কংক্রিটের অবকাঠামো ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি সবুজ ও জলাশয় কমে যাওয়ার কারণে ঢাকাসহ দেশের নগরীগুলোর উষ্ণতা বাড়ছে। এতে শহরে উত্তপ্ত অঞ্চল (হিট আইল্যান্ড) তৈরি হচ্ছে, যা ডেঙ্গুর মতো রোগের প্রকোপ বাড়িয়ে দিচ্ছে। তাপমাত্রার বৃদ্ধি কারণে নগরের মানুষের সুস্থতা এখন হুমকির মুখে।
অষ্টম নগর সংলাপে ‘স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণে সহনশীল নগরায়ণ’ শীর্ষক আলোচনায় সংশ্লিষ্ট ও বিশেষজ্ঞদের বক্তব্যে এসব বিষয় উঠে এসেছে। আজ মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে যৌথভাবে এ সংলাপের আয়োজন করে আরবান আইএনজিও ফোরাম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগবিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগ।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ এস এম মাকসুদ কামাল। প্রবন্ধে বলা হয়েছে, ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বে ২০০ কোটি মানুষ নতুন করে নগরবাসী হবেন। এর মধ্যে ৯৫ শতাংশই হবেন বাংলাদেশ, ভারত, ব্রাজিল, আফ্রিকাসহ বৈশ্বিক দক্ষিণের (গ্লোবাল সাউথ) মানুষ। জলবায়ু পরিবর্তন নগরবাসীর ভোগান্তি চরমে নিয়ে যেতে পারে, যার প্রধান ভুক্তভোগী হবেন দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষেরা।
ঘূর্ণিঝড় রিমাল প্রসঙ্গে উপাচার্য বলেন, এই ঘূর্ণিঝড়ে (রিমাল) একটা ভিন্ন রূপ দেখা গেল যে এটা লম্বা সময় ধরে ছিল। ইতিমধ্যে তাপমাত্রা ১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। এর প্রভাবে ঘূর্ণিঝড়, হিট আইল্যান্ড, ডেঙ্গুর পরিমাণ বেড়েছে। গড় তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লে এ ধরনের বিপর্যয় ৫ দশমিক ৬ গুণ বেড়ে যাবে।
কার্বন নিঃসরণের জন্য দায়ী উন্নত দেশগুলোকে ‘কালপ্রিট’ অ্যাখ্যা দিয়ে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, আইলা থেকে রিমাল—যা কিছু হয়েছে, তার জন্য কালপ্রিট দেশগুলো দায়ী।
নগরকে টেকসই করতেই হবে উল্লেখ করে মেয়র বলেন, দিন দিন ঢাকার আশপাশের খাল কমছে। আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলো বালু দিয়ে খাল, জলাশয় ভরাট করছে। কিছু বললেই তারা পেশিশক্তি ও রাজনৈতিক জোর দেখায়। কিন্তু এখন সময় এসেছে প্রতিবাদ করার। বছিলায় খালের জমিতে করা ১০তলা ভবন ভাঙা হয়েছে। খালে ময়লা ফেললে জরিমানা করা হবে বলেও জানান তিনি।
ব্র্যাকের পরিচালক (জলবায়ু পরিবর্তন, নগর উন্নয়ন ও দুর্যোগঝুঁকি ব্যবস্থাপনা) মো. লিয়াকত আলী বলেন, ঢাকা শহরে প্রতিদিন দুই হাজার লোক আসেন। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ লোকই জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার হয়ে ঢোকেন। ঘূর্ণিঝড় রিমালের ক্ষতি আস্তে আস্তে বের হবে। অনেক জায়গায় বাঁধ ভেঙে গেছে। এ ঘটনায় ঢাকাসহ বড় শহরগুলোকে আরও কিছু জলবায়ু উদ্বাস্তু নিতে হবে।
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা করার বিষয়টি রাজনৈতিক বলে মনে করেন কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড বাংলাদেশ প্রোগ্রামের পরিচালক জ্যোতি রায় পাত্র। তিনি বলেন, সঠিক রাজনৈতিক নেতৃত্ব থাকলে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা করা সহজ।
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা হ্যাবিটেট ফর হিউম্যানিটি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের ন্যাশনাল ডিরেক্টর জেমস স্যামুয়েল। তিনি বলেন, সহনশীল (রেজিলিয়েন্ট) নগরায়ণ নিশ্চিত করতে হলে একজনকেও পেছনে না ফেলে সবার জন্য বাসস্থান, সুস্থতা, নিরাপত্তা, ব্যক্তিগত গোপনীয়তাসহ অন্যান্য বিষয় নিশ্চিত করতে হবে।
আজকের আলোচ্য বিষয় ছিল স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণ। আলোচনায় বিশেষজ্ঞরা বলেন, এলসিডি তালিকা থেকে উত্তরণ বলতে শুধু মাথাপিছু আয় বাড়ানোকে বোঝাবে না। এর সঙ্গে নগরের স্বাস্থ্য, বাতাসের বিশুদ্ধতা ও মানুষের স্বাস্থ্যের অবস্থাকেও বোঝাবে। তাই এলডিসি উত্তরণের কথা বললে এসব বিষয়ও খেয়াল রাখতে হবে।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন হ্যাবিটেট ফর হিউম্যানিটি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড পলিসি ম্যানেজার জুলিয়েট রোসেটি ও প্রোগ্রাম ম্যানেজার ফাহমিদা শুকরিয়া।