এই মাসে শুরু হতে যাওয়া জাতিসংঘের জীববৈচিত্র্য কনভেনশন (কপ১৬)-এর আগে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ জলাভূমির জীববৈচিত্র্যে সংরক্ষণ করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) এবং গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট ফ্যাসিলিটি (জিইএফ) সমন্বিতভাবে দুটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে।
আজ বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) কনফারেন্স রুমে এ উপলক্ষে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে ইউএনডিপি এবং বাংলাদেশ সরকার ‘কমিউনিটি-বেসড ম্যানেজমেন্ট অব টাঙ্গুয়ার হাওর ওয়েটল্যান্ড ইন বাংলাদেশ’ এবং ‘ইকোসিস্টেম-বেসড ম্যানেজমেন্ট (ইএমবি) ইন ইকোলজিক্যাল ক্রিটিক্যাল এরিয়া (ইসিএ) ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক দুটি প্রকল্প বাস্তবায়নের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। দুই প্রকল্পে অর্থায়নে সহায়তা করছে গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট ফ্যাসিলিটি।
ইউএনডিপি বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফারহিনা আহমেদ এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী চুক্তি স্বাক্ষরে অংশ নেন।
এই প্রকল্প দুটি বাংলাদেশের জন্য জরুরি পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার লক্ষ্যে স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে জলাভূমির সম্পদের টেকসই ব্যবহারে সচেতনতা বাড়ানোর কাজ করবে। যার মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং সার্বিকভাবে প্রতিবেশব্যবস্থা সমৃদ্ধ হবে।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং ইকোসিস্টেম পুনরুদ্ধারের জন্য আমাদের আরও আন্তর্জাতিক সহায়তার প্রয়োজন। এই ইকোসিস্টেমগুলোর সহব্যবস্থাপনায় স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে যুক্ত করা অপরিহার্য এবং যেকোনো অবকাঠামো প্রকল্পের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক ইকোসিস্টেম ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা হওয়া উচিত।’
ফারহিনা আহমেদ বলেন, ‘টেকসই জলাভূমির জন্য আমাদের ভূমি ব্যবস্থাপনায় সংস্কার করা প্রয়োজন। প্রচলিত ইজারা ব্যবস্থার ওপর নির্ভর না করে আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনায় সক্রিয়ভাবে স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করা দরকার। পর্যটনের ক্ষেত্রেও আমাদের আরও বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে, যাতে সংকটাপন্ন ইকোসিস্টেমগুলো আরও ঝুঁকিতে না পড়ে।’ তিনি আরও বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর জোর দেওয়ার পাশাপাশি আমাদের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং পরিবেশগত পরিচালনার ওপরও তৎপর হতে হবে। এটিও আমাদের জন্য অন্তত গুরুত্বপূর্ণ।’
স্টেফান লিলার বলেন, ‘যদিও বাংলাদেশ জলবায়ু অভিযোজন এবং ইকোসিস্টেম সংরক্ষণে প্রশংসনীয় অগ্রগতি অর্জন করেছে, কিন্তু তারপরও চলমান পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সম্মিলিতভাবে আমাদের কাজ করে যেতে হবে। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে অনেক দিন ধরেই কাজ করছে, যাতে জলবায়ু পরিবর্তন, জীববৈচিত্র্য ক্ষয়ক্ষতি এবং দূষণ—এই ত্রিমুখী সংকটের সমাধান করা যায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা একসঙ্গে বাংলাদেশের জাতীয় অগ্রাধিকারকে প্রাধান্য দিয়ে টেকসই উন্নয়নের জন্য গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট ফ্যাসিলিটি (জিইএফ) থেকে প্রায় ৩৬২ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করেছি।’
এই অনুষ্ঠানে সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং ইউএনডিপি বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সরকার এবং ইউএনডিপির এই যৌথ উদ্যোগ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও টেকসই উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে বলে আশা করা যায়।