ঘণ্টায় ৭৪ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া নিয়ে ঢাকায় আঘাত হানল বছরের প্রথম কালবৈশাখী। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রায় ১২ মিনিট ধরে চলা ওই ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টিও ঝরেছে। সারা দিন দাবদাহের পর ওই বৃষ্টি জনজীবনে কিছুটা হলেও স্বস্তি এনেছে। তবে বাতাসের গতি বেশি থাকায় রাজধানীর ফার্মগেট, উত্তরা ও মিরপুরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় সড়ক বিভাজক ও ফুটপাতের গাছ ভেঙে পড়েছে। অনেক জায়গায় রাস্তার পাশে নির্মাণকাজের টিনও বাতাসের ধাক্কায় সরে গেছে।
রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে। ঝোড়ো হাওয়ার মধ্যে রাস্তায় থাকা লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটতে দেখা যায়। একই সঙ্গে গরম থেকে মুক্তি মিলবে বলে উচ্ছ্বাসও প্রকাশ করছিলেন তাঁরা। সাধারণত কালবৈশাখী ঝড় পাঁচ থেকে আট মিনিট স্থায়ী হয়। কিন্তু রাজধানীর এই ঝড় ১২ মিনিট ধরে চলে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে, রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকায় বাতাসের গতিবেগ ছিল সবচেয়ে বেশি, ঘণ্টায় ৭৪ কিলোমিটার। বছরের এই সময়ে কোনো এলাকায় ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে বাতাস বয়ে গেলে সেখানে কালবৈশাখী আঘাত হেনেছে বলে ধরা হয়। সাধারণত এপ্রিল মাসের শুরু থেকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কালবৈশাখী আঘাত হানা শুরু করে। কিন্তু এ বছর টানা দাবদাহ বয়ে গেলেও ঢাকায় কালবৈশাখীর আঘাত হানার ঘটনা এই প্রথম। এর আগে ঢাকাসহ দেশের আরও ৮-১০টি জেলায় ঝড় হলেও তার বাতাসের গতিবেগ এখনো নিশ্চিতভাবে জানতে পারেনি আবহাওয়া অধিদপ্তর।
এ বিষয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, দিনে একটানা দীর্ঘ সময় বেশি তাপমাত্রা থাকলে এবং বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকলে বিকেলে কালবৈশাখীর জন্য অনুকূল আবহাওয়া তৈরি হয়। আজ এ কারণেই কালবৈশাখী আঘাত হানল। আগামীকালও ঢাকাসহ দেশের চারটি বিভাগের দু-একটি জায়গায় কালবৈশাখী আঘাত হানতে পারে।
তবে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর তপ্ত অবস্থা দেখে বিকেলে যে এমন ঝোড়ো হাওয়া আসবে, তা আন্দাজ করা কঠিন ছিল। বিকেল চারটা পর্যন্ত রাজধানীতে গরম ছিল। বেলা তিনটায় রাজধানীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৩৭ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আকাশে মেঘ না থাকায় আর বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকায় রাজধানীজুড়ে গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা তৈরি হয়েছিল। সেখানে বিকেল পাঁচটা থেকে আবহাওয়া একদম বদলে যেতে শুরু করে। এরপর মেঘের গর্জনের সঙ্গে শুরু হয় ঝোড়ো হাওয়া ও বৃষ্টি।
আজ সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ভ্যাপসা গরমে রাজধানীসহ দেশের অর্ধেক এলাকার বাসিন্দারা কষ্টে ছিলেন। আজ দেশের বেশির ভাগ এলাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বেড়ে যায়। দেশের সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা উঠেছিল বান্দরবানে ৩৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর বাইরে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশাল বিভাগেও দাবদাহের তাপমাত্রা, অর্থাৎ ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে তাপমাত্রা ছিল।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আজ ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল বিভাগ ও পাবনা জেলার ওপর দিয়ে দাবদাহ বয়ে যাবে। আগামীকালও তা বয়ে যেতে পারে। পাশাপাশি আকাশে মেঘও বাড়তে পারে। ফলে তাপমাত্রা কিছুটা কমতে পারে। এতে দাবদাহের দাপট কমে আসতে পারে। বেশ কয়েকটি এলাকা থেকে দাবদাহ চলে যেতে পারে।