এপ্রিলে টানা তাপপ্রবাহের পর মে মাসেও সূর্যের দাপট। আকাশে মেঘের আনাগোনা কম। ফলে সূর্যের তাপ ভূখণ্ড তো বটেই, সমুদ্রের পানিকে অস্বাভাবিক উত্তপ্ত করে তুলছে। এ ধরনের আবহাওয়ায় মে মাসে বঙ্গোপসাগরে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি করছে। গত চার বছরে শুধু এই মাসে মোট চারটি ঘূর্ণিঝড় বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হয়েছে, যার সব কটি বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হেনেছে। ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত মোট ১৩টি ঘূর্ণিঝড় আঘাত করেছে। এর মধ্যে ৭টি ঝড় আসে মে মাসে।
জলবায়ু ও আবহাওয়াবিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে এপ্রিল ও মে মাস সবচেয়ে দুর্যোগপ্রবণ হয়ে উঠছে। এর মধ্যে এপ্রিলে তাপপ্রবাহের পাশাপাশি উজানে অতিবৃষ্টি হয়ে হাওরে আগাম বন্যা সৃষ্টি হচ্ছে। ২০১৭, ২০২০ ও ২০২১ সালে এ ধরনের বন্যা হয়েছে। ২০২২, ২০২৩ ও ২০২৪ পর্যন্ত টানা তাপপ্রবাহ এবং এ বছরগুলোর মে মাসে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার প্রবণতা বেড়ে গেছে।
গত চার বছরে শুধু এই মাসে মোট চারটি ঘূর্ণিঝড় বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হয়েছে, যার সব কটি বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হেনেছে। ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত মোট ১৩টি ঘূর্ণিঝড় আঘাত করেছে। এর মধ্যে ৭টি ঝড় আসে মে মাসে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, এপ্রিলের পুরো সময়ে বাংলাদেশের বেশির ভাগ এলাকায় তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। তাপমাত্রা ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। মে মাসেও এখন পর্যন্ত স্বাভাবিকের চেয়ে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রা থেকেছে। এ ধরনের আবহাওয়া বঙ্গোপসাগরকে অস্বাভাবিক উত্তপ্ত করে তুলেছে।
ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে গতকাল রোববার প্রকাশিত পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় রিমাল বঙ্গোপসাগরের যে এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে, সেখানে তাপমাত্রা ছিল ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। সাধারণত সাগরের তাপমাত্রা ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলেই সেখানে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির মতো পরিবেশ তৈরি হয়। ফলে ঘূর্ণিঝড় রিমাল সৃষ্টি হওয়ার পর খুব দ্রুত বাংলাদেশ ও ভারতের উপকূলের দিকে এগিয়ে আসে।
বাংলাদেশে মে মাসে সবচেয়ে চরম আবহাওয়া থাকছে। দুর্যোগগুলো এ সময়ে বেশি আঘাত হানছে। ফলে এই সময়কে মাথায় রেখে আমাদের দুর্যোগ মোকাবিলা এবং পূর্বাভাস ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে হবেনোয়ামির নির্বাহী পরিচালক মোহন কুমার দাশ
এ ব্যাপারে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, গত এপ্রিল জুড়ে বাংলাদেশে স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি তাপমাত্রা ছিল। সাগরেও একইভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি তাপমাত্রা ছিল এবং মে মাসেও তা অব্যাহত থেকেছে। ফলে ওই তাপ জমে সেখানে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়েছে। তিন-চার বছর ধরে এপ্রিল-মে মাসের তাপপ্রবাহের প্রভাবে মূলত মে মাসে ঘূর্ণিঝড় বাড়ছে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, এর আগে ২০২০ সালে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান, ২০২১ সালে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস, ২০২৩ সালে ঘূর্ণিঝড় মোখা আঘাত হেনেছিল মে মাসে। ওই চার বছরে বাংলাদেশে মোট আটটি ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। বাকি ঝড়গুলো অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বরে আঘাত করেছে।
আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, সাধারণত এপ্রিলে বাংলাদেশ, ভারতসহ বঙ্গোপসাগর এলাকায় তাপপ্রবাহ থেমে থেমে আসে। দেশের মাঝের ভূখণ্ডে কালবৈশাখী এবং সাগরে লঘুচাপ বা নিম্নচাপ তৈরি হয়। এতে বায়ুমণ্ডলে জমে থাকা তাপ কমে আসে। ফলে একবারে অনেক বেশি তাপমাত্রা জমে না। কিন্তু গত এক যুগ ধরে সাগরে লঘু বা নিম্নচাপের প্রবণতা কমে যাচ্ছে। নিম্নচাপ সৃষ্টি হওয়ার অল্প সময়ের মধ্যে তা দ্রুত ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হচ্ছে।
গত এপ্রিল জুড়ে বাংলাদেশে স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি তাপমাত্রা ছিল। সাগরেও একইভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি তাপমাত্রা ছিল এবং মে মাসেও তা অব্যাহত থেকেছে। ফলে ওই তাপ জমে সেখানে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়েছে। তিন-চার বছর ধরে এপ্রিল-মে মাসের তাপপ্রবাহের প্রভাবে মূলত মে মাসে ঘূর্ণিঝড় বাড়ছে।আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, এর আগে ষাটের দশকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত এ ধরনের আবহাওয়া দেখা গিয়েছিল। ওই সময়ে এপ্রিলে প্রচণ্ড উষ্ণতা আর মে মাসে প্রায় প্রতিবছর ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানত। এই সময়টাকে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে চরম আবহাওয়ার সময়কাল হিসেবে মনে করা হয়।
এ ব্যাপারে সমুদ্রবিষয়ক গবেষণা সংস্থা ন্যাশনাল ওশানোগ্রাফিক অ্যান্ড মেরিটাইম ইনস্টিটিউটের (নোয়ামি) নির্বাহী পরিচালক মোহন কুমার দাশ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশে মে মাসে সবচেয়ে চরম আবহাওয়া থাকছে। দুর্যোগগুলো এ সময়ে বেশি আঘাত হানছে। ফলে এই সময়কে মাথায় রেখে আমাদের দুর্যোগ মোকাবিলা এবং পূর্বাভাস ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে হবে।’