ আগ্নেয়াস্ত্র সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দেওয়ার সময় বেঁধে দেওয়া হয়। এই সময়ের মধ্যে যাঁরা অস্ত্র জমা দেননি, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তিন মেয়াদের শাসনামলে বিভিন্ন সময় বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহারের ঘটনা ঘটে। রাজনৈতিক কর্মসূচি ও প্রতিপক্ষকে ভয় দেখাতে আওয়ামী লীগের নেতা ও সমর্থকেরা বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শন করেন। কখনো কখনো অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার করে পরে সেটিকে বৈধ অস্ত্র বলে দাবির ঘটনাও ঘটেছে। এসব ঘটনায় বেশির ভাগ সময় জেলা প্রশাসন ও পুলিশকে নিশ্চুপ ভূমিকায় থাকতে দেখা গেছে। সর্বশেষ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে ৪ আগস্ট ঢাকা, ফেনীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষার্থীদের মিছিল-অবস্থান লক্ষ্য করে আওয়ামী লীগ ও এর বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের কিছু নেতা-কর্মীকে গুলি করতে দেখা যায়।
অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, সব অবৈধ ও বৈধ অস্ত্র উদ্ধারে বুধবার (আজ) রাত ১২টা থেকে যৌথ বাহিনীর অভিযান শুরু হবে।