চৈত্রের দাপটে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল রোদে পুড়ছে। গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা বাইরে বেরোনো মানুষের। কারণ, ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ। পাশাপাশি নীলফামারী ও দিনাজপুর জেলায় একই ধরনের তাপপ্রবাহ বইছে। এই তাপমাত্রা আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে যেতে পারে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে, বাতাসে জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে ঘাম ঝরবে বেশি, ফলে অস্বস্তি বৃদ্ধি পাবে।
আজ সোমবার আবহাওয়া অধিদপ্তরের সন্ধ্যা ছয়টার বুলেটিনে বলা হয়, ঢাকা জেলায় আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বনিম্ন ছিল ২৩ দশমিক ৪। ঢাকা বিভাগে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ফরিদপুরে ৩৮ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজশাহী বিভাগে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ঈশ্বরদীতে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, রংপুরে ছিল দিনাজপুর ও সৈয়দপুরে; ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ময়মনসিংহ বিভাগের ময়মনসিংহে ছিল ৩২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সিলেটের শ্রীমঙ্গলে ছিল ৩৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, চট্টগ্রাম বিভাগের বান্দরবানে ছিল ৩৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, খুলনার মোংলায় ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বরিশালের পটুয়াখালীতে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী তাপমাত্রা যদি ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়, তবে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলে। ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বলা হয়। তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয় যখন তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে। আর অতি তীব্র হয় ৪২ ডিগ্রি বা এর বেশি হলে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. আবুল কালাম মল্লিক প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকায় এপ্রিল মাসে গড়ে ৩৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা থাকে, যা স্বাভাবিক। সেই হিসেবে ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ৪ ডিগ্রি বেশি। এপ্রিল মাস বছরের উষ্ণতম মাস। এ মাসে প্রকৃতি থাকে বিরূপ। এ সময় অস্থায়ী দমকা বাতাস, ঝোড়ো বৃষ্টি, বজ্রসহ বৃষ্টি হয়। স্বল্প সময়ে প্রচণ্ড দাপট চালায়। এরপর আকাশ মেঘমুক্ত পরিষ্কার হয়ে যায়। ফলে সূর্যকিরণ উল্লম্বভাবে বাংলাদেশের ওপর পড়ে। সূর্যের উজ্জ্বল কিরণ থাকে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা। আবার বাতাসের গতিবেগ থাকে কম। তাই গরম বাড়ে।
ঈদের সময়টাতে তাপমাত্রা কমার কোনো সুখবর নেই বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক। তিনি বলেন, সেই সময়টাতে তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রির আশপাশে থাকবে। তাপপ্রবাহ থাকুক না থাকুক বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকবে, তাই গরমও বেশি অনুভূত হবে। এ ছাড়া পাশের দেশ ভারতের উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, বিহার ,পশ্চিমবঙ্গ, ওডিশা এবং ভারতের মধ্যভাগ জুড়ে তাপমাত্রা ৩৮ থকে ৪২ ডিগ্রির মধ্যে ওঠানামা করছে। সেখান থেকে পশ্চিম ও উত্তর–পশ্চিম দিক থেকে বাংলাদেশে গরম বাতাস প্রবেশ করছে। সেটি আবহাওয়াকে আরও অস্বস্তিদায়ক করে তুলছে।
এই গরমে কিছুটা স্বস্তি পেতে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। তাঁরা মনে করেন, অপ্রয়োজনে বাইরে বের না হওয়াই ভালো। সরাসরি সূর্যের আলো পড়ে, এমন জায়গায় না থাকা। বের হলে ছায়াযুক্ত স্থানে চলাফেরা করতে হবে। ঘরে-বাইরে আরামদায়ক পোশাক পরতে হবে।
ল্যাবএইডের ওয়েলনেস সেন্টারের পুষ্টিবিদ ফাহমিদা হাশেম বলেন, একজন নারীকে দিনে দুই থেকে আড়াই লিটার ও পুরুষদের আড়াই থেকে তিন লিটার পানি পান করতে হবে। এখন যেহেতু রমজান মাস, তাই ইফতারের পর থেকে সাহ্রি পর্যন্ত সময়টিতে পানি পান করতে হবে। প্রচণ্ড গরমে অনেক সময় শরীরের ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্য হারিয়ে যায়। তাই ডাবের পানি, আখের গুড়, লবণ ও লেবু দিয়ে ঘরে তৈরি শরবত ও স্যালাইন পান করতে হবে। অনেক সময় খাবার হজমেও সমস্যা হয়, পেট গরম হয়ে যায়। তাই বেলের শরবত, তরমুজের শরবত, টক দই দিয়ে মাঠা বা লাবাং তৈরি করে খাওয়া যায়। তবে কোনো শরবতেই অতিরিক্ত চিনি বা লবণ না দেওয়া। সাদা পানিকে বেশি প্রাধান্য দিতে হবে।
এ ছাড়া শরীরে পানি ধরে রাখে এমন কিছু খাবারের ওপর জোর দেন ওই পুষ্টিবিদ। যেমন ইসবগুল, চিয়া সিডস, তোকমাদানা, তরমুজ, নাশপাতি। আর সাহ্রিতে লাউ, চিচিঙ্গা, ঝিঙে, পেঁপে, চালকুমড়া, পটোল, ধুন্দুল বা শসা দিয়ে হালকা মসলায় পাতলা ঝোলের তরকারি।