করোনাভাইরাস মহামারিতে বিপর্যস্ত গোটা বিশ্ব। বাঁচার উপায় খুঁজতে ব্যতিব্যস্ত মানুষ। প্রাণিকুল এদিক থেকে অনেকটা নির্ভার। আপন নিয়মে তাদের দিন কাটছে নিজস্ব পরিবেশে। চিড়িয়াখানাও এখন জনমানবশূন্য। উপদ্রবহীন সময় পার করছে পশুপাখিরা। এমন একটা সময়ে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় বেঙ্গল টাইগার পরিবারে এসেছে তিন নতুন অতিথি। রাজ ও পরি এই তিন শাবকের বাবা-মা।
গত বৃহস্পতিবার তিনটি শাবক প্রসব করে পরি। বিষয়টি গোপন রাখা হয় এত দিন। তিনটিরই গায়ের রং লাল। জন্মের পর আলাদা খাঁচায় মা ও তিন শাবকের জায়গা হয়েছে। সেখানে সদ্যোজাত সন্তানদের পরম মমতায় আগলে রেখেছে মা। আশপাশে কর্মীদের কেউ গেলে রুদ্রমূর্তি ধারণ করে হুংকার দিচ্ছে পরি।
চিড়িয়াখানার কিউরেটর শাহাদাত হোসেন বলেন, তিনটি বাচ্চা প্রসব করেছে পরি। এখনো তাদের লিঙ্গ নির্ধারণ করা যায়নি। আরও কিছুদিন পর তা বোঝা যাবে। এর আগেও দুবার বাচ্চা প্রসব করেছিল সে। সেগুলো থেকে তিনটি বেঁচে আছে। এই তিনটিসহ তার সন্তানসংখ্যা এখন মোট ৬।
২০১৬ সালের নভেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় রাজ ও পরিকে আনা হয়েছিল। ২০১৮ সালের ১৯ জুলাই পরি প্রথম তিনটি বাচ্চা প্রসব করে। একটি পরদিন মারা যায়। বেঁচে থাকা দুটির মধ্যে একটি বিরল সাদা বাঘ, নাম শুভ্রা। অপরটির নাম জয়া। এরপর ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে আবার বাচ্চা প্রসব করে পরি। ওই মেয়ে শাবকটির নাম দেওয়া হয়েছে করোনা।
আগের তিন শাবক বড় হয়ে গেছে। চার দিন আগে জন্ম নেওয়া নতুন তিন অতিথি তাদেরই ভাইবোন। আগের বাচ্চাগুলোর মতো পরি আগলে রেখেছে নতুনদেরও। সারাক্ষণ শাবকদের আদরযত্ন নিয়ে ব্যস্ত সে। সদ্যোজাত সন্তানদের দুধ খাওয়ানো, গায়ে বিলি কাটা—কী না করছে মা পরি।
অথচ পাশে পরির মেয়ে জয়ার খাঁচায় পুরোপুরি উল্টো চিত্রের দেখা মেলে। জয়াও এ পর্যন্ত দুবার মাতৃত্বের স্বাদ পেয়েছে। কিন্তু পরির মতো তার মধ্যে এখনো মাতৃস্নেহের দেখা মেলেনি। ৭ মে দুটি শাবকের জন্ম দেয় জয়া। কিন্তু আদরযত্ন ও দুধের অভাবে দুইদিনের মধ্যে দুটিই মারা যায়।
এর আগে গত নভেম্বরে প্রথম তিনটি বাচ্চার জন্ম দিয়েছিল জয়া। তখনো ঠিকমতো যত্ন নিত না জয়া। সেগুলোর মধ্যেও দুটি মারা যায়। একটি বাচ্চাকে মায়ের খাঁচা থেকে বের করে বড় করার দায়িত্ব নিয়েছিলেন কিউরেটর শাহাদাত হোসেন ও চিড়িয়াখানার কর্মীরা। নিজের হাতে দুধ খাওয়ানো, গোসল করানো, শিকার ধরতে শেখানোসহ সব তালিম দিয়েছেন তাঁরা। তার নাম রাখা হয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নামে। সপ্তাহখানেক আগে বাইডেনকে পৃথক একটি খাঁচায় রাখা হয়। এখন সে স্বাবলম্বী, নিজের খাবার নিজেই খেতে পারে।
শাহাদাত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘জয়া ঠিকমতো শাবকদের যত্ন করে না। মারমুখী আচরণ করে। যার জন্য বাইডেনকে আলাদা করে কোনোরকমে বাঁচাতে পেরেছিলাম। এবারও জয়া দুটি বাচ্চাকে খাবার দেয়নি। যত্ন করেনি। এর মধ্যে মাতৃত্বসুলভ আচরণ গড়ে ওঠেনি এখনো। অথচ পরি নতুন তিনটি শাবককে আগলে রেখেছে।’
রাজ ও পরি থেকে সাড়ে চার বছরেই চিড়িয়াখানায় বাঘের সংখ্যা এখন ৯টিতে পৌঁছেছে। সমস্যা কেবল একটিই, একই পরিবারভুক্তদের মধ্যে ব্রিডিং। ভবিষ্যতে ক্রস ব্রিডিংয়ের জন্য অন্য কোনো চিড়িয়াখানার সঙ্গে বাঘ আদান–প্রদানে পরিকল্পনা আছে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার।