ঢাকার মাটির গঠন মূলত লাল মাটির। এই মাটিতে শালগাছ ভালো হয়। কিন্তু বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় বনসাই, চায়নিজ টগরসহ নানা দামি বিদেশি গাছ লাগানো হচ্ছে।
রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কের দুই পাশে বনসাইয়ের সারি। সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ ২০১৭ সালে এসব গাছ লাগিয়েছিল। নগরীর সৌন্দর্যবর্ধনের লক্ষ্যে এগুলো আনা হয়েছিল চীন ও তাইওয়ান থেকে। তবে পরিবেশবিদ ও উদ্ভিদবিদদের প্রবল বিরোধিতায় দেশের মাটির সঙ্গে সম্পর্কহীন এসব উচ্চমূল্যের গাছ লাগানোর কাজ আর বেশি দূর এগোয়নি। গতকাল বুধবার এই সড়কে ঘুরে দেখা গেছে, নিকুঞ্জ থেকে র্যাডিসন হোটেল পর্যন্ত এসব গাছ রয়েছে। গাছের পরিচর্যার অভাব স্পষ্ট।
ঢাকার মাটির গঠন মূলত লাল মাটির। সেখানে মূল গাছ শাল। একটা শালের চারা কিনতে ৯ টাকা লাগে। অত্যন্ত টেকসই গাছ শাল। অথচ সেই গাছ বাদ দিয়ে বিপুল অর্থ ব্যয়ে বনসাই লাগানো হয়েছিল। সেই প্রক্রিয়া বন্ধ হলেও সিটি করপোরেশন, পরিবেশ অধিদপ্তর, সওজ—কেউই এক দশকের বেশি সময় ধরে ঢাকার কোথাও একটিও শালগাছ লাগায়নি। ভবিষ্যতেও এই গাছ লাগানোর পরিকল্পনা নেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিনের নেতৃত্বে ঢাকা নগরে গাছের বৈচিত্র্য নিয়ে গত ডিসেম্বরে একটি গবেষণা হয়েছে। রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে, এসব এলাকার ৫৮ শতাংশ গাছই বিদেশি প্রজাতির। শোভাবর্ধক উদ্ভিদ আছে ৩৩ শতাংশ।
শালের সঙ্গে অনেক সহ-উদ্ভিদ আছে—যেমন চালতা, আমলকী, গান্ধী গজারি, সিন্দুরি, মেন্দা। এসব প্রজাতির কোনো গাছই এখন লাগানো হয় না। নগরীতে আবাসিক এলাকা আছে, কলকারখানা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতালসহ নানা ধরনের প্রতিষ্ঠান আছে। এসব এলাকার কোথায় কী ধরনের গাছ লাগাতে হবে, তার সঠিক পরিকল্পনা নেই দুই সিটির কারও। সড়কদ্বীপ কিংবা উদ্যানে যেসব গাছ আছে, এর একটি বড় অংশ বিদেশি প্রজাতির। এসব বিদেশি গাছ লাগানোর একটি বড় উদ্দেশ্য, তাতে বেশি অর্থ লাগে। ঠিকাদারের লাভের বিষয়টিই সেখানে মুখ্য। দেশজুড়ে চলছে দাবদাহ। রাজধানীতে এর প্রভাব অনেক বেশি। ভবিষ্যতে আরও বেশি প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকৃতিবিদ ও উদ্ভিদবিদদের।
এরই মধ্যে ঢাকা দিন দিন হারাচ্ছে সবুজ, জলাভূমি। এসব উদ্ধার ও রক্ষায় নেই তেমন তৎপরতা।
বিদেশি প্রজাতির একাধিক গাছ ও চরাঞ্চলের গাছ কীভাবে রাজধানীতে লাগানো হয়? প্রতিবেদন দেখেই গবেষণার ধরন বোঝা যাচ্ছেঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন
রাজধানীর বিজয় সরণি থেকে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত সড়ক বিভাজকে গাছ আছে। গতকাল বুধবার দেখা যায়, এই পথে থাকা পদচারী–সেতুগুলোতে প্লাস্টিকের ঝুড়িতে লাগানো গাছ ঝুলে আছে। অনেক ঝুড়ি ভেঙে গেছে। ২০১০ সালের পর পরিবেশ অধিদপ্তরের ‘নির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ প্রকল্পে’-এর (কেইস) আওতায় পদচারী–সেতুতে এসব গাছ লাগানো হয়। প্রকল্প শুরু হয় ২০০৯ সালে। পদচারী–সেতুতে লাগানো বেশির ভাগ গাছ বাগানবিলাস। গাছগুলোর চেহারা মলিন। ২০১৯ সালে এই কেইস প্রকল্পের অনিয়ম নিয়ে নানা কথা হয়।
এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল বায়ুমানের উন্নয়ন। কিন্তু বাগানবিলাস বা চায়নিজ টগরের মতো ছোট পাতার গাছ ঝুড়িতে লাগিয়ে বায়ু নির্মল করার বিষয়টি নিয়ে উদ্ভিদবিদেরা সমালোচনা করেন। পরিবেশ মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী ২০১৯ সালে গণমাধ্যমেই প্রকল্পের নয়ছয় নিয়ে কথা বলেন। প্রায় ২৮৫ কোটি টাকার প্রকল্পে ৩৩ কোটি টাকা চলে যায় পরামর্শক নিয়োগে। আর প্রকল্প কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর ছিল আকছার।
ব্যাপক সমালোচনার মুখে কেইস প্রকল্প শেষ হয়। ঢাকার তাপমাত্রাও দিন দিন বাড়ছে। পদচারী–সেতুর তুলনায় বিজয় সরণি থেকে ফার্মগেট পুলিশ বক্স পর্যন্ত প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকার সড়ক বিভাজকের গাছগুলো এখনো তরতাজা। গত বছর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ‘নগর সবুজায়ন’ প্রকল্পের অধীনে এসব গাছ লাগিয়েছে। এসব গাছের মধ্যে বেশির ভাগ চায়নিজ টগর, রঙ্গন ফুল, বাগানবিলাস। কিছু কিছু জায়গায় আছে জারুল, আমলকী। এই পথে একটি নিমগাছও আছে।
প্রকল্পের পরিচালক মো. নুরুজ্জামান খান বলেন, প্রকল্পের আওতায় মোট ৯০ হাজার গাছ লাগানো হয়েছে। এর মধ্যে ৮০ শতাংশের বেশি গাছ হলো সড়কদ্বীপে। ফুটপাতে মূলত ছাতিম, কাঠবাদাম ও বকুল ফুল লাগানো হয়েছে। ফুটপাতে প্রতিটি গাছ লাগাতে খরচ হয়েছে ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা।
এত খরচ কেন—জানতে চাইলে নুরুজ্জামান খান বলেন, ‘ফুটপাতে টাইলস ভাঙতে হয়। অনেক সময় ভূগর্ভস্থ তার থাকে। এসব ঠিক করতেও অর্থ লাগে।’ তবে সড়ক বিভাজকে প্রতিটি গাছ লাগাতে ব্যয় হয়েছে ৬০ টাকার মতো।
কাদের পরামর্শে, কেন এসব গাছ লাগানো হলো, এমন প্রশ্নে নুরুজ্জামান বলেন, নগরীর তাপ কমাতে ও বায়ুর উন্নতিতে লাগানো হয়েছে। এতে একদল পরামর্শক জরিপ করেছেন।
‘হ্যান্ডবুক অন স্ট্রিট প্লানটিং: প্রিপেয়ার্ড ফর ঢাকা নর্থ সিটি করপোরেশন’ নামের ওই বইয়ের অনেক কিছুই ভুলে ভরা। যেমন আমলকীগাছের নাম থাকলেও অড়বড়ইয়ের ছবি দেওয়া। ঝাউজাতীয় গাছের নাম থাকলও ছবি দেওয়া অন্য গাছের। রাজধানীর জন্য এসব গাছ কতটা যুক্তিযুক্ত, সেই প্রশ্ন থাকছেই। ভাটগাছের স্থানে অন্য গাছ, মেনদারগাছের স্থানে জাম্বুরার ফলের ছবি। আবার বিদেশি প্রজাতির আকাশমণিগাছের নাম দেওয়া হয়েছে সোনাঝুরি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মো. জসীম উদ্দিন এই জরিপ প্রতিবেদন দেখে প্রথম আলোকে বলেন, বিদেশি প্রজাতির একাধিক গাছ ও চরাঞ্চলের গাছ কীভাবে রাজধানীতে লাগানো হয়? আকাশমণি ও শীতের দেশের পাইনগাছ ঢাকার তাপ প্রশমনে কতটুকু কার্যকর হবে, সে প্রশ্নও থাকছে। প্রতিবেদন দেখেই গবেষণার ধরন বোঝা যাচ্ছে।
মাটির ধরন বিচারে লাল মাটির ঢাকার প্রধান গাছ হলো শাল। এখনো রাজধানী লাগোয়া সাভারে শালগাছের সারি দেখা যায়। নেপালের তরাই অঞ্চল থেকে বুড়িগঙ্গা নদীর পাড় পর্যন্ত লাল মাটির গালিচা।
মৃত্তিকাসম্পদ ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আফছার আলী প্রথম আলোকে বলেন, এখনো ঢাকায় ১০ ফুট মাটি খুঁড়লে নিচে লাল মাটি পাবেন। তবে নানা জায়গা থেকে মাটি আনায় ওপরের স্তরের মাটির ধরন পাল্টে গেছে। তারপরও ঢাকায় শাল ও এর সহযোগী গাছগুলো ভালো হতে পারে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের কেইস, উত্তর সিটি করপোরেশনের সবুজ নগরায়ণ প্রকল্প, দক্ষিণ সিটির সবুজায়ন কর্মসূচির কোথাও শালগাছ বা এর সহযোগী গাছ লাগানোর পরিকল্পনা কথা উল্লেখ নেই। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সৌন্দর্যবর্ধনে গাছ লাগানো হচ্ছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি গত বছর পাঁচ হাজার গাছ লাগিয়েছে বলে দাবি করেন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পরিবেশ, জলবায়ু ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সার্কেল) মো. খায়রুল বাকের। ভবিষ্যতে নতুন কয়েকটি খাল উদ্ধার করে সেখানেও গাছ লাগানোর পরিকল্পনা আছে বলে জানান তিনি।
নগরীতে স্থানভেদে ভিন্ন ভিন্ন গাছ লাগানোর কথা বলেন উদ্ভিদবিদেরা। গাছ স্থানীয় পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না, ভবিষ্যতে এটি কতটুকু ফল বয়ে আনবে—এসবও বিবেচ্য বিষয়। দক্ষিণ সিটি কি এসব আদৌ বিবেচনা করছে, এমন প্রশ্নে খায়রুল বাকের বলেন, ‘আমরা একজন উদ্যানবিশেষজ্ঞকে নিয়োগ দিয়েছি। আমরা পরিকল্পনা অনুযায়ীই এগোচ্ছি।’
তবে দীর্ঘমেয়াদি কোনো পরিকল্পনার কথা জানাতে পারেননি দক্ষিণের এই কর্মকর্তা।
কেবল দুই সিটি করপোরেশনই নয়, রাজধানীর বিশাল এলাকাজুড়ে সরকারি-বেসরকারি ভবনগুলোয় গাছ লাগানোর কোনো পরিকল্পনার কথা জানা যায়নি। এ জন্য নীতিমালা থাকা জরুরি বলে মনে করেন নগর ও শিল্পাঞ্চলে সবুজায়ন নিয়ে কাজ করা স্থপতি মেহেরুন ফারজানা। তিনি বলেন, রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নতুন নতুন ভবন হয়েছে। রাস্তা প্রশস্ত হয়েছে। অনেক গাছ কাটা হয়েছে। কিন্তু নতুন ভবনে সবুজ চোখে পড়ে না।
শিল্পাঞ্চলে সবুজায়নের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে মেহেরুন ফারজানা বলেন, যেকোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ৪০ শতাংশ স্থান ফাঁকা রাখতে হয়। সেখানে সাধারণত আম, কাঁঠাল, জামের মতো দেশি গাছই লাগানো হয়। আবার ফাঁকা স্থানে ঘাস লাগানো হয়। বিদেশি কোম্পানিগুলো সবুজায়নে জোর দেয় বলে এসব করা হয়।
মেহেরুন ফারজানা বলেন, নগরে ভবন তৈরির ক্ষেত্রেও এমন শর্ত আরোপ করা যেতে পারে।
উদ্ভিদবিদেরা বলছেন, যেসব গাছের ডাল প্রসারিত হবে, বড় পাতা থাকবে—নগরে সেসব গাছ লাগানো উচিত। কারণ, বড় পাতা থাকলে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া দ্রুত হয়। অর্থাৎ কার্বন ডাই–অক্সাইড শোষণ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়। বেশির ভাগ গাছ রাতে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া বন্ধ রাখে। কিন্তু নিম বা পিপলট্রির মতো দেশীয় কিছু গাছ রাতেও এ কাজ করে।
নিমগাছ না লাগানোর ক্ষেত্রে একটি যুক্তি তুলে ধরে উত্তর সিটির কর্মকর্তা নুরুজ্জামান বলছিলেন, ‘সড়ক বিভাজকে নিম লাগালে রাস্তায় বাইক বা গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়তে পারে।’ প্রশ্ন হলো, গাড়িগুলো তো সড়কের বাঁ দিক দিয়ে যায়। দুর্ঘটনার ঝুঁকির কথা কেন আসছে?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক রাখহরি সরকার বলছিলেন, ‘ঢাকা অঞ্চলে অন্তত শত প্রজাতির গাছ আছে, যেগুলো আমরা তাপ প্রশমনে ব্যবহার করতে পারি। কিন্তু সিটি করপোরেশনগুলো উদ্ভিদবিদদের পরামর্শ নিয়ে এসব গাছ নির্বাচন করছে বলে মনে হয় না। এখন গরম বেড়েছে বলে কথা হচ্ছে। গরম চলে গেলে আমরা হয়তো ভুলে যাব।’
অতীতের দিকে দৃষ্টি ফেরালে দেখা যায়, ঢাকার সবুজ আর জলাভূমি হারিয়েছে দিন দিন। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ মেহেদি আহসান গবেষণায় দেখিয়েছেন, প্রায় তিন দশকে ঢাকার গাছের হার ২০ শতাংশ থেকে এখন ৯ শতাংশ এলাকায় এসে ঠেকেছে। একইভাবে ২১ শতাংশ জলাভূমি কমে প্রায় ৩ শতাংশে ঠেকেছে।
মেহেদি আহসান বলেন, ‘কোনো শহরের অন্তত ১২ শতাংশ সবুজ থাকতে হয়। ঢাকায় সেটা ৭ শতাংশ। ১০ থেকে ১২ শতাংশ জলজ পরিবেশ থাকা উচিত হলেও আছে ৩ শতাংশের কম। এমন পরিবেশ উত্তাপ বৃদ্ধির জন্য সহায়ক।’
দেশের সবচেয়ে উষ্ণ মাস এপ্রিল। এ মাসের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য হলো, দাবদাহ থাকে। সেটা প্রশমন করে বৃষ্টি। কিন্তু ঢাকায় এপ্রিলে টানা দাবদাহ বেড়েছে।
আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ তাঁর গবেষণার তথ্য তুলে ধরে বলেন, গত বছর (২০২৩) ঢাকায় টানা ১৬ দিন দাবদাহ হয়েছে। এর আগের দুই বছরে ছিল যথাক্রমে দুই দিন ও সাত দিন। এবার গতকাল বুধবার পর্যন্ত ১৪ দিন টানা দাবদাহ হয়েছে।
তাপের এই শহরে গাছ ও জলাভূমি তো কমছেই। আবার যেসব গাছ লাগানো হচ্ছে, তাতে বিদেশি প্রজাতিরই রমরমা। অথচ ১৯৫৩ সালে আর এম দত্ত ও জে এন মিত্রের ‘কমন প্ল্যান্টস ইন অ্যান্ড অ্যারাউন্ড ঢাকা’ নামের গবেষণায় উঠে এসেছে, তখন ঢাকায় প্রায় ৮০০ প্রজাতির গাছ ছিল।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ মেহেদি আহসান গবেষণায় দেখিয়েছেন, প্রায় তিন দশকে ঢাকার গাছের হার ২০ শতাংশ থেকে কমে এখন ৯ শতাংশে ঠেকেছে। ২১ শতাংশ জলাভূমি কমে হয়েছে প্রায় ৩ শতাংশ।
দেশের সবচেয়ে উষ্ণ মাস এপ্রিল। এ মাসের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য হলো, দাবদাহ থাকে। কিন্তু ঢাকায় এপ্রিলে টানা দাবদাহ বেড়েছে।
আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ তাঁর গবেষণার তথ্য তুলে ধরে বলেন, গত বছর (২০২৩) ঢাকায় টানা ১৬ দিন দাবদাহ হয়েছে। এর আগের দুই বছরে ছিল যথাক্রমে ২ ও ৭ দিন। এবার গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত ২৬ দিন টানা দাবদাহ হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক জসিম উদ্দিনের নেতৃত্বে ঢাকা নগরে গাছের বৈচিত্র্য নিয়ে সম্প্রতি গবেষণা হয়েছে। রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে, ৫৮ শতাংশ প্রজাতিই বিদেশি। শোভাবর্ধক উদ্ভিদ আছে ৩৩ শতাংশ। এসব গাছের প্রাণিকুলের কাজে আসার সম্ভাবনা খুবই কম।
বাংলাদেশ জার্নাল অব প্ল্যান্ট ট্যাক্সনমিতে প্রকাশিত ২০২১ সালের গবেষণায়ও সড়ক বিভাজকে বিদেশি আগ্রাসী প্রজাতির গাছের বাড়বাড়ন্তের চিত্র উঠে এসেছে। গবেষণায় যে ১৫ প্রজাতির গাছের সন্ধান পাওয়া গেছে, তার ৯টিই ছিল আগ্রাসী বিদেশি প্রজাতির।
অধ্যাপক জসীম উদ্দিন বলছিলেন, দেশে হাজারো প্রজাতির গাছ রেখে বিদেশি প্রজাতি দিয়ে নগরীতে সবুজায়নের চেষ্টা চলছে। এটা আত্মঘাতী। এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী।
বিদেশি গাছে নগর ভরছে, আবার নগরের উদ্যান ভরছে কংক্রিটে। নগর–পরিকল্পনাবিদ মেহেদি আহসানের গবেষণায় দেখা যায়, বনানী উদ্যানে কংক্রিট আচ্ছাদিত এলাকা ৪২ শতাংশ, বাকিটা সবুজ। ওসমানী উদ্যানের ৫২ শতাংশ এলাকাই কংক্রিটে ঢাকা পড়েছে।