>
- রোহিঙ্গাদের রান্নার জন্য জ্বালানির ব্যবস্থা করা হচ্ছে না
- জ্বালানি জোগাড় করতে রোহিঙ্গারা বনের গাছ কাটছে
- বনের গাছ কাটার পাশাপাশি শিকড়ও তুলে ফেলছে রোহিঙ্গারা
- এভাবে গাছ কাটলে উখিয়া-টেকনাফের বন উজাড় হয়ে যাবে
রোহিঙ্গাদের চাপে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের পরিবেশ, বনভূমি ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। রোহিঙ্গা বসতির কারণে গত এক বছরে প্রায় ৬ হাজার একর বন ধ্বংস হয়ে গেছে। টাকার অঙ্কে ক্ষতির পরিমাণ ৫৪৯ কোটি ৬০ লাখ।
বন অধিদপ্তর বলছে, রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন ধরনের ত্রাণ দেওয়া হলেও রান্নার জন্য জ্বালানির ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। ফলে প্রতিদিন তারা বনের গাছ কাটার পাশাপাশি শিকড়ও তুলে ফেলছে। এভাবে চলতে থাকলে উখিয়া ও টেকনাফের বন পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে। বন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ে এক প্রতিবেদন পাঠিয়ে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়েছে।
জানতে চাইলে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল্লাহ আল মোহসীন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা শুধু আমাদের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি তুলে ধরতে পারি। এর বাইরে আমাদের এখন আর করার কিছু নেই। পরিস্থিতিও তেমন নেই। যদি কিছু করার থাকে, করবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।’
বন বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, কক্সবাজার জেলার পাহাড়গুলো প্রধানত নরম ও দোআঁশ মাটির হওয়ায় মাটির কাঠিন্য বা দৃঢ়তা কম। ফলে টানা কয়েক দিন বৃষ্টি হলে পাহাড়ধসের আশঙ্কা বেড়ে যায়। গত বর্ষা মৌসুমেও পাহাড়ধসে অনেক ক্ষতি হয়েছে। উখিয়া ও টেকনাফে পাহাড় ও বনভূমি কেটে অপরিকল্পিত রোহিঙ্গা বসতি গড়ে তোলায় বর্ষায় পাহাড়ধসের আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া রোহিঙ্গা বসতির কারণে হাতির আবাসস্থল ও বিচরণক্ষেত্র ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। হাতি ও মানুষের মধ্যে সংঘাত দিন দিন বাড়ছে। হাতির আক্রমণে এ পর্যন্ত ১২ জন রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে বলে বন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
বন অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের জন্য কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগ নিয়ন্ত্রণাধীন উখিয়া ও টেকনাফের ৫ হাজার ৮৩৫ একর বনভূমি ব্যবহৃত হচ্ছে, যার প্রায় পুরোটাই উজাড় হয়ে গেছে। এর মধ্যে ২ হাজার ২৪ একর সৃজিত বন (প্রধানত সামাজিক বনায়ন) এবং ৩ হাজার ৮১১ একর প্রাকৃতিক বন। এ পর্যন্ত ৮ লাখ ৭২ হাজার ৮৮০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থী বনাঞ্চলে বসতি স্থাপন করেছে। রোহিঙ্গারা উখিয়ার কুতুপালং, বালুখালী, বালুখালী ঢালা, ময়নারঘোনা, তাজনিম-খোলা, মক্করার বিল, হাকিমপাড়া, জামতলি বাঘঘোনা, শফিউল্লাকাটা এবং টেকনাফের পুটিবুনিয়া ও কেরানতলী এলাকায় বন বিভাগের গেজেটভুক্ত বনভূমিতে অস্থায়ী বসতি স্থাপন করেছে।
রোহিঙ্গা শিবির স্থাপন নিয়ে জাতিসংঘ উন্নয়ন তহবিলের (ইউএনডিপি) ‘দ্রুত পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের শিবিরগুলো প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন স্বীকৃত তিনটি এলাকার প্রকৃতি ধ্বংস করছে। এগুলো হচ্ছে টেকনাফ উপদ্বীপের উপকূল এলাকা, সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ও সোনাদিয়া দ্বীপ। এ ছাড়া শিবিরগুলোর কাছে আছে দুটি সংরক্ষিত এলাকা-হিমছড়ি ন্যাশনাল পার্ক ও টেকনাফ অভয়ারণ্য। প্রস্তাবিত ইনানি ন্যাশনাল পার্কও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।