শরীয়তপুরের মনাই হাওলাদারকান্দি গ্রামে নির্মাণ করা বাঁশের তৈরি ভাসমান ‘স্বপ্নের বাড়ি’ এবার বিশ্বজয় করল। দুর্যোগের ঝুঁকি মোকাবিলায় এই বাড়ির নকশা বিশ্ব ঝুঁকি পুরস্কার-২০১৯ পেয়েছে। গতকাল শুক্রবার সুইজাল্যান্ডের জেনেভায় দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাসবিষয়ক বিশ্ব সম্মেলনে এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। বাড়িটির নকশাকার ও পরিকল্পনাকারী যুক্তরাজ্যের ডান্ডি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. নন্দন মুখার্জি। বাংলাদেশি এই প্রকৌশলীর হাতে পুরস্কারটি তুলে দেন জাতিসংঘ মহাসচিবের দুর্যোগবিষয়ক বিশেষ সহকারী মামি মিজোতরি।
২০১২ সাল থেকে জাতিসংঘের দুর্যোগবিষয়ক বিশ্ব সম্মেলনে প্রায় এক কোটি টাকা মূল্যমানের ওই পুরস্কার দেওয়া হয়। ৪৮টি দেশে ১০৪টি আবেদন থেকে বাছাই শেষে ওই বাড়ির প্রযুক্তিকে পুরস্কারের জন্য চূড়ান্তভাবে মনোনীত করা হয়। এই বাড়িকে দুর্যোগসহিষ্ণু বাড়ির মডেল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন পুরস্কারের বিচারকমণ্ডলী। বাড়িটি নির্মাণের প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য প্রাতিষ্ঠানিকভাবে যুক্ত ছিল ডান্ডি বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান রেজিলিয়েনস সলিউশন।
বিচারকমণ্ডলী থেকে বলা হয়, বাড়িটি বন্যায় ডুববে না, ভূমিকম্পে হেলবে না, ঝড়ে উড়ে যাবে না। অর্থাৎ বাংলাদেশে আঘাত হানতে পারে, এমন বেশির ভাগ বড় দুর্যোগ থেকে বাড়িটি তার অধিবাসীদের রক্ষা করবে। এর আগে ২০১২ সালে মোজাম্বিক, ২০১৪ সালে চিলি, ২০১৫ সালে ভারত, ২০১৭ সালে নেপাল ওই পুরস্কার পেয়েছিল।
পুরস্কার পাওয়ার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে সুইজারল্যান্ডের জেনেভা থেকে মুঠোফোনে বাংলাদেশি গবেষক নন্দন মুখার্জি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাড়িটি একই সঙ্গে পরিবেশবান্ধব ও স্বল্প খরচে নির্মাণ সম্ভব। এখান থেকে কোনো কার্বন নিঃসরিত হবে না। আমরা পুরস্কারের পুরো টাকা দিয়ে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় বহুমুখী ব্যবহার সম্ভব, এমন আরও বাড়ি নির্মাণ করে দেব। আর বাড়িটি নির্মাণের খরচ যাতে আরও কমানো যায়, সে জন্য গবেষণা করব।’
গত ১৮ আগস্ট প্রথম আলোতে বাড়িটি নিয়ে ‘বন্যায় ডুববে না স্বপ্নের বাড়ি’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এরপর বাংলাদেশসহ বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ গণমাধ্যমে ওই বাড়িটি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চের (সিথ্রিআর) ওই বাড়ি নির্মাণ প্রকল্পের সঙ্গে ছিল।
আরও পড়ুন:
বন্যায় ডুববে না স্বপ্নের বাড়ি