মোখা কতটা শক্তিশালী, কোথায় আঘাত হানতে পারে

মোখার গতিপথ
ছবিটি আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া

আগামী রোববার সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় মোখা। তবে এর অগ্রভাগ আগের দিন অর্থাৎ শনিবার রাতেই বাংলাদেশের উপকূল স্পর্শ করবে। মোখার ফলে অতি ভারী বৃষ্টি হবে উপকূলে এবং অন্যান্য স্থানে। ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র মিয়ানমারের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। তবে বাংলাদেশেরও যথেষ্ট ঝুঁকি আছে।

ঘূর্ণিঝড় মোখার অবস্থান ও গতিপ্রকৃতি নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার এসব কথা বলেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান।

দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় থাকা গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় মোখায় পরিণত হয়েছে। আজ সকালে আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বার্তায় এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।

ঘূর্ণিঝড়টির গতিপ্রকৃতির ওপর নির্ভর করছে এটি ঠিক কখন আঘাত হানবে। অনেক সময় গতি কমে যায়। কোথায় কখন ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়বে, তা এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। হয়তো আরও পরে বলা যাবে। তবে এখন কিছু বিষয় অনুমান করছি আমরা
আজিজুর রহমান, আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক

আবহাওয়া বার্তায় দেশের চট্টগ্রাম, মোংলা, পায়রা সমুদ্রবন্দর ও কক্সবাজারে দুই নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়। এর আগে এসব বন্দরে এক নম্বর সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছিল।

আবহাওয়া বার্তায় বলা হয়,  ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার। এটি দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক আজিজুর রহমান আজ প্রথম আলোকে বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি এখন উত্তর ও উত্তর পশ্চিম দিকমুখী । এ অবস্থায় থাকবে কাল শুক্রবার সকাল পর্যন্ত। এরপর শুক্রবার সকাল ছয়টার দিকে উত্তর-উত্তর পূর্ব দিকে মোড় নেবে। এভাবে মোড় নেওয়ায় এটি প্রবল এবং পরবর্তী সময়ে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়ে এটি রূপান্তরিত হবে। এরপর কক্সবাজার ও উত্তর মিয়ানমার উপকূলের কাছে গিয়ে কিছুটা দুর্বল হবে।

আবহাওয়া বার্তায় বলা হয়,  ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার। এটি দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আজিজুর রহমান বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়টির গতিপ্রকৃতির ওপর নির্ভর করছে এটি ঠিক কখন আঘাত হানবে। অনেক সময় গতি কমে যায়। কোথায় কখন ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়বে, তা এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। হয়তো আরও পরে বলা যাবে। তবে এখন কিছু বিষয় অনুমান করছি আমরা।’

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালকের ভাষ্য, শনিবার সন্ধ্যা থেকেই এর ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রভাগ প্রবেশ করবে। ঘূর্ণিঝড়টির অর্ধেক অংশ বাংলাদেশের ওপরে বাকিটা মিয়ানমারের উপকূলে থাকতে পারে।

আজিজুর রহমান বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র মিয়ানমারের সিত্তুই ও কায়েকফু এলাকায় আঘাত হানতে পারে বলে আপাতত মনে হচ্ছে। তবে আমরা এতে ঝুঁকিমুক্ত নই। ঘূর্ণিঝড়ের অর্ধেক যেহেতু আমাদের কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের অংশ দিয়ে যাবে, সেই অংশটায় ব্যাপক বৃষ্টি হবে। ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হবে।’

গতকাল দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান প্রথম আলোকে বলেছিলেন, মোখা সুপার সাইক্লোন হতে পারে।

সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড়ের সময় বাতাসের গতিবেগ ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার হলে সেটি হয় সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড়। বাতাসের গতিবেগ ৮৮ থেকে ১১৭ হলে তাকে বলা হয় তীব্র ঘূর্ণিঝড়। আর বাতাস যদি ১১৭ থেকে ২২০ কিলোমিটার বেগে বয়, তবে তা হয় অতি তীব্র ঘূর্ণিঝড়। আর ২২০ কিলোমিটারের ওপরে বাতাসের গতিবেগ উঠলে তাকে সুপার সাইক্লোন বলা হয়।  

আজ আজিজুর রহমান বলেন, ‘মোখার সুপার সাইক্লোন হিসেবে আসার আশঙ্কা দেখছি না। সর্বোচ্চ ১৫০ কিলোমিটার মতো বাতাসের গতিবেগ হতে পররে। স্বাভাবিক অবস্থায় ১২০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার আর সর্বোচ্চ গতিবেগ ১৫০ হতে পারে। মোখার অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় হওয়ার ইঙ্গিত আমরা পাচ্ছি।’