সৌদি আরব থেকে বীজ নিয়ে এসে বরেন্দ্রভূমিতে ‘সাম্মাম’ চাষ করে সফল হয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার মনিরুল ইসলাম। জেলায় এই প্রথমবারের মতো ফলটি পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করে আশাব্যঞ্জক ফলাফল পেয়েছেন তিনি। আগামী বছর তিনি বাণিজ্যিকভাবে এর চাষাবাদ করবেন।
মনিরুল ইসলাম জানান, তিনি ১৬ বছর ধরে সৌদি আরবের রিয়াদে গাড়িচালকের কাজ করার পর দেশে ফিরে এসে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া জমিতে কৃষিকাজ করবেন বলে মনস্থির করেন। ধান চাষ না করে কোনো নতুন ফলের চাষ করার কথা মাথায় আসে তাঁর। সৌদি আরব ও এর আশপাশের দেশের অত্যন্ত জনপ্রিয় ফল সাম্মামের কথা তখন মনে আসে তাঁর। তিনি সৌদি আরব থেকে সাম্মাম ফলের দুটি ও পরে কুয়েতপ্রবাসী এক আত্মীয়ের মাধ্যমে আরও দুটি জাতের সাম্মাম ফলের বীজ সংগ্রহ করেন। তিন মাস আগে বরেন্দ্র এলাকার চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার ঝিলিম ইউনিয়নের ডাকুইর এলাকার জমিতে সাম্মামের চার প্রজাতির ফল চাষ করেন তিনি। ফলটির আশানুরূপ উৎপাদন হয়েছে। পাশাপাশি খেতেও সুস্বাদু হয়েছে। এ কারণে আশপাশের চাষিদের মধ্যেও এটি আগ্রহের সৃষ্টি করেছে।
সম্প্রতি মনিরুল ইসলামের সাম্মামখেতে গিয়ে দেখা গেছে, লতানো গাছে মাটিতে ধরে আছে অনেক ফল। মনিরুল বলেন, প্রথম বছর পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করার কারণে মাটিতে ফল নিয়েছেন। এতে আগাছায় ছেয়ে গেছে খেত। তারপরও ফলন ভালো হয়েছে। দেড় বিঘা জমিতে ফলন হয়েছে ১০০ মণের বেশি। সামনের বছর তিনি সাম্মামের জমিতে টাল দেবেন। এই টালের ওপর ফলন যেমন ভালো হবে, তেমনি ভালো হবে মানও।
মনিরুল ইসলাম জানান, একেকটি ফল এক কেজি থেকে তিন কেজি পর্যন্ত হয়েছে। এই চার প্রজাতির মধ্যে একটির রং পুরো হলুদ, দুটির রং সবুজ, ত্বক জালিকার মতো। অপরটি ডোরাকাটা। এর মধ্যে ডোরাকাটার মতো ফলটির স্বাদ পাকা পেঁপের মতো। অন্যগুলো সাদা ও সবুজের মিশেল। সব কটিই সুস্বাদু ও সুগন্ধযুক্ত।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের উপপরিচালক উদ্যানতত্ত্ববিদ সাইফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বাঙ্গিজাতীয় এ ফলকে রক মেলনও বলা হয়ে থাকে। চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রথমবারের মতো এর উৎপাদন আশাব্যঞ্জক হয়েছে। স্বাদ ও সুগন্ধেও ফলটি আকর্ষণীয়। দেশি বাঙ্গির মতো পানসে ভাব নেই। মিষ্টতা মেপে দেখা গেছে, ৮ থেকে ১০ শতাংশ। এ ফলে পর্যাপ্ত পরিমাণ বিটা ক্যারোটিন রয়েছে, যা কমলার চেয়ে ২০ ভাগ বেশি। এ ছাড়া প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সিও আছে এই ফলে। আরও আছে পটাশিয়াম, ফলিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, জিঙ্ক, কপার, ম্যাঙ্গানিজ, ম্যালেনিয়াম প্রভৃতি। এ ফল অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। অর্থাৎ রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়।
সাইফুর রহমান বলেন, সৌদি আরব ও আশপাশের দেশগুলোতে এর চাষ হলেও আমাদের এই আবহাওয়ায় ফলটি মানিয়ে নিয়েছে। এখানে এ ফল চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে।