রাঙামাটির চিড়িয়াখানায় ভালুক 'জাম্বুর' যত দুঃখ

১৫ বছর ধরে সঙ্গীহীন একাকী ভালুকটি। আছে খাদ্য খাবারের কষ্টও রাঙামাটি শহরের সুখীনীলগঞ্জ এলাকার মিনি চিড়িয়াখানায় গত রোববার দুপুরে। সুপ্রিয় চাকমা
১৫ বছর ধরে সঙ্গীহীন একাকী ভালুকটি। আছে খাদ্য খাবারের কষ্টও রাঙামাটি শহরের সুখীনীলগঞ্জ এলাকার মিনি চিড়িয়াখানায় গত রোববার দুপুরে।  সুপ্রিয় চাকমা

মূলত ফল, লতা-পাতা আর মাংস হচ্ছে ভালুকের খাবার। কিন্তু দেওয়া হয় ভাত ও দুধ—আবারও তা পর্যাপ্ত নয়। প্রতিদিন এক লিটার দুধ ও দেড় কেজি চালের ভাত খাওয়ানো হয়। মাঝেমধ্যে তাও খায় না ভালুক। আর রাখা হয়েছে একটি জরাজীর্ণ ঘরে।

রাঙামাটির মিনি চিড়িয়াখানায় এভাবেই ১৭ বছর কাটিয়ে দিয়েছে ভালুক ‘জাম্বু’। চিড়িয়াখানায় কর্মরত পরিচর্যাকারীরা এই নাম দিয়েছেন। একসময় একজন সঙ্গী থাকলেও তা মারা গেছে ১৫ বছর আগে। এখন অযত্নে-অবহেলায় নিঃসঙ্গ দিন কাটছে জাম্বুর। 

২০০২ সালে রাঙামাটি জেলা পরিষদের উদ্যোগে শহরের সুখী নীলগঞ্জ এলাকায় এ মিনি চিড়িয়াখানা প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের বন্য প্রাণী। কর্মরতদের কেউ বন্য প্রাণী বিষয়ে অভিজ্ঞ নন। আবার সরকারি অনুমতি ছাড়াই গড়ে উঠেছে এই চিড়িয়াখানা। অব্যবস্থাপনার কারণে দর্শনার্থীর উপস্থিতিও কম।

চিড়িয়াখানা সূত্রে জানা গেছে, এই মিনি চিড়িয়াখানা দেখা-শোনা, প্রাণীদের খাদ্য ও পরিচর্যা করার জন্য পাঁচজন কর্মী রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে একজন নৈশপ্রহরী। অন্য চারজন পালাক্রমে প্রাণীদের খাবার দেওয়া এবং চিড়িয়াখানা পরিচর্যার কাজ করেন। তবে তাঁরা কেউ স্থায়ী নন। তাঁরা পার্বত্য জেলা পরিষদ থেকে প্রেষণে এসেছেন।

বন বিভাগের বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চলের বনসংরক্ষক মিহির কুমার দো প্রথম আলোকে বলেন, যেকোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি কিছু বিদেশি প্রাণী পালন করতে পারে। কিন্তু দেশীয় কোনো বন্য প্রাণী পালন করা নিষেধ। কোনো চিড়িয়াখানাকেই এ রকম অনুমতি দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।

জেলা পরিষদ সূত্র জানায়, চিড়িয়াখানা প্রতিষ্ঠার পরপরই রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের দুর্গম বন থেকে একটি ছেলে ও একটি মেয়ে ভালুকের শাবক নিয়ে আসা হয়। দুই বছরের মাথায় মেয়ে শাবক মারা যায়।

চিড়িয়াখানার কর্মীরা জানান, এখানে একটি ভালুক, দুটি বানর, তিনটি মায়া হরিণ, দুটি শজারু, একটি অজগর সাপ, চারটি বন মুরগি, একটি মথুরা, চারটি টার্কি ও তিনটি কচ্ছপ রয়েছে। এর মধ্যে খাবার হিসেবে হরিণকে লাউ ও মিষ্টি কুমড়া, অজগরকে মাঝেমধ্যে ইঁদুর, শজারুদের আলু ও কচু, বানরকে মিষ্টি কুমড়া ও ভাত এবং মুরগিকে ধান দেওয়া হয়।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, চিড়িয়াখানার প্রাণীদের থাকার ঘরগুলো জরাজীর্ণ। খাবারের ঘরে শুধু কয়েকটি লাউ ও কচু দেখা গেছে।

প্রাণীদের প্রয়োজনের অর্ধেক খাবারও সরবরাহ করা হয় না বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মচারী। তিনি বলেন, ১৫-২০ দিন ধরে অজগর সাপ ও শজারুদের জন্য কোনো খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে না। জেলা পরিষদ থেকে অজিত কুমার চাকমা নামে এক ব্যক্তি প্রাণীদের জন্য খাবার সরবরাহ করেন। 

চিড়িয়াখানায় দায়িত্বরত তত্ত্বাবধায়ক রিন্টু চাকমা বলেন, তাঁদের চিড়িয়াখানায় কাজ করার কোনো অভিজ্ঞতা নেই। শুধু সরবরাহ করা খাবার প্রাণীদের খাওয়ান তাঁরা।

চিড়িয়াখানার দায়িত্বে থাকা জেলা পরিষদের সদস্য সাধন মনি চাকমা বলেন, চিড়িয়াখানার জন্য প্রতি মাসে ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রাণীদের পরিচর্যা ভালোভাবে চলছে বলে দাবি করেন তিনি। 

বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞ রেজা খান বলেন, ভালুক বনের ফল, লতা-পাতা ও মাংস খেয়ে থাকে। অন্য খাবার দিলে তা যথেষ্ট হবে না। আর একটি ভালুককে অযত্নে ও সঙ্গী ছাড়া রাখা অমানবিক।