খাঁচার ভেতর মায়ের সঙ্গে খেলছে বাঘশাবকটি। কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে খাঁচাটি। পর্দা তুলে কেউ উঁকি দিলেই রুদ্র মূর্তি ধারণ করে মা বাঘ পরি। সে বুঝি ভয় পায়! সে কি ভাবছে তার ২৫ দিনের শাবকটিকে কেড়ে নেবে কেউ? আরেকটু এগিয়ে যায় কেউ। এগোলে শাবকটিকে মুখে নিয়ে খাঁচার ভেতরের আরেকটি ছোট খাঁচায় ঢুকিয়ে দেয় পরি।
মা ও সন্তানের এই ভালোবাসাবাসির দেখা পাওয়া গেল চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার বাঘের খাঁচায়। চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার বেঙ্গল টাইগার রাজ–পরির পরিবারে নতুন অতিথি এসেছে। সে এখন একটু একটু করে বড় হচ্ছে। ২৫ দিনের এই বাচ্চাটির এখন সময় কাটে মা পরির সঙ্গে। এটা মেয়ে শাবক। এই শাবকের সঙ্গে জন্মেছিল আরেকটি শাবক। কিন্তু সেই শাবকটি জন্মের দুই দিন পর মারা যায়।
কেন মারা গেল শাবকটি? খোঁজ নিয়ে জানা গেল, সেটি জন্মগতভাবে ছিল দুর্বল। আর দুধ না পাওয়ায় বাচ্চাটি মারা যায় বলে জানান চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার কিউরেটর শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, ‘বাচ্চাটি দুর্বল ছিল। তাই মারা গেছে। তবে আরেকটি সুস্থ রয়েছে। এটা মেয়ে শাবক। বড় হয়ে উঠছে।’
বাঘের খাঁচাটি এখনো দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়নি। একটি বাচ্চা হারানোর কারণেই কিনা কে জানে, মা বাঘ পরি একেবারেই মানুষ পছন্দ করছে না। কাউকে কাছে যেতে দেখলে সে বাচ্চাটিকে মুখে নিয়ে নিচ্ছে। বিপদ হতে পারে—এই শঙ্কায় বড় খাঁচার ভেতর থাকা অপর একটি ছোট খাঁচায় ঢুকিয়ে দিচ্ছে।
পাশে রয়েছে আরেকটি খাঁচা। শাবকটির বাবা রাজ এবং অপর দুই মেয়ে শাবক শুভ্রা ও জয়া রয়েছে সেখানে।
২০১৮ সালের জুলাই মাসে এই দুটি বাঘ শাবকের জন্ম দেয় পরি। তাদের মধ্যে একটি বিরল প্রজাতির সাদা বাঘ।
কিউরেটর শাহাদাত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘চিড়িয়াখানায় এখন বাঘের সংখ্যা পাঁচটি। নতুনটির এখনো নাম রাখা হয়নি। আরও বড় হলে অন্যদের সঙ্গে দেওয়া হবে।’
২০১৬ সালের ৯ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে বেঙ্গল টাইগার প্রজাতির দুটি বাঘ আনা হয়েছিল। বাঘ দুটির বয়স তখন ছিল এক বছরের কম। এই দুটির নাম রাখা হয় রাজ ও পরি। বর্তমানে পাঁচটি বাঘ একই পরিবারের সদস্য।
১৯৮৯ সালে ফয়’স লেক এলাকায় চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর ২০০৩ সালে ঢাকা থেকে সেখানে দুটি বাঘ আনা হয়েছিল। চন্দ্র ও পূর্ণিমা নামের ওই দুটি বাঘ পরে মারা যায়।
বর্তমানে চিড়িয়াখানায় ৬৭ প্রজাতির তিন শতাধিক পশুপাখি রয়েছে।