ঢাকায় নীল রঙের বনপিটুনিয়া দেখেছি প্রায় দুই দশক আগে। সতেজ আর বাসি ফুলের ক্ষেত্রে সময়ের হেরফের হলে নীল রং থেকে ক্রমেই বেগুনি হয়ে ওঠে। উজ্জ্বল রং আর দীর্ঘকালীন প্রস্ফুটন প্রাচুর্যের কারণে ফুলটি ধীরে ধীরে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
কিছুদিন পরেই গোলাপি রঙের বনপিটুনিয়া দেখি বৃক্ষপ্রেমী ও সমাজসেবী রাজিয়া সামাদের শেরপুরের বাসায়। শেরপুরে তিনি ডালিয়া আপা নামেই বেশি পরিচিত। বিচিত্র উদ্ভিদ সংগ্রহ করে বাসায় রাখা এবং বিভিন্ন স্থানে রোপণ করা তাঁর নেশা। ইদানীং বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন বাগানে সাদা রঙের বনপিটুনিয়াও দেখা যাচ্ছে। এভাবেই বনপিটুনিয়ার তিন রঙের ফুল দেশের বিভিন্ন বাগানে ছড়িয়ে আছে। তবে একই বাগানে তিন রঙের ফুল পাশাপাশি কোথাও দেখিনি। সম্প্রতি দুর্লভ এই দৃশ্য দেখার সুযোগ হলো ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ উদ্যানে। পরিকল্পনা করে সেখানে গাছগুলো রোপণ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রপ বোটানি বিভাগের প্রবীণ শিক্ষক অধ্যাপক আশরাফুজ্জামান। সেখানে ফুলভর্তি গাছগুলো এখন বেশ আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। মূলত বর্ণবৈচিত্র্য ও দীর্ঘস্থায়ী প্রস্ফুটন এ ফুলের প্রধান বৈশিষ্ট্য।
প্রথম দিকে দেশের বিভিন্ন স্থানে বনপিটুনিয়ার ফুল দেখার পর হাওরাঞ্চলে পট্পটির ফুল দেখে বেশ বিভ্রান্তিতে পড়ি। ফুল প্রায় একই রকম, বনপিটুনিয়ার মতো। তবে পাতার গড়ন একেবারেই আলাদা। তাহলে এটা আবার কোন ফুল? পরে অবশ্য জেনেছি, পট্পটি আমাদের দেশে এখন একেবারেই বুনো। দেশের জলাভূমি এলাকা তো বটেই, এমনকি খোদ রাজধানী ঢাকায়ও গাছটি প্রাকৃতিকভাবেই জন্মে।
বনপিটুনিয়া (Ruellia simplex) মাত্র কয়েক দশক আগে এসেছে আমাদের দেশে। আমাদের আবহাওয়ায় চমৎকারভাব মানিয়ে নিয়েছে। ইংরেজি নাম সফট ওয়াইল্ড পিটুনিয়া থেকে বনপিটুনিয়া নামকরণ। শীতের মৌসুমি ফুল পিটুনিয়া ও পট্পটি ফুলের সঙ্গে এ ফুলের অনেক সাদৃশ্য থাকলেও প্রজাতিগত বৈশিষ্ট্যে মিল নেই। গাছের চেহারাও ভিন্ন। ফ্রান্সের প্রতিথযশা ভেষজবিদ ও চিকিৎসক জিন রুয়েলির সম্মানে এ উদ্ভিদ গণের নামকরণ করা হয়েছে। এ কারণেই বৈজ্ঞানিক নামের প্রথমাংশে রুয়েলিয়া ব্যবহৃত হয়।
বনপিটুনিয়া বহুবর্ষজীবী বীরুৎ শ্রেণির উদ্ভিদ। ৩০ থেকে ৫০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। গুচ্ছবদ্ধ ফুল, ভেরি আকৃতির, উজ্জ্বল বেগুনি, গোলাপি বা সাদা রঙের, পাপড়ির সংখ্যা ৫, পুংকেশর ৪টি। ফুল ফোটে শ্রাবণ থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত। কোনো গন্ধ নেই। সাধারণত বীজ দিয়েই চাষ হয়। বাগানে বর্ণবৈচিত্র্য তৈরির জন্য পট্পটির সঙ্গে বনপিটুনিয়ার বিভিন্ন রঙের ফুলের চাষ করা যেতে পারে। এ গাছের আদি নিবাস পেরু-গায়ানা অঞ্চল। বাগানকে সুসজ্জিত করতেই
এ ফুল লাগানো হয়। অযত্নেও টিকে থাকতে পারে গাছটি।
মোকারম হোসেন, প্রকৃতি ও পরিবেশবিষয়ক লেখক