রাতের জোছনা থেকে আলো চুরি করে যেন রূপবতী হয় সোনাপাতি। সে জন্য এর একটা কাব্যিক নামও দেওয়া হয়েছে চন্দ্রপ্রভা।
বাংলাদেশের ছয়টি ঋতুর আলাদা রং ও সৌন্দর্য আছে। শরতে কাশফুলের সাদা রং শেষ হতে না হতেই হেমন্তে পাকা আমন ধানের সোনালি রঙে হেসে ওঠে কৃষকের উঠান। সোনাপাতির সোনারং তাই হেমন্তের রং, বসন্তের রং হলুদ বা বাসন্তী, গ্রীষ্মের রং লাল।
গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে ময়মনসিংহে যাওয়ার মহাপথটি এখন চমৎকার। সড়ক বিভাজকে লাগানো কিছু সোনাপাতি ফুলের তরুণ গাছ, ফুলভারে নত হয়ে পথযাত্রীদের যেন নিত্য অভিবাদন জানাচ্ছে এই হেমন্তে। তেমনি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রসহ ঢাকার বিভিন্ন স্থানে সোনাপাতি ফুল ফুটতে দেখা যাচ্ছে। ফুল থেকে ফুলে উড়ে উড়ে মধু আহরণে ব্যস্ত মৌমাছি আর প্রজাপতির দল। হালকা মিষ্টি একটা গন্ধ আচ্ছন্ন করে রেখেছে গোছাবদ্ধ সোনাপাতি ফুলগুলোকে। হেমন্তের এ এক অদ্ভুত মুগ্ধতা।
সোনাপাতি ফুলগাছ চিরসবুজ ছোট বৃক্ষ প্রকৃতির। গাছ তিন থেকে পাঁচ মিটার লম্বা হয়। গাছ দ্রুত বাড়ে। বাড়তে দিলে কয়েক বছর বাঁচে ও গাছ বড় হয়। গাছে বেশ ডালপালা হয়, ডালপালা এলোমেলোভাবে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ফুলের ভারে ডালপালা নুয়ে পড়ে। প্রথমে ডালের আগায় ফুল ফোটে, ধীরে ধীরে ডালের পাতার কোল থেকে ফুল ফুটতে শুরু করে। ডালের উজ্জ্বল সবুজ রঙের ঝোপের মধ্যে থোকা ধরা কলকের মতো উজ্জ্বল ফুলগুলোকে খুব সুন্দর দেখায়। সোনাপাতি ফুলের ইংরেজি নাম ইয়োলো বেলস, ইয়োলো ট্রামপেট, ইয়োলো–এলডার ইত্যাদি। এর উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম tecoma stans এবং পরিবার বিগ্নোনিয়েসি।
বীজ থেকে চারা তৈরি করা যায়। দুই থেকে তিন মাস বয়সী চারা বাগানে লাগানো যায়। তবে তা না করে প্রধানত ডাল কেটে কলমের মাধ্যমে চারা তৈরি করা হয়। টবে, ছাদে, বাড়ির বাগানে, পার্কে, রাস্তার ধারে, সড়কদ্বীপে, স্কুল–কলেজের আঙিনায় লাগিয়ে শোভা বাড়ানো যায়।