স্থল নিম্নচাপ এবার রাজধানীতেও হাজির হয়েছে। আজ শনিবার সকাল থেকে নগরে ছিল মুখ গোমড়া করা আকাশ আর থেমে থেমে বৃষ্টির দাপট। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি দেশের উপকূল দিয়ে ঢুকে স্থল নিম্নচাপ হয়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে কক্সবাজারের। দেশের ওই পর্যটন শহরকে ডুবিয়ে আজ যশোর–খুলনায় হাজির হয়েছে।
স্থল নিম্নচাপে কারণে দেশের ভেতরে ভারী বৃষ্টি ও ভারতের উজান থেকে আসা ঢলে দেশের আট জেলার নিম্নাঞ্চল এরই মধ্যে প্লাবিত হতে শুরু করেছে। উপকূলীয় পাঁচটি শহরে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। অন্যদিকে দমকা হাওয়া ও ভারী বৃষ্টির কারণে দেশের সব কটি সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। আগামীকাল রোববার বৃষ্টির দাপট সারা দেশে বেড়ে রাজধানীতেও মাঝারি বৃষ্টি হানা দিতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর এমন পূর্বাভাস দিয়ে বলেছে, আজ উপকূলের কয়েকটি এলাকায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি চলতে পারে। দমকা হাওয়া ও ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ফেনী, কুমিল্লা, খুলনা, যশোর ও নোয়াখালী শহরে জলাবদ্ধতা তৈরি হতে পারে। চট্টগ্রামে পাহাড়ধস ও উপকূলীয় নদ–নদীগুলোতে ১ নম্বর সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ আজ প্রথম আলোকে বলেন, স্থল নিম্নচাপ ও শক্তিশালী মৌসুমি বায়ু একত্র হয়ে সারা দেশে বৃষ্টি বেড়ে গেছে। আগামী সোমবার পর্যন্ত বৃষ্টি বাড়তে পারে। তারপর বৃষ্টি দ্রুত কমে আসতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, আজ দেশের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায়—২৭৩ মিলিমিটার। এ ছাড়া কক্সবাজার সদরে ২২৫ ও চট্টগ্রামে ২০৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আজ বিকেলে স্থল নিম্নচাপের কেন্দ্রস্থল যশোর-খুলনার দিকে ছিল। যশোরে আজ দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আর রাজধানীতে বৃষ্টি ঝরেছে ৬ মিলিমিটার।
বাংলাদেশের চলমান আকস্মিক বন্যা ও ভারী বৃষ্টি নিয়ে একটি তাৎক্ষণিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা অক্সফাম। তাতে বলা হয়েছে, গত তিন সপ্তাহের মধ্যে দেশে দুই দফায় বন্যায় হতদরিদ্র মানুষ, নারী, শিশু, কিশোর–কিশোরী, প্রবীণ ব্যক্তি ও নারীপ্রধান পরিবারগুলো সবচেয়ে বেশি বিপদে আছে।
এদিকে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, দেশের উপকূলীয় আটটি জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তবে আগামী সোমবারের মধ্যে ওই পানি নামতে শুরু করবে। শুক্রবার সন্ধার পর মাতামুহুরী নদীর লামা পয়েন্টে পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে, যা আজ সকালের মধ্যে আবারও নেমে যায়। আজও কোথাও কোথাও নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করলেও তা বেশ সময় স্থায়ী হবে না। আগামীকালের মধ্যে আকস্মিক বন্যার পানি নেমে যেতে পারে।
এ ব্যাপারে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান আজ প্রথম আলোকে বলেন, দেশের উপকূলের আটটি জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি কয়েকটি জেলা শহরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। এটা আগামীকাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। সোমবার থেকে বৃষ্টি ও আকস্মিক বন্যার দাপট কমতে পারে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আজ দেশের বিভিন্ন নদ–নদীর ১১৬টি পয়েন্টের মধ্যে ৩২টিতে পানি বাড়ছে। আর ৮৪টিতে পানি কমছে। বাকি দুটির পানি স্থিতিশীল আছে। মূলত সিলেট ও চট্টগ্রামের নদ–নদীগুলোর পানি বাড়ছে। তবে আগামী দুদিন শুধু চট্টগ্রাম বিভাগের নদ–নদীর পানি বাড়তে পারে।