ময়মনসিংহের জয়নুল সংগ্রহশালার আঙিনায় বুশ অ্যালামান্ডা
ময়মনসিংহের জয়নুল সংগ্রহশালার আঙিনায় বুশ অ্যালামান্ডা

প্রকৃতি

চোখজুড়ানো বুশ অ্যালামান্ডা

বিদেশ থেকে অনেক ফুলের গাছ আমাদের দেশে এসেছে ও জনপ্রিয় হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে বুশ অ্যালামান্ডা। অ্যালামান্ডা বাংলায় অলকানন্দা নামে পরিচিত। তাহলে উদ্ভিদের নাম দাঁড়ায় ঝোপালো অলকানন্দা।

ময়মনসিংহ শহরের ব্রহ্মপুত্র নদের তীরের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন উদ্যান মানুষের পদচারণে মুখর থাকে ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। এই উদ্যানের পশ্চিম পাশেই জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালা। শিল্পীর আঁকা দুর্লভ ছবি ও তাঁর ব্যবহার্য জিনিস নিয়ে গড়ে উঠেছে এই সংগ্রহশালা। সংগ্রহশালার সামনের আঙিনায় রয়েছে নানা রকমের ফুলের গাছ। গত বছর অক্টোবরে এখানেই পেয়েছিলাম বুশ অ্যালামান্ডার দেখা। আমরা যে হলুদ অলকানন্দা দেখি, তার চেয়ে ভিন্ন এই ফুল।

বুশ অ্যালামান্ডা একটি চিরহরিৎ গ্রীষ্মমণ্ডলীয় গুল্ম। এটি সাধারণত চার-পাঁচ ফুট লম্বা হয়। এটি কমলা লাল গলা ডোরাসহ হলুদ, ট্রামপেট আকৃতির ফুলের গুচ্ছ বহন করে। ফুলগুলো সোনালি হলুদ পাপড়িসহ ঘণ্টা আকৃতির, গলায় ডোরাকাটা কমলা দাগ থাকে। পাতাগুলো চামড়ার মতো পুরু, উপবৃত্তাকার থেকে স্থূলকায়, ম্লান সবুজ, দুই থেকে চার ইঞ্চি লম্বা ও কাণ্ড বরাবর তিন থেকে পাঁচটি পাতা আবর্তাকারে থাকে। এটি গোল্ডেন ট্রামপেট ভাইনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত, তবে এটি লতানো নয়। বেশির ভাগ ওলিয়েন্ডার বা করবী পরিবারের সদস্যদের মতো, ডালপালা একটি বিষাক্ত ল্যাটেক্স নিঃসরণ করে। ১৮ শতকের সুইস উদ্ভিদবিদ ফ্রেডেরিখ অ্যালামান্ডের নামানুসারে উদ্ভিদটির গণের নামকরণ করা হয়েছে। ফল গোলাকার ও কাঁটাযুক্ত ক্যাপসুল।

Allamanda schottii সাধারণত বুশ অ্যালামান্ডা নামে পরিচিত। এটি Apocynaceae পরিবারের Allamanda গণের একটি গুল্ম। এই ফুলের আদি নিবাস ব্রাজিল। ব্রাজিলে এটি প্রায়ই ভেজা এলাকায়, খোলা বা বন্ধ বনে পানির কাছাকাছি বা পাশে জন্মায়। এই উদ্ভিদ পুয়ের্তোরিকো, গালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জ ও কোস্টারিকায় এখন প্রাকৃতিকভাবে জন্মে। ২ দশমিক ৫ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়। এটি বছরের বেশির ভাগ সময় বড় হলুদ ফুল বহন করে। শোভাময় উদ্ভিদ হিসেবে বাগানে লাগানো হয়, এটি বিভিন্ন দেশে আগাছায় পরিণত হয়েছে। ফল কাঁটাযুক্ত, বেশির ভাগ গ্রীষ্মকালে দেখা যায়।

এই প্রজাতির প্রথম বর্ণনা করেছিলেন জোহান ব্যাপ্টিস্ট ইমানুয়েল পোহল। তিনি ব্রাজিলের পারাইবা নদীর তীরে ১৮২৭ সালে এর সন্ধান পান। উইলিয়াম হুকারও এমন একটি উদ্ভিদের বর্ণনা করেছেন, যার Allamanda schottii-এর চেয়ে ছোট ছোট ঘন হলুদ ফুল ছিল। তিনি এই প্রজাতির নাম দেন Allamanda nerifolia। এটি তখন থেকে Allamanda schottii-এর প্রতিশব্দ বা সিনোনিম হিসেবে বিবেচিত হয়। একে কার্ল ফ্রেডরিখ ফিলিপ ফন মার্টিয়াস ‘ফ্লোরা ব্রাসিলিয়েনসিস’-তে তালিকাভুক্ত করেছেন।

অলকানন্দার অনেক সদস্যের মতো Allamanda schottii একটি লতা নয়; বরং একটি ঝোপ। এই গুল্ম ১ দশমিক ৫ থেকে ৩ মিটার লম্বা এবং প্রায় ২ মিটার চওড়া হয়। পাতা উপবৃত্তাকার থেকে ডিম্বাকার। তিন থেকে পাঁচটি পাতা একই আবর্তে সাজানো থাকে। পাতা ২ থেকে ১৪ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ১ দশমিক ১ থেকে ৪ সেন্টিমিটার চওড়া হয়। বড় হলুদ ফুলগুলো প্রান্তীয় অর্থাৎ শাখার শেষে ফোটে এবং সারা বছর দেখা যায়। তবে প্রধানত বসন্তে ফোটে । Phobis গণের প্রজাপতি দ্বারা ফুলের পরাগায়ন ঘটে। এ ছাড়া মৌমাছি ও বোলতা ফুলে ঘুরে বেড়ায়।

  • চয়ন বিকাশ ভদ্র, প্রকৃতিবিষয়ক লেখক