৬৪ জেলার মধ্যে সর্বোচ্চ বায়ুদূষণ গাজীপুরে, সবচেয়ে কম মাদারীপুরে

রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে বেসরকারি স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন
ছবি: প্রথম আলো

দেশের জেলাগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ বায়ুদূষণ পরিমাপ করা হয়েছে গাজীপুরে। আর সর্বনিম্ন বায়ুদূষণ পরিমাপ করা হয়েছে মাদারীপুরে। এক সমীক্ষায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ‘৬৪ জেলার বায়ুদূষণ সমীক্ষা ২০২১’ উপস্থাপন করে বেসরকারি স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)।

ক্যাপসের ৮১ সদস্যের একটি গবেষক দল দেশের ৬৪ জেলার ৩ হাজার ১৬৩ স্থানের বায়ুর অতিক্ষুদ্র বস্তুকণার পরিমাণ পরীক্ষা করে এই সমীক্ষাটি তৈরি করেছে।

সমীক্ষা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও গবেষক দলের প্রধান আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ক্যাপস ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত ৩ হাজার ১৬৩টি স্থানের বস্তুকণার মান পর্যবেক্ষণ করে। পরে তা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পর্যালোচনা করা হয়।

পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক বায়ুতে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণার দৈনিক আদর্শ মান ৬৫ মাইক্রোগ্রাম। সমীক্ষায় গাজীপুরের বায়ুতে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা প্রতি ঘনমিটারে ২৬৩ দশমিক ৫১ মাইক্রোগ্রাম পাওয়া যায়। মাদারীপুরে তা ৪৯ দশমিক শূন্য ৮ মাইক্রোগ্রাম।

জেলাভিত্তিক সমীক্ষায় গাজীপুরে সর্বোচ্চ বায়ুদূষণ পরিমাপ করা হলেও শহরভিত্তিক সমীক্ষায় সর্বোচ্চ বায়ুদূষণ পরিমাপ করা হয়েছে ঢাকায়।

সমীক্ষায় দেখা যায়, ৩ হাজার ১৬৩টি স্থানের গড় অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা প্রতি ঘনমিটারে ১০২ দশমিক ৪১ মাইক্রোগ্রাম। দৈনিক আদর্শ মানের (২৫ মাইগ্রাম) চেয়ে তা প্রায় ১ দশমিক ৫৭ গুণ বেশি।

অতিরিক্ত দূষিত বায়ুর জেলা

দূষণের দিক দিয়ে গাজীপুরের পরের অবস্থানে রয়েছে পার্শ্ববর্তী ঢাকা জেলা। এই জেলার বায়ুতে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা প্রতি ঘনমিটারে ২৫২ দশমিক ৯৩ মাইক্রোগ্রাম। নারায়ণগঞ্জ জেলার অবস্থান তৃতীয়। নারায়ণগঞ্জের বায়ুতে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা ২২২ দশমিক ৪৫ মাইক্রোগ্রাম।

অতিরিক্ত দূষিত বায়ুর অন্য জেলাগুলো হলো যথাক্রমে হবিগঞ্জ (২২০ দশমিক ১১ মাইক্রোগ্রাম), নোয়াখালী (২০৪ দশমিক শূন্য ১ মাইক্রোগ্রাম), টাঙ্গাইল (১৮৬ দশমিক ৩২ মাইক্রোগ্রাম), কক্সবাজার (১৮৩ দশমিক ৪১ মাইক্রোগ্রাম), চাঁদপুর (১৭০ দশমিক ৪২ মাইক্রোগ্রাম), চট্টগ্রাম (১৬৫ দশমিক ৩১ মাইক্রোগ্রাম), কিশোরগঞ্জ (১৬৫ দশমিক ১৩ মাইক্রোগ্রাম), মৌলভীবাজার (১৫৪ দশমিক ৮১ মাইক্রোগ্রাম), লক্ষ্মীপুর (১৪৯ দশমিক শূন্য ২ মাইক্রোগ্রাম), পঞ্চগড় (১৪২ দশমিক ৩১ মাইক্রোগ্রাম), ময়মনসিংহ (১৩৮ দশমিক ১১ মাইক্রোগ্রাম), ব্রাহ্মণবাড়িয়া (১৩৪ দশমিক ৭২ মাইক্রোগ্রাম), ফেনী (১২৮ দশমিক ৪১ মাইক্রোগ্রাম), ঠাকুরগাঁও (১২৫ দশমিক ৩২ মাইক্রোগ্রাম) ও জামালপুর (১২১ দশমিক ৬১ মাইক্রোগ্রাম)।

মধ্যম মানের দূষিত বায়ুর জেলা

সমীক্ষা অনুযায়ী, ৩৬টি জেলার বায়ু মধ্যম মানের দূষিত অবস্থানে। জেলাগুলো হলো যশোর (১১১ দশমিক ১২ মাইক্রোগ্রাম), মুন্সিগঞ্জ (১০৩ দশমিক ৭২ মাইক্রোগ্রাম), মানিকগঞ্জ (১০১ দশমিক ৯১ মাইক্রোগ্রাম), শেরপুর (১০০ দশমিক ৪২ মাইক্রোগ্রাম), নেত্রকোনা (৯৯ দশমিক ৬৩ মাইক্রোগ্রাম), বরগুনা (৯৮ দশমিক ৫৮ মাইক্রোগ্রাম), খাগড়াছড়ি (৯৮ দশমিক ১৭ মাইক্রোগ্রাম), সিলেট (১৭ দশমিক শূন্য ২ মাইক্রোগ্রাম), গোপালগঞ্জ (৯৪ দশমিক ৪৭ মাইক্রোগ্রাম), নরসিংদী (৯৩ দশমিক ৬৫ মাইক্রোগ্রাম), গাইবান্ধা (৯৩ দশমিক ৩৩ মাইক্রোগ্রাম), রাঙামাটি (১২ দশমিক শূন্য ৭ মাইক্রোগ্রাম), চুয়াডাঙ্গা (৯০ দশমিক ৩ মাইক্রোগ্রাম), সুনামগঞ্জ (৮৯ দশমিক শূন্য ৫ মাইক্রোগ্রাম), পিরোজপুর (৮৭ দশমিক ৯৩ মাইক্রোগ্রাম), বগুড়া (৮৭ দশমিক শূন্য ২ মাইক্রোগ্রাম), কুমিল্লা (৮৬ দশমিক ৭৭ মাইক্রোগ্রাম), মাগুরা (৮৬ দশমিক শূন্য ১ মাইক্রোগ্রাম), লালমনিরহাট (৮৬ দশমিক ১ মাইক্রোগ্রাম), বান্দরবান (৮৪ দশমিক শূন্য ৪ মাইক্রোগ্রাম)।

এই তালিকার অন্য জেলাগুলো হলো নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ঝালকাঠি, ভোলা, নীলফামারী, শরীয়তপুর, দিনাজপুর, ঝিনাইদহ, বরিশাল, সাতক্ষীরা, ফরিদপুর, বাগেরহাট, রংপুর, নড়াইল, কুষ্টিয়া ও খুলনা। এই জেলাগুলোর বায়ুতে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা ৮০ থেকে ৬৭ মাইক্রোগ্রামের মধ্যে।

ভালো বায়ু মানের জেলা

সমীক্ষায় মাত্র ১০টি জেলায় বায়ুর মান ভালো পাওয়া যায়। এসব জেলার বায়ুতে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা প্রতি ঘনমিটারে ৬৫ মাইক্রোগ্রাম নিচে।

জেলাগুলো হলো কুড়িগ্রাম, নাটোর, জয়পুরহাট, রাজবাড়ী, রাজশাহী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, মেহেরপুর, পটুয়াখালী ও মাদারীপুর।

রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, মেগা প্রকল্প, ইটভাটা, শিল্পকারখানা, ফিটনেসবিহীন যানবাহনের কালো ধোঁয়া, ময়লা-আবর্জনা পোড়ানো প্রভৃতি বিষয়গুলোকে বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ হিসেবে সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছে।

অন্যদিকে বায়ুদূষণ কম হওয়ার কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্ট এলাকার ভৌগোলিক অবস্থান, প্রচুর পরিমাণ গাছপালা, প্রাকৃতিক জলাধার প্রভৃতি থাকার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া এসব এলাকায় রাস্তা সংস্কারের কাজও খুব একটা লক্ষ করা যায়নি।