অপূর্ব রক্তদ্রোণ ফুল, সুনামগঞ্জ
অপূর্ব রক্তদ্রোণ ফুল, সুনামগঞ্জ

পাড়াগাঁয়ের দ্রোণ ফুল

ভোরের শিশিরে সিক্ত হয়ে আছে মেঠো পথের সবুজ তৃণলতা। কুয়াশার রঙে ঢেকে আছে আকাশ। দূরের কিছু দেখা যাচ্ছে না। সুনামগঞ্জের সোনামোড়ল হাওরের ফসলের মাঠে হাঁটতে হাঁটতে যখন কুয়াশার সাদা রং কিছুটা কমে গেল. তখন দেখা গেল শিশিরকণা পালকে মেখে একটি খঞ্জনা পাখি গুজো হয়ে বসে আছে খেতের আলে ভোরের নরম রোদের জন্য।

খঞ্জনা যেখানে বসে ছিল, তার পাশেই জেগে ছিল হালকা বেগুনি রঙের দ্রোণ ফুলের ছোট্ট একটি ঝোপ। শিশিরকণায় ফুলের পাপড়িগুলো হিম হয়ে ছিল। কাছেই হাওরের একটি বিলে শীতকালীন পাখি গুনব। সূর্যের আলো বিলের জলে না পড়লে কিছুই দেখা
যায় না। যে কারণে রোদের জন্য অপেক্ষা। যখন রোদ উঠল, ধীরে ধীরে হারিয়ে গেল শিশিরকণা। লাল-বেগুনী দ্রোণফুলের রং তখন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠল। রোদের আলোয় এমন মায়াবী দ্রোণফুল দেখতে খুবই ভালো লাগল। বিশেষ করে দ্রোণফুলের রং বিমোহিত করে মনকে।

বাংলাদেশে দুই প্রজাতির দ্রোণফুল দেখা যায়। একটির বর্ণ লাল ও মিষ্টি বেগুনি, অপরটি শুভ্র সাদা। ফুল সাদা রঙের বিধায়, সেটিকে কেউ কেউ বলতেন শ্বেতদ্রোণ, কেউবা বলতেন দণ্ডকলস। বাংলার ফসলের ভিটায়, ফসলকাটা খোলা খেতে, ডাল খেতে সাদা রঙের দ্রোণফুল বেশি দেখা যায়। শ্বেতদ্রোণ ফুল ছিঁড়ে ফুলের মঞ্জরীনলের নিচের দিকে জমে থাকা মধু ছিল আমাদের কাছে অতি কাঙ্ক্ষিত। মাঝে মাঝে গাঁয়ের অনেক পরিত্যক্ত খেত ছেয়ে যেত সাদা রঙের দ্রোণফুলে। দূর থেকে শ্বেতদ্রোণফুলের মাঠকে মনে হতো ভাজা খইয়ের মতো সেজেছে। কবি জীবনানন্দ দাশ তাই এই সাদা রঙের দ্রোণফুলকে বলেছেন ‘খইফুল’।

শ্বেতদ্রোণ ফুল, বরিশাল

দ্রোণফুলের দুটি প্রজাতি সহজেই বাংলাদেশের গ্রামের পথের ধারে দেখা যায়। পাড়াগাঁয়ের দ্রোণফুলের সৌন্দর্য খুব সহজেই গ্রামের মানুষেকে আকৃষ্ট করে। সুনামগঞ্জের ছাতকে গিয়ে রক্তদ্রোণের বড় একটি ঝোপ দেখেছি। প্রায় পাঁচ প্রজাতির প্রজাপতির সমাগম লক্ষ্য করেছি রক্তদ্রোণের ফুলে। তা ছাড়া কয়েক প্রজাতির অপূর্ব রঙের মৌমাছি ও ভ্রমর দেখেছি, যা আগে কোথাও দেখিনি।

  • সৌরভ মাহমুদ, প্রকৃতিবিষয়ক লেখক