পৃথিবীতে বাঘের মোট নয়টি উপপ্রজাতি ছিল। গত শতাব্দীতে তিনটি উপপ্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বাকিগুলোর মধ্যে সুন্দরবনের বাঘ স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের। দীর্ঘ ২ হাজার ৬০০ বছর ধরে এই বাঘ সুন্দরবনসহ বাংলাদেশ ও ভারতের উপকূলীয় এলাকায় টিকে আছে। ইন্দোনেশিয়ায় জাভার বাঘের একটি উপপ্রজাতি পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
সুন্দরবনের বাঘ বিবর্তনের মাধ্যমে নিজের আকৃতি ছোট ও ম্যানগ্রোভ বনে টিকে থাকার মতো শারীরিক যোগ্যতা অর্জন করেছে। তারা এক কিলোমিটার দীর্ঘ নদী সাঁতরে পাড়ি দিতে পারে। বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের বাঘ মূলত গরু-মহিষ ও সাম্বার হরিণের মতো বড় প্রাণী খেয়ে টিকে থাকে। কিন্তু সুন্দরবনের বাঘ হরিণ, শূকর ও বানরের মতো ছোট প্রাণীও খায়। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় সুন্দরবনের বাঘের এসব অনন্য ও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য উঠে এসেছে।
যুক্তরাজ্যের কেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন, নটিংহাম টেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ গবেষক সুন্দরবনের বেঙ্গল টাইগারের জিনগত বৈশিষ্ট্য নিয়ে একটি গবেষণা করেন।
আজ শুক্রবার বিশ্ব বাঘ দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য ‘বাঘ আমাদের অহংকার, রক্ষার দায়িত্ব সবার’। এ উপলক্ষে বন বিভাগ নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
এতে বিশ্বে টিকে থাকা বাঘের অন্য পাঁচ উপপ্রজাতির সঙ্গে বেঙ্গল টাইগারকে তুলনা করা হয়েছে। ভারতের মহারাষ্ট্রের বানথাম্বোর বনভূমির বাঘের সঙ্গে সুন্দরবনের বাঘের সবচেয়ে বেশি মিল পাওয়া গেছে।
গবেষক দলের অন্যতম সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও বেসরকারি সংস্থা ওয়াইল্ড টিমের প্রধান নির্বাহী আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, সুন্দরবনের পরিবেশ ও প্রকৃতি বাঘের টিকে থাকার জন্য খুবই কঠিন। নোনা পানির সমস্যা আছে, ঝড়-জলোচ্ছ্বাস নিয়মিত ঘটনা। আমাদের উচিত, সুন্দরবনে বাঘের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা।
বন্য প্রাণীবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন বিশ্ব বন্য প্রাণী তহবিলের (ডব্লিউডব্লিউএফ) হিসাব অনুযায়ী, প্রায় ২০ হাজার বছর ধরে বিশ্বে টিকে থাকা বাঘ মূলত শুষ্ক অঞ্চলের প্রাণী। একমাত্র সুন্দরবনে পানি, কাদা, বৈরী পরিবেশ আর কম খাবারের জোগানের মধ্যে বেঙ্গল টাইগার টিকে আছে।
গবেষণার জন্য ২০১৪ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে বেঙ্গল টাইগারের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে বাঘের লোম, রক্ত, মল, টিস্যু, হাড্ডি, খুলি ও মূত্র। বাঘের জিনগত বৈশিষ্ট্য পরীক্ষা করতে ডারেল ইনস্টিটিউট অব কনজারভেশন অ্যান্ড ইকোলজি ও কেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগারে এসব নমুনা পরীক্ষা করা হয়। অন্য প্রজাতির বাঘের ডিএনএর সঙ্গেও তুলনা করা হয়।
গবেষণায় বলা হয়, জিনগত বৈশিষ্ট্য পর্যালোচনা করে প্রমাণ পাওয়া গেছে, এ ধরনের বাঘ বিশ্বের আর কোথাও নেই।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভারতের মহারাষ্ট্রের বনভূমি থেকে আলাদা হয়ে বেঙ্গল টাইগার খুলনা-যশোর উপকূলে আসে। সেখানে বন কেটে মানুষ বসতি গড়ার পর বাঘ চারদিক নদ-নদীবেষ্টিত সুন্দরবনে চলে যায়।
গবেষণায় দেখা গেছে, সুন্দরবনের বাঘের খাবারের ৭৪ শতাংশ জোগান আসে চিত্রা হরিণ থেকে।
গবেষক দলের সদস্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আবদুল আজিজ বলেন, সুন্দরবনের বাঘ পশুর নদের এক কিলোমিটার পথ সাঁতরে পাড়ি দিয়েছে, এমন প্রমাণ পাওয়া গেছে।
অন্য পাঁচটি উপপ্রজাতির বাঘের এমন সক্ষমতা খুব কমই আছে। সুন্দরবনের মতো শ্বাসমূলসমৃদ্ধ বনে টিকে থাকতে তার শরীরের গঠনেও পরিবর্তন এসেছে। এসব অনন্য বৈশিষ্ট্যের কারণে বেঙ্গল টাইগার পৃথিবীর জন্য বড় সম্পদ।
আজ শুক্রবার বিশ্ব বাঘ দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য ‘বাঘ আমাদের অহংকার, রক্ষার দায়িত্ব সবার’। এ উপলক্ষে বন বিভাগ নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।