সুন্দরবনের পাশে অনুমোদন পাওয়া ২৪টি মারাত্মক দূষণকারী বা লাল শ্রেণির কারখানাকে ‘দূষণমুক্ত’ ঘোষণাকে দেশের জন্য আত্মঘাতী হিসেবে চিহ্নিত করেছে সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটি ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনসহ (বাপা) ৫৭টি সংগঠন। পরিবেশ আইন সংশোধন করে নেওয়া ওই সিদ্ধান্তকে বেআইনি হিসেবে চিহ্নিত করে তা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরা।
আজ বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি গোলটেবিল মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা এই দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া মূল বক্তব্যে সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক সুলতানা কামাল বলেন, সুন্দরবন ধ্বংসকারী কয়লাভিত্তিক রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ ছাড়াও সরকার সুন্দরবনের পাশ ঘেঁষে ৩২০টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি দিয়েছে। যদিও প্রধানমন্ত্রী একবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, এসব প্লটে কোনো শিল্পকারখানা স্থাপনের অনুমতি দেওয়া হবে না। কিন্তু এরপরই সরকার ওই বনের ১০ কিলোমিটারের মধ্যেই শিল্পকারখানার অনুমতি দিয়েছে। যার মধ্যে আটটি তরলকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসসহ (এলপিজি) মোট ২৪টি মারাত্মক দূষণকারী।
সুলতানা কামাল আরও বলেন, ‘সবচেয়ে মারাত্মক খবরটি হচ্ছে, লাল তালিকায় থাকা ওই ২৪টি কারখানাকে বৈধতা দিতে পরিবেশ আইনটিই সংশোধন করে লাল তালিকা থেকে সবুজ তালিকায় যুক্ত করেছে। সুন্দরবনবিনাশী একের পর এক সরকারি পদক্ষেপে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন।’ তিনি বলেন, ‘কারখানার যন্ত্রপাতির কোনো পরিবর্তন না করে শুধু মন্ত্রণালয়ের কাগজে লিখে দিলেই কি লাল কোনো দিন সবুজ হতে পারে? এ ধরনের স্বেচ্ছাচারী পদক্ষেপে আমরা চরমভাবে দুঃখিত, স্তম্ভিত ও ক্ষুব্ধ। একটি বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থে সরকার এ ধরনের আত্মঘাতী, জননিরাপত্তাবিরোধী, পরিবেশ ও সুন্দরবনের প্রতি চরম হুমকিমূলক পদক্ষেপ নিয়েছেন।’
সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব ও বাপার সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল মতিন, সরকার পরিবেশ আইন সংশোধন করে সুন্দরবনবিনাশী যে পদক্ষেপটি নিল, তা দেখে মনে হচ্ছে, দেশে সামরিক শাসন চলছে। কারও সঙ্গে আলাপ-আলোচনা না করে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সিদ্ধান্ত সরকারের নেই।
বাপার যুগ্ম সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, সুন্দরবনকে ধ্বংস করার নানামুখী চক্রান্ত অনেক আগ থেকেই শুরু হয়েছে, এটা বন্ধ করতে হবে। পরিবেশ আইন সংশোধন করে লাল তালিকার কারখানাকে রাতারাতি সবুজ কারখানা হিসেবে ঘোষণা দেওয়াকে ‘আইনগত দুর্নীতি’ হিসেবে চিহ্নিত করে তিনি বলেন, অপরিকল্পিত শিল্পায়নের ফলে পশুর নদী তার স্বাভাবিক চরিত্র হারিয়ে দুই দিকেই ভাঙছে। এতে নদীপারের জনগণ আজ গৃহহারা হয়ে পড়েছে।
তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সংগঠক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে সুন্দরবনকে পরিত্যক্ত ঘোষণার প্রচেষ্টা হচ্ছে, যা খুবই উদ্বেগের কারণ। একদিকে শিল্পকারখানার অনুমোদন, অন্যদিকে সরকারি দলের নেতা-পাতি নেতারা সুন্দরবনের পাশ জমি কিনে তা বিক্রির ব্যবসায় যুক্ত হয়ে পড়েছেন। তিনি সুন্দরবন রক্ষায় জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শেখ ফরিদুল ইসলাম ও নির্বাহী পরিচালক মোজাহেদুল ইসলাম মুজাহিদসহ প্রমুখ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।