>
ওয়াসা রাস্তা কাটবে ২০২১ সাল পর্যন্ত। নগরের প্রায় সব রাস্তায় চলছে খোঁড়াখুঁড়ি। যানচলাচল বিঘ্নিত। ধুলাবালুতে ঢেকে যাচ্ছে সড়ক।
নগরের সড়কগুলোর ব্যাপক খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছে নগরবাসী। ওয়াসার পাইপলাইন স্থাপনের জন্য খোঁড়াখুঁড়ির কারণে যানচলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। বাতাসেও উড়ছে ধুলাবালু। তবে আগামী সপ্তাহ থেকে কেটে ফেলা রাস্তার ভরাট ও কার্পেটিং কাজ শুরু করবে সিটি করপোরেশন।
ওয়াসা সূত্র জানায়, আগামী ২০২১ সাল পর্যন্ত চলবে পাইপলাইন স্থাপনের কাজ। একই সঙ্গে চলছে খোঁড়াখুঁড়ি। মদুনাঘাট পানি শোধনাগার প্রকল্পের আওতাধীন নগরের বহদ্দারহাট থেকে কাস্টমস মোড় পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপনের বাকি কাজ শুরু করেছে ওয়াসা। ঈদ ও বর্ষা মৌসুমের মধ্যে নগরের আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ সড়ক কাটা হবে। এ জন্য আরও দুর্ভোগ পোহাতে হবে নগরবাসীকে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম ফজলুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ৬৫০ কিলোমিটারের মধ্যে ৪৫০ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপনের কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। বাকি ১৫০ কিলোমিটারের কাজ চলছে। এ জন্য নগরবাসীর একটু সমস্যা হচ্ছে।
ফজলুল্লাহ আরও বলেন, ‘আসলে নগরবাসী দীর্ঘদিন পানি সমস্যায় ভুগছিল। পানিসংকট দূর করতে ওয়াসা বড় বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে খোঁড়াখুঁড়ি চলার কথা। কিন্তু মানুষের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে আমরা কাজের গতি বাড়িয়েছি। মেয়াদের আগেই আমরা প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ শেষ করতে চাই। এরপর নগরবাসীর দীর্ঘদিনের পানি সমস্যা কেটে যাবে।’
সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরের ডিসি হিলের সড়কের দুই পাশ কেটে পাইপলাইন স্থাপন করা হয়েছে। ফলে গাড়ির চাকা ঘোরার সঙ্গে উড়ছে ধুলাবালু। শুধু ডিসি হিলের সড়ক নয়, লাভ লেইন, ষোলশহর থেকে চকবাজার, জিইসি থেকে লালখান বাজারসহ সর্বত্র সড়কের খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম-হাটহাজারী ও চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের কুয়াইশ, নজুমিয়া হাট, নেয়ামত আলী এবং মদুনাঘাট এলাকায় রাস্তার মাঝখানে বড় বড় গর্ত করে ওয়াসার পাইপলাইনের পরীক্ষা করা হচ্ছে।
রোজার মাসে গুরুত্বপূর্ণ এসব সড়ক খোঁড়াখুঁড়ির কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে। ফলে যানজটসহ নানা দুর্ভোগ এখন স্থায়ী রূপ নিয়েছে। উন্নয়নকাজে ধীরগতি এবং সেবা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণেই জনদুর্ভোগ বাড়ছে বলে মনে করেন নগর পরিকল্পনাবিদেরা। আর এর খেসারত দিতে হচ্ছে নগরবাসীকে।
নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মজুমদার এ প্রসঙ্গে বলেন, সমন্বয়হীনতার কারণে বিভিন্ন সময় রাস্তা কাটাকাটি হচ্ছে। এ জন্য জাতীয়ভাবে প্রকল্প অনুমোদন এবং অর্থ ছাড়ের সমন্বয়হীনতা মূলত দায়ী। নগর সরকার প্রথা চালু করে সেবাদান প্রতিষ্ঠানগুলোকে এক ছাতার নিচে নিয়ে এলে এই সমস্যা থাকবে না।
দেলোয়ার মজুমদার আরও বলেন, ওয়াসা যেভাবে রাস্তা কাটছে তাতে জনদুর্ভোগ কম হচ্ছে। ওয়াসার সঙ্গে বিভিন্ন টেলিফোন কোম্পানিগুলো শহরজুড়ে রাস্তা কাটছে। এ কারণে নগরে ধুলাবালু উড়ছে।
সরেজমিনে আরও দেখা গেছে, সিটি করপোরেশন সম্প্রতি গুরুত্বপূর্ণ অনেকগুলো সড়ক কার্পেটিংয়ের মাধ্যমে গাড়ি চলাচলের উপযোগী করে তুলেছিল। এতে নগরবাসীর মধ্যে কিছুটা স্বস্তিতে ফিরে আসে। আবার নতুন করে খোঁড়াখুঁড়ি শুরু হওয়ায় জনদুর্ভোগ বেড়েছে।
লালখান বাজারের বাসিন্দা নুরুল আলম বলেন, একই সড়কের একই মোড়ে পাঁচ–সাতবার পর্যন্ত রাস্তা কাটা হয়েছে। বারবার রাস্তা কাটার কারণে ধুলাবালু উড়ছে। স্বস্তির নিঃশ্বাস নেওয়ার কোনো উপায় নেই। এ অবস্থা থেকে কবে মুক্তি আসবে জানি না।
সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, পানির পাইপলাইন বসাতে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি হচ্ছে। এটাও একটা উন্নয়নমূলক কাজ। কিন্তু এতে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। নগরের যেসব রাস্তা কাটা হয়েছে, তা দ্রুত সময়ের মধ্য গর্ত ভরাট ও কার্পেটিংয়ের কাজ শুরু করবে সিটি করপোরেশন। এরপর মানুষের এই দুর্ভোগ আর থাকবে না।