সরকারের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পূর্বাভাস ছিল, চলতি সপ্তাহের শেষ দিকে দেশে আবারও বন্যা দেখা দিতে পারে। কিন্তু হঠাৎ গঙ্গা ও পদ্মা অববাহিকায় পানি বেড়ে গেছে। এতে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও কুষ্টিয়া জেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। ৬০ বছরের ইতিহাসে দেশে এবারই প্রথম অক্টোবর মাসে এ ধরনের বন্যা দেখা দিয়েছে।
মূলত বাংলাদেশের উজানে ভারতীয় অংশে গঙ্গা নদী থেকে আসা পানির কারণে এই বন্যা দেখা দিয়েছে। ভারতীয় অংশে ফারাক্কা বাঁধের বেশির ভাগ গেট খুলে দেওয়ায় বন্যার তীব্রতা হঠাৎ বেড়ে গেছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, দেশের বিভিন্ন নদ-নদীর ৯৩টি পয়েন্টের মধ্যে ৭৪টির পানি বাড়ছে। এর মধ্যে পদ্মা, গঙ্গা ও গড়াই নদ-নদীর অনেকগুলো পয়েন্টে পানি বিপৎসীমা ছুঁইছুঁই করছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বন্যা ৮ থেকে ১০ দিন স্থায়ী হতে পারে। এই সময়ে দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের বেশির ভাগ নিম্নাঞ্চল ও চর এলাকায় রয়েছে পেকে ওঠা আমন ধান ও শীতের আগাম সবজি। বন্যায় এর বড় অংশের ব্যাপক ক্ষতি ও নদীভাঙনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আইনুন নিশাত প্রথম আলোকে বলেন, এপ্রিল ও সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের বন্যা সব সময় খুব মারাত্মক হয়। অক্টোবর মাসে কখনোই এ ধরনের বন্যা বাংলাদেশে হয়নি। তবে এই বন্যায় মূলত চর এলাকাগুলো শুরুতে ডুবে যাবে। এই পানি নামতে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত লেগে যেতে পারে।
ভারতের উত্তর প্রদেশ ও বিহার রাজ্যে প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে। এতে গঙ্গা অববাহিকার রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে দেখা দিয়েছে প্রবল বন্যা। এই বন্যার পানির চাপ বেড়ে যাওয়ায় পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের ফারাক্কা ব্যারাজ ভেঙে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিলে ব্যারাজের ১১২টি স্লুইসগেট বা জলকপাট খুলে দিয়েছে ফারাক্কা ব্যারাজ কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষ বলেছে, ফারাক্কায় গঙ্গার পানি বিপৎসীমার ৭ ফুট ওপর দিয়ে বইছে। ফলে ফারাক্কা ব্যারাজ ভেঙে যাওয়ার হুমকির মুখে পড়লে কর্তৃপক্ষ গেটগুলো খুলে দেয়। ছেড়ে দেওয়া পানি ছুটে গেছে বাংলাদেশের দিকে।
তবে বাংলাদেশ সরকারের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে প্রতি জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ফারাক্কা ব্যারাজের গেটগুলো খোলা থাকে। গঙ্গা অববাহিকার উজানে নিম্নচাপজনিত কারণে ব্যাপক বৃষ্টি হয়েছে। এতে ভারত ও বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে বন্যা দেখা দিয়েছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, এই বন্যার পানি সপ্তাহখানেক বাড়তে পারে। তবে এখন পর্যন্ত যা ধরন, তা দেখে মনে হচ্ছে, এটি মাঝারি ধরনের বন্যা হবে। দেশের ২০ শতাংশ এলাকা এতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুষ্টিয়া, পাবনা ও রাজশাহীর চর এলাকাগুলোতে বিপুল ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। গড়াই নদে পানি বেড়ে যাওয়ায় কুষ্টিয়া শহরের জিকে ঘাটসংলগ্ন এলাকায় বেশ কয়েকটি বাড়িতে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত কুষ্টিয়ার শিলাইদহ কুঠিবাড়ি রক্ষা বাঁধের দেড় কিলোমিটার অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে। আর চাঁপাইনবাবগঞ্জে বন্যার কারণে ৪২ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ও রাজশাহী এবং প্রতিনিধি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনা ও কুষ্টিয়া]