স্কুলের পাশেই ইটভাটা, ধুলো-ধোঁয়ায় চলছে পাঠ

পাশেই ইটভাটা। তল্লাবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক স্কুলে এর মধ্যেই চলছে ক্লাস। ছবি: কাজী আশিক রহমান
পাশেই ইটভাটা। তল্লাবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক স্কুলে এর মধ্যেই চলছে ক্লাস। ছবি: কাজী আশিক রহমান

স্কুলটির ধারঘেঁষে ইটভাটা। ওতে আগুন জ্বলে। ইট পোড়ে। মাটি, খড়ি, ইট বোঝাই করে ট্রাকের পর ট্রাক আসে। ধুলো আর ধোঁয়া প্রচুর। এর মধ্যেই চলে শিক্ষার্থীদের আসা-যাওয়া, পড়াশোনা আর খেলাধুলা।

তল্লাবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির তিন পাশেই রাস্তা। মাগুরা সদর থেকে মহম্মদপুর উপজেলায় যাওয়ার পথে চোখে পড়ে স্কুলটি। ২০০১ সালে চালু হয় এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তখন থেকেই স্কুলের পাশে ইটভাটা। এস এন ব্রিকস নামে ওই ইটভাটার পাশেই এস এন টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড বি এম কলেজ নামে আরও একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে।

তল্লাবাড়িয়া স্কুলের ক্লাসে গিয়ে দেখা গেল, শিক্ষার্থীদের জানালা ঘেঁষে ইটের সারি। কিছু ইট পোড়ানো হয়েছে, কিছু রয়েছে পোড়ানোর অপেক্ষায়। শিক্ষার্থীরা জানায়, কিছুক্ষণ পরপর ধুলোর আস্তরণ পড়ে বই ও বেঞ্চের ওপর। যান চলাচলের শব্দে কানে তালা লাগে।

ইটভাটার কারণে অসুবিধা হয় কি না, জানতে চাইলে স্কুলের সহকারী শিক্ষক নাজনীন আক্তার বললেন, অসুবিধা তো অবশ্যই হয়। ইটভাটার পাশাপাশি রাস্তা থেকে প্রচুর ধুলাবালি আসে।

ইটভাটার সহকারী ম্যানেজার হাবিবুর রহমান জানান, এই ভাটায় তিন লাখ ইটের ধারণক্ষমতা রয়েছে। প্রতিদিন গড়ে সাড়ে তিন শ মণ জ্বালানি কাঠ লাগে।

তল্লাবাড়িয়া এস এন টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড বি এম কলেজের পাশেই রাখা হয়েছে ইটভাটার মাটির স্তূপ। ছবি: কাজী আশিক রহমান

ইটভাটার আরেক পাশেই তল্লাবাড়িয়া এস এন টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড বি এম কলেজের ভবন ও মাঠ। মূল ভবন ঘেঁষে নতুন ইট তৈরির কাজ চলছে। পাশেই মাটির স্তূপ। মাটির পাহাড়ে প্রায় ঢাকা পড়েছে শহীদ মিনার। কলেজ মাঠের ওপর দিয়েই চলছে মাটি ও কাঁচা ইট আনা–নেওয়ার কাজ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেল, হাজি সাহাবুদ্দিন মোল্লা নামে সত্তরোর্ধ্ব এক ব্যক্তি ভাটার মালিক ও দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জায়গা দিয়েছেন। তিনি জানালেন, ২০০০ সালে প্রথমে ইটভাটা করা হয়। ২০০১ সালে তাঁর দান করা ৩৩ শতাংশ জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় প্রাথমিক বিদ্যালয়। পরে এটি সরকারীকরণ হয়। ২০১০ সালে দেড় একর জায়গা দান করেন টেকনিক্যাল কলেজে। কলেজের তিনটি ভবনের দুটি তাঁদের পরিবারের অর্থায়নে করা।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে ইটভাটা শিক্ষার্থীদের জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে কি না, জানতে চাইলে সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘স্কুলের জমি দিলাম মহৎ উদ্দেশ্যে। যদি ক্ষতিকর হয়, আমি অবশ্যই ভাটা সরাই নেব।’ অন্য একটি জায়গায় ভাটা সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

তল্লাবাড়িয়া এস এন টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড বি এম কলেজের শহীদ মিনারের পাশে রাখা হয়েছে ইটভাটার মাটির স্তূপ। ছবি: কাজী আশিক রহমান

ইটভাটার বৈধতার বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের যশোর অঞ্চলের সহকারী বায়ো-কেমিস্ট নিখিল চন্দ্র ঢালী বলেন, ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন আইন ২০১৩ অনুযায়ী, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এক কিলোমিটারের মধ্যে কোনো ভাটা স্থাপন করা যাবে না। যেসব ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে কাঠ পোড়ানো হয় তারও বৈধতা পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

তল্লাবাড়িতে প্রথমে ইটভাটাটি হয়েছে। পরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দুটি হয়েছে। ইটভাটার পাশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনুমোদনের বিষয়ে জানতে চাইলে মাগুরা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রণজিৎ কুমার মজুমদার বললেন, এমন জায়গায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনুমোদন পাওয়ার কথা নয়। কিন্তু ১৮ বছর আগে ওই প্রতিষ্ঠানটি কীভাবে, কাদের পরিদর্শনে অনুমোদন পেয়েছে, সে বিষয়ে তিনি অবগত নন।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে ইটের স্তূপ রাখা হয়েছে। ছবি: কাজী আশিক রহমান

মহম্মদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসিফুর রহমান জানিয়েছেন, নতুন পদায়ন হওয়ায় এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা ইটভাটার বিষয়ে তিনি এখন পর্যন্ত কিছু জানেন না। তবে বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

মাগুরা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস বলছে, তারা বিষয়টি জানেন। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কুমারেশ চন্দ্র গাছি বলেন, তাঁদের অভিযোগের ভিত্তিতে সাবেক জেলা প্রশাসক মো. আতিকুর রহমান ভাটা সরানোর বিষয়ে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তবে গত বছর তাঁর বদলির পর বিষয়টি স্থগিত হয়ে যায়। এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বর্তমান জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলোচনা করবেন।