রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলে প্রাকৃতিক আবাসে কুঁচ ফল
রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলে প্রাকৃতিক আবাসে কুঁচ ফল

রূপে–গুণে অনন্য কুঁচ

ব্যক্তিগতভাবে অনেকেই কুঁচ সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। এই গাছ কোথায় দেখা যায়, ফল কোথায় পাওয়া যায়? ইত্যাদি। কুঁচ নিয়ে সাধারণ মানুষের এত আগ্রহের কারণ মাত্র তিন দশক আগেও স্বর্ণ পরিমাপের কাজে এই ফল ব্যবহৃত হতো। সম্প্রতি স্বর্ণ মাপার কাজে ডিজিটাল পরিমাপক যন্ত্র চলে আসায় কুঁচের ব্যবহার বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে নতুন প্রজন্মের অনেকেই কুঁচ সম্পর্কে ততটা অবগত নয়।

কুঁচ মূলত ফলের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত হলেও সৌন্দর্যের দিক থেকে কুঁচের ফুল কোনোভাবেই পিছিয়ে নেই। বরং সৌন্দর্যে অনন্য। কিন্তু রূপে-গুণে অনন্য এই উদ্ভিদ এখন আর ততটা সহজলভ্য নয়। আমাদের লোকালয়, বনবাদাড় বা উদ্যানে গাছটি খুব একটা দেখা যায় না। প্রাকৃতিক আবাসে প্রায় দেড় দশক আগে কুঁচ ফল প্রথম দেখি রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলে ‘তপোবন’ নামক একটি বাগানবাড়িতে। ফল দেখার বছরখানেক পর গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর থেকে কাপাসিয়া যাওয়ার পথে শালবনের ভেতর ফুলও দেখি।

উপমহাদেশের প্রাচীন এই লতার অনুপম বৈশিষ্ট্য গাছটির বীজ। গাছ যেমনই হোক, দুর্বল অথবা সবল, কিংবা পোকায় খাওয়া পাতা, কিন্তু ফলের ভেতর যে কয়েকটি বীজ পুষ্ট হবে, তার সব কটাই হবে সমান ওজনের। ওজনের এই শুদ্ধতার কারণে রত্তিকুঁচ বা রক্তকুঁচ আগে সোনা মাপার ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য ছিল। অসম্ভব শক্ত বলে কলাবতীর মতো এর বীজও মারাক্কাসজাতীয় ঝুমকো বাদ্যযন্ত্রে ব্যবহার করা হয়। কুঁচবীজ এখনো কোনো কোনো স্বর্ণকারের দোকানে অ্যান্টিকের মতো শোভা পায়।

শত শত বছর ধরে তামিলরা এই গাছ (Abrus precatorius) এবং গাছটির ব্যবহার সম্পর্কে জানে, বিশেষত ‘সিদ্ধা’ চিকিৎসায় স্থানীয়ভাবে এর যথেষ্ট প্রসার আছে। কুঁচবীজ গর্ভপাত, বমনোদ্রেককারী, রেচক ওষুধ, অণুজীবরোধী, ক্যানসাররোধী, বলবর্ধক ও উদ্দীপক। বীজের ক্বাথ কোনো অঙ্গের বোধশক্তি ফিরিয়ে আনতে এবং চর্মরোগে কাজে লাগে। আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় সাধারণত সাদা কুঁচের ব্যবহারই বেশি, তবে রক্তকুঁচেরও বহুমুখী ব্যবহার রয়েছে।

গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর শালবনে দেখা কুঁচ ফুল

আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় শ্লেষ্মা, কৃমি, শূলব্যথা ইত্যাদি সমস্যায় কুঁচের ব্যবহার লক্ষ করা যায়। ব্যথা দূরীকরণে তাজা পাতার রস শর্ষের তেলের সঙ্গে মিশিয়ে বাহ্যিকভাবে ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে। গাছের মূল সাপের কাপড়, গ্রীবার ক্ষত ও গিঁটবাতে ব্যবহৃত হয়। বীজচূর্ণ মারাত্মক মাথাব্যথায় ব্যবহার্য। উপমহাদেশের বাইরে এই গাছ টিটেনাস, জন্ডিস, ব্রঙ্কাইটিস, যক্ষ্মা, একজিমা, পেটের পীড়া, ডায়াবেটিস, স্কিন ক্যানসার ইত্যাদি অসুখে ব্যবহৃত হচ্ছে।

কুঁচ বহুবর্ষজীবী আরোহী উদ্ভিদ। একসময় প্রায় সারা দেশে দেখা গেলেও এখন গাছটি দুর্লভ। এ গাছের শক্ত শাখা সাড়ে ৪ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। পত্রক Ðবিপরীত, লম্বা, উভয় প্রান্ত গোলাকার। ফুল গুচ্ছবদ্ধ, গোলাপি বা সাদাটে। ফল শিমজাতীয়। বীজের কিছু অংশ লাল, কিছু অংশ কালো। ফুল ও ফলের মৌসুম জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর।