জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এশিয়ার দেশগুলোতে ক্ষয়ক্ষতি সবচেয়ে বেশি। আর বেশি ক্ষতির দেশগুলোর মধ্যে ওপরের দিকে রয়েছে বাংলাদেশ, ভারত, চীন ও পাকিস্তান। প্রায় প্রতিবছরই একাধিক বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতের শিকার হচ্ছেন এখানকার অধিবাসীরা। বাংলাদেশের দুর্যোগকবলিত এলাকার ৮৭ শতাংশ নারী খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। এসব ক্ষয়ক্ষতি থেকে উঠে না দাঁড়াতেই তাঁরা আরেকটি দুর্যোগের কবলে পড়ছেন। ফলে তাঁরা অপূরণীয় ক্ষতির চক্রে পড়ে যাচ্ছেন।
আন্তর্জাতিক সংস্থা অক্সফাম থেকে চলতি মাসে প্রকাশ করা ‘এশিয়ায় জলবায়ুর ক্ষয়ক্ষতির লৈঙ্গিক দিক বা জেন্ডার ডাইমেনশনস অব লস অ্যান্ড ড্যামেজ ইন এশিয়া’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ৮ ডিসেম্বর দুবাইয়ে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন (কপ–২৮) উপলক্ষে প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে। গত ৩০ নভেম্বর থেকে ১২ ডিসেম্বর জলবায়ু সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে গঠিত হওয়া ‘জলবায়ুর ক্ষয়ক্ষতি তহবিলে’ এসব দেশের ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ এসেছে প্রতিবেদনটিতে।
এ সময় জ্বালানি কাঠের সরবরাহ কমে আসায় রান্না করা নিয়েও নারীরা সমস্যায় পড়েন। এ সময় ৫৪ শতাংশ নারী শারীরিক দুর্বলতায় ও ২৫ শতাংশ মাথাঘোরার মতো সমস্যায় ভোগেন।
অক্সফামের করা গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে বন্যা চলাকালে আক্রান্ত এলাকার নারীদের খাদ্যনিরাপত্তা ও অপুষ্টির সমস্যা পুরুষদের তুলনায় অনেক বেশি থাকে। দুর্যোগকবলিত এলাকার নারীরা খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। কারণ ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার সময় খাবারের জোগান কমে গেলে নারীরা নিজেরা খাবার খাওয়া কমিয়ে দেন। যতটুকু খাবার ঘরে আসে তার বড় অংশ পরিবারের অন্য সদস্যদের দিয়ে দেন। এ সময় জ্বালানি কাঠের সরবরাহ কমে আসায় রান্না করা নিয়েও নারীরা সমস্যায় পড়েন। এ সময় ৫৪ শতাংশ নারী শারীরিক দুর্বলতায় ও ২৫ শতাংশ মাথাঘোরার মতো সমস্যায় ভোগেন।
অবশ্যই বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অপূরণীয় ক্ষতি বাড়ছে। এই ক্ষতি মোকাবিলায় বাংলাদেশকে লস অ্যান্ড ড্যামেজ তহবিল থেকে অর্থ চাইতে হবে।বিআইডিএস সাবেক গবেষণা পরিচালক এবং জলবায়ুবিশেষজ্ঞ এম আসাদুজ্জামান
এ ব্যাপারে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের পর নারীদের প্রয়োজন মাথায় রেখে এবং তাঁদের গুরুত্ব দিয়ে আমরা সহায়তা দিয়ে থাকি। তবে অবশ্য যেভাবে দুর্যোগ বাড়ছে, তা সামলানোর জন্য জলবায়ু ক্ষয়ক্ষতি তহবিল থেকে আমাদের সহায়তা দরকার হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এ জন্য এগিয়ে আসতে হবে।’
বন্যার সময় পুরুষ শ্রমিকেরা অন্য এলাকায় ভালো কাজের আশায় চলে যান, অনেক ক্ষেত্রে পেয়েও যান। কিন্তু নারীরা পরিবারের শিশু ও বৃদ্ধদের ছেড়ে অন্য কাজের জন্য বা জরুরি প্রয়োজনে যেতে পারেন না। বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়প্রবণ এলাকায় দুর্যোগ দীর্ঘস্থায়ী হলে ৬৮ শতাংশ মানুষ বসতভিটা ছেড়ে দেশের অন্যত্র চলে যান। আর এলাকা ছাড়া মানুষদের ৩২ শতাংশ বিদেশে শ্রমিক হিসেবে চলে যান, যাঁদের বড় অংশ পুরুষ। নারীদের মধ্যে যাঁরা বিদেশে যান, তাঁদের ৬০ শতাংশ অল্প সময়ের জন্য গৃহশ্রমিক হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যান।
বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের পর নারীদের প্রয়োজন মাথায় রেখে এবং তাঁদের গুরুত্ব দিয়ে আমরা সহায়তা দিয়ে থাকি। তবে অবশ্য যেভাবে দুর্যোগ বাড়ছে, তা সামলানোর জন্য জলবায়ু ক্ষয়ক্ষতি তহবিল থেকে আমাদের সহায়তা দরকার হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এ জন্য এগিয়ে আসতে হবেদুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান
প্রতিবেদনে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্টি হওয়া দুই ধরনের দুর্যোগের কথা উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে বন্যা ও ঝড়ের মতো হঠাৎ আসা প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং ঋতু পরিবর্তন, তাপমাত্রা বৃদ্ধি, বৃষ্টি বেড়ে যাওয়ার মতো সমস্যা রয়েছে। এর মধ্যে হঠাৎ ঘটা দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে বেশি আলোচনা হয়। তবে দীর্ঘমেয়াদি দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতিও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। এতে ক্ষয়ক্ষতিও বাড়ছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক গবেষণা পরিচালক এবং জলবায়ুবিশেষজ্ঞ এম আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, অবশ্যই বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অপূরণীয় ক্ষতি বাড়ছে। এই ক্ষতি মোকাবিলায় বাংলাদেশকে লস অ্যান্ড ড্যামেজ তহবিল থেকে অর্থ চাইতে হবে। কিন্তু এসব ক্ষতি যে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হচ্ছে, তা বিজ্ঞানসম্মতভাবে প্রমাণ করতে হবে। এ জন্য সরকারকে গবেষণা ও মূল্যায়নের পেছনে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।