সতর্কতা দুই নৌপথে লঞ্চ চলাচল বন্ধ

ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে লঞ্চ চলাচল নিষিদ্ধ ছিল। এই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে গতকাল দৌলতদিয়া ঘাট থেকে লঞ্চ ছেড়েছে। ছবি: প্রথম আলো
ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে লঞ্চ চলাচল নিষিদ্ধ ছিল। এই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে গতকাল দৌলতদিয়া ঘাট থেকে লঞ্চ ছেড়েছে।  ছবি: প্রথম আলো

ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে ঢাকা ও দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে যোগাযোগের দুই গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি ও পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ায়। শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌপথে গতকাল শনিবার ফেরি-লঞ্চসহ সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও লঞ্চসহ অন্যান্য নৌযান বন্ধের ঘোষণা দেয় ঘাট কর্তৃপক্ষ। তবে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে চলছিল লঞ্চ।

 ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে গত শুক্রবার থেকেই থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। গতকাল বৃষ্টিপাতের পরিমাণ আরও বেড়ে যায়। একই সঙ্গে উত্তাল হয়ে ওঠে পদ্মা নদী। এতে করে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ও মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি এবং মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ও রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া নৌপথে নৌযান চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে।

বিআইডব্লিউটিসি কাঁঠালবাড়ি ঘাট সূত্র জানায়, পদ্মা কিছুটা উত্তাল হয়ে ওঠায় শুক্রবার বিকেল থেকেই তারা লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচল বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়। তবে ফেরি চলাচল কিছুটা স্বাভাবিক ছিল। গতকাল সকালেও ১০-১২টি ফেরি স্বল্পসংখ্যক যানবাহন নিয়ে চলাচল করছিল। কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ের কারণে মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর আর চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৯ নম্বর মহাবিপৎসংকেত দেখাতে বলা হয়। এমনকি কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌপথের ক্ষেত্রে ৩ নম্বর বিপৎসংকেত দেখানো হয়। এই এলাকায় মাঝেমধ্যে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির সঙ্গে দমকা বাতাস বইতে শুরু করে। এ অবস্থায় বেলা সাড়ে ৩টার পর থেকে সব ধরনের নৌপথ ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেয় ঘাট কর্তৃপক্ষ।

বিআইডব্লিউটিসি কাঁঠালবাড়ি ঘাটের ব্যবস্থাপক আবদুল আলিম বলেন, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে পদ্মা নদী কিছুটা উত্তাল রয়েছে। মাঝনদীতে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির সঙ্গে দমকা বাতাস বইতে বইছে। ঘূর্ণিঝড়টি উপকূলে আঘাত হানলে দেশের নদ-নদীগুলোতেও জোয়ার আসবে। জলোচ্ছ্বাসের মাত্রা বেশি হলে নৌপথে চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে। এ কারণে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। আবহাওয়া অফিস থেকে পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে।

এদিকে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌপথে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েন শত শত যাত্রী ও যানবাহনের কর্মীরা। ঘাট এলাকায় আটকা পড়ে আছে শতাধিক যানবাহন। অনেক যাত্রী ঘাটে এসে পারাপার না হতে পেরে ফিরে গেছেন আগের গন্তব্যে।

ঢাকাগামী একটি বাসের যাত্রী সেকেন্দার জহির বলেন, ‘আমি বেলা ১টার দিকে ঘাটে এসে দেখি, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। ঘাটে তেমন ফেরি নেই। কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষার পরে একটি ফেরি পেয়েছি। নদীতে অনেক ঢেউ। এর মধ্যেই ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে পেরেছি।’

কাঁঠালবাড়ি ঘাটের ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (টিআই) নাসিরউদ্দিন সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত শুক্রবার থেকে আবহাওয়া খারাপ থাকায় ঘাটে যানবাহনের চাপ কম। নতুন যেসব গাড়ি ঘাটে আসছে, আমরা সেগুলো ফিরিয়ে দিচ্ছি। অল্প কিছু বড় যানবাহন আমরা টার্মিনালে রেখেছি।’

নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও চলেছে লঞ্চ

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে গতকাল দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথ কিছুটা উত্তাল ছিল। এরপরও ফেরি পারাপার স্বাভাবিক ছিল। তবে দুর্ঘটনা এড়াতে কর্তৃপক্ষ গতকাল বেলা তিনটা থেকে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়। কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে লঞ্চ চলাচল অব্যাহত ছিল। বিকেল চারটার দিকে দৌলতদিয়া লঞ্চঘাটের পন্টুনে বিআইডব্লিউটিএর আরিচা কার্যালয়ের ট্রাফিক পরিদর্শক আফতাব উদ্দিনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। তাঁর উপস্থিতিতেই ৪টা ৪০ মিনিটের মধ্যে একে একে তিনটি লঞ্চ পাটুরিয়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। একইভাবে পাটুরিয়া থেকেও দুটি লঞ্চ এসে দৌলতদিয়া ঘাটে পৌঁছায়।