রাতে কুয়াশা, ভোরে ঘাসে শিশিরবিন্দু আর হিমেল হাওয়া। প্রকৃতিতে শীতের এই আভাস নভেম্বরের শুরু থেকেই। তবে আবহাওয়াবিদদের হিসাবে, শীতকাল শুরু হতে আরও দেরি আছে। ডিসেম্বরের শুরু থেকে শীত ঋতুর শুরু।
তবে এবার শীত কম পড়তে পারে। প্রকৃতিতে তার ইঙ্গিতও দেখা যাচ্ছে। বাতাসে জলীয় বাষ্প বাড়লে হালকা শীতের এই সময়ে উষ্ণতা বাড়ে। ঘূর্ণিঝড় মিধিলি দুর্বল হয়ে হারিয়ে গেলেও এর সঙ্গে আসা জলীয় বাষ্প সারা দেশে রয়ে গেছে। ফলে এখনো শীত জেঁকে বসেনি। এই শীতের পুরো মৌসুমেই শীতের অনুভূতি কম থাকতে পারে।
তবে উত্তরাঞ্চল, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও সিলেটে বরাবরের মতোই শীত জেঁকে বসতে পারে।
এবার শীতকালের উষ্ণতা গত বছরের চেয়ে বেশি থাকতে পারে। ফলে শীতকালীন সবজির ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।কামরুল হাসান, আবহাওয়াবিদ
গত সপ্তাহে দেশের আবহাওয়াবিদেরা প্রথমবারের মতো শীত ঋতুর দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস চূড়ান্ত করেছেন। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ও যুক্তরাজ্যভিত্তিক আবহাওয়া গবেষণা সংস্থা রাইমস যৌথভাবে ওই পূর্বাভাস তৈরি করেছে। ১২ নভেম্বর রাজধানীর একটি হোটেলে ওই পূর্বাভাসের ফলাফল নিয়ে দেশের শীর্ষ আবহাওয়াবিদ ও গবেষকেরা আলোচনা করেন। তাতে এবারের শীতকাল সস্পর্কে এমন পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
ওই পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এ বছরের শীতকালে তাপমাত্রা বেশি থাকতে পারে। এরই মধ্যে অতিরিক্ত উষ্ণতার প্রভাবে বঙ্গোপসাগরে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে এক থেকে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেছে। এ সময়ে সাগরের তাপমাত্রা থাকে ২৭ থেকে ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেখানে তাপমাত্রা থাকছে ২৮ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফলে সাগরে প্রচুর জলীয় বাষ্প ও চাপ তৈরি হচ্ছে। গত সপ্তাহে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’ সৃষ্টি হওয়ার পেছনে ওই অতিরিক্ত তাপমাত্রাকেও দায়ী করা হচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে বঙ্গোপসাগরে আরেকটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। সেটি নিম্নচাপ হয়ে ঘূর্ণিঝড়েও রূপ নিতে পারে। এতে উপকূলীয় এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বাড়তে পারে বৃষ্টি। দেশের বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বাড়তে পারে। এতে চলতি মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি তাপমাত্রা থাকতে পারে। অর্থাৎ এই সময়ে যতটা ঠান্ডা পড়ার কথা ছিল, তার চেয়ে কম পড়তে পারে।
গত শীতের মতো এবারের শীতও কিছুটা উষ্ণ থাকতে পারে। তবে এবার শীতকালের উষ্ণতা গত বছরের চেয়ে বেশি থাকতে পারে। ফলে শীতকালীন সবজির ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।আবহাওয়াবিদ কামরুল হাসান
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশের আবহাওয়ায় লা নিনা ও ভারত মহাসাগর দ্বিচক্রের প্রভাব পড়তে দেখা যাচ্ছে। বঙ্গোপসাগর উত্তপ্ত থাকায় এরই মধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত করেছে। আরেকটি লঘুচাপ মাসের শেষের দিকে সৃষ্টি হতে পারে। ফলে সব মিলিয়ে এবার স্বাভাবিকের চেয়ে কম শীত পড়তে পারে।
আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, প্রশান্ত মহাসাগর এলাকায় এল নিনো সক্রিয় থাকায় আরব সাগর হয়ে ভারত মহাসাগরের দিকে শুষ্ক বাতাস প্রভাবিত হচ্ছে। ফলে আবহাওয়া স্বাভাবিকের চেয়ে উষ্ণ থাকছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমানের গত শীতের ধরন নিয়ে করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, গত বছরও শীতকাল স্বাভাবিকের চেয়ে উত্তপ্ত ছিল। গতবার শীতকালে স্বাভাবিকের চেয়ে ১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি তাপমাত্রা ছিল।
আর গড় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। গত বছর দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমেছিল ২০ জানুয়ারিতে ৫ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ২৩ ফেব্রুয়ারি—৩৫ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ কামরুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, গত শীতের মতো এবারের শীতও কিছুটা উষ্ণ থাকতে পারে। তবে এবার শীতকালের উষ্ণতা গত বছরের চেয়ে বেশি থাকতে পারে। ফলে শীতকালীন সবজির ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।