দেশে সাদা বাঘ এখন সাতটি

গত এপ্রিল ও জুলাইয়ে মিরপুর জাতীয় ও চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় দুটি মা বেঙ্গল টাইগারের কোলে এসেছে পাঁচটি সাদা শাবক।

‘বেলি’ নামের রয়েল বেঙ্গল টাইগারের জন্ম দেওয়া তিনটি শাবকের একটি সাদা। গতকাল মিরপুরে জাতীয় চিড়িয়াখানায়
ছবি: খালেদ সরকার

বেঙ্গল টাইগারের গায়ের রং হলদে–কালো ডোরাকাটা। তবে সম্প্রতি মিরপুরের জাতীয় চিড়িয়াখানা ও চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় দুটি মা বেঙ্গল টাইগারের কোলে এসেছে পাঁচটি সাদা–কালো ডোরাকাটা শাবক। এই পরিবর্তনকে বলা হয় অ্যালবিনো (Albino)। এর আগে দেশের কোনো চিড়িয়াখানায় বেঙ্গল টাইগারের অ্যালবিনো শাবক দেখা যায়নি বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন।

এই পাঁচ শাবকের পাশাপাশি একটি প্রাপ্তবয়স্ক সাদা বাঘ (মাদি/স্ত্রী) রয়েছে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায়। সেটি আনা হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে। এই প্রাণীর সঙ্গে একটি হলদে–কালো বেঙ্গল টাইগারের সংমিশ্রণে জন্ম নিয়েছে আরেকটি সাদা শাবক। সব মিলিয়ে দেশে এখন বাঘের ছয়টি সাদা শাবক ও একটি প্রাপ্তবয়স্ক সাদা বাঘ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দেশে এত বেশিসংখ্যক সাদা বাঘ অতীতে ছিল না।

তবে খাঁচায় বন্দী বাঘের মধ্যে আগে কখনো সাদা শাবক জন্ম হয়েছিল কি না, তা নিশ্চিত করে বলতে পারছে না কেউ।

ঢাকার মিরপুরের জাতীয় চিড়িয়াখানায় মা বেলির ঘরে চলতি বছরের ৪ এপ্রিল তিনটি শাবক জন্ম নেয়। এর মধ্যে দুটি হলদে–কালো হলেও আরেকটির রং হয় সাদা–কালো।

জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, তিনটি বাচ্চার মধ্যে একটি অ্যালবিনো বা সাদা রঙের। এটি জিনগত বিচ্যুতি, যা স্বাভাবিক নয়।

গত ৩১ জুলাই চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় পরী ও রাজের সংসারে চারটি শাবক আসে। চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ভারপ্রাপ্ত কিউরেটর শাহাদাত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, পরী ও রাজ বেঙ্গল টাইগার হলেও তাদের বাচ্চা চারটি হয়েছে সাদা–কালো ডোরাকাটা। সেগুলোর বয়স আড়াই মাস হতে চলল।

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আনা ‘শুভ্রা’ নামের সাদা বাঘটির বয়স এখন চার বছর। শুভ্রা ও রাজের (বেঙ্গল টাইগার) ঘরে একটি সাদা বাচ্চা হয়েছে প্রায় দেড় বছর আগে। চিড়িয়াখানাটির ভারপ্রাপ্ত কিউরেটর শাহাদাত হোসেন বলেন, বেঙ্গল টাইগারের সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকার সাদা বাঘের ক্রস ব্রিডিং করা হয়েছে।

যে কারণে সাদা শাবকের জন্ম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ ফিরোজ জামান প্রথম আলোকে বলেন, অ্যালবিনো একটি বিশেষ জিনের কারণে হয়। যে সাদা শাবক জন্ম নিয়েছে, তার মা–বাবার বংশধরদের মধ্যে আগে কেউ সাদা ছিল, কিন্তু পরবর্তী বংশধরদের মধ্যে তা প্রকাশ পায়নি। সেই থেকে যাওয়া একটি বিশেষ জিনের কারণে হঠাৎ করে একটি বাচ্চা সাদা হয়ে গেছে। এটি কেবল বাঘ নয়, মানুষের মধ্যেও হতে পারে।

যদি পূর্বপুরুষদের মধ্যে কেউ অ্যালবিনো না থাকে, তাহলে বুঝতে হবে খাঁচায় থাকার কারণে বা পরিবেশগত কারণে জিনগত ভিন্নতা আসতে পারে বলে মনে করেন অধ্যাপক মোহাম্মদ ফিরোজ।

‘বেলি’র জন্ম দেওয়া তিনটি শাবকের একটির পায়ে সমস্যা ছিল। চিকিৎসা দেওয়ায় এখন সেটি সুস্থ। গতকাল দুপুরে

দেশের বন্য বাঘের মধ্যে সাদা বা অ্যালবিনো পাওয়া যায় না উল্লেখ করে অধ্যাপক মোহাম্মদ ফিরোজ জামান বলেন, দেশে সর্বোচ্চসংখ্যক অ্যালবিনো রঙের বাঘের শাবক দেখা যাচ্ছে, যার সবই খাঁচায় থাকা বাঘ। যার সবগুলোই জন্ম নিয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে। এ বিষয়ে বিস্তারিত গবেষণা করা দরকার।

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার দায়িত্বপ্রাপ্তরা বলছেন, অ্যালবিনোর পাশাপাশি বাঘের মধ্যে ইনব্রিডিংয়ের (নিজের বংশধরদের মধ্যে প্রজনন) কারণেও সাদা শাবক হতে পারে।

অসুস্থ শাবকের তথ্য গোপন

জাতীয় চিড়িয়াখানায় বেলি যে তিনটি শাবকের জন্ম দিয়েছিল, তার মধ্যে একটি ছিল অসুস্থ। সেটি ভালোভাবে দাঁড়াতে পারত না। শাবকটিকে সরিয়ে ফেলে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। চিড়িয়াখানার হাসপাতালে সেটিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ তখন বেলির কোলে দুটি বাচ্চা এসেছে বলে প্রচার করেছিল। কেন অসুস্থ শাবকটির গোপন করা হয়েছিল, এমন প্রশ্নে মিরপুর চিড়িয়াখানার কিউরেটর মো. মজিবুর রহমান সদুত্তর দিতে পারেননি।

এই অসুস্থ শাবকটির কথা গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে জানান জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম তালুকদার। তিনি বলেন, শাবকটির পায়ের সন্ধিতে (জয়েন্ট) সমস্যার কারণে সেটি দাঁড়াতে পারত না। চারটি পায়েই এ সমস্যা ছিল। এখন সুস্থ।

শাবকটিকে এখনো আলাদা রাখতে হচ্ছে উল্লেখ করে চিড়িয়াখানার পরিচালক বলেন, কারণ বিড়াল প্রজাতির প্রাণীগুলোর ক্ষেত্রে বাচ্চা আলাদা করা হলে মায়ের কাছে আর ফিরিয়ে দেওয়া যায় না। তাকে মেরে ফেলতে পারে।