করোনাকালের ঈদ পেরিয়ে বৃষ্টিস্নাত সকাল। আগস্টের আবহে চন্দ্রিমা উদ্যানের প্রকৃতির এ এক অদ্ভুত বিষণ্নতা। কোনো গাছেই কোনো ফুল নেই। আগের মতো রোজ সকালে অনেক মানুষের জোর কদমে হাঁটা নেই। আছে কেবল চারদিকে প্রগাঢ় সবুজের আহ্বান। গাছের পাতা থেকে টুপটাপ করে বৃষ্টির কণা চুইয়ে পড়ছে সেসব ঘাসের ওপর। নেই খুব বেশি পাখিদের ডাকাডাকি, হকারদের আনাগোনা। ফুল দেওয়া শেষ করে নাগেশ্বরগাছগুলো এখন ফলভারানত। রাস্তার ধারে নতুন করে লাগানো হয়েছে কয়েকটা কেসিয়া ও জাকারান্ডার চারা।
দুই বছর আগেও চন্দ্রিমা উদ্যানে বেয়াড়াভাবে বেড়ে ওঠা ঝোপঝাড়ে বেশ কিছু বুনো ফুলের দেখা পেতাম। সেসব গাছ এখন পরিষ্কার করে ফেলা হয়েছে। নিবিড় বৃক্ষতরুর ঘন পত্রপল্লবে এখন কেবলই সবুজের মাখামাখি। একবারে পশ্চিম সীমানায় থাকা একটি নাগলিঙ্গমগাছের গা বেয়ে ফুটে রয়েছে অল্প কিছু ফুল।
এর মধ্যেও চন্দ্রিমা উদ্যানের একেবারে দক্ষিণ প্রান্তে মেমোরিয়াল হলের প্রবেশপথে একটি গাছে বেশ কয়েকটি ফুলের লাল কুঁড়ি উঁকি দিচ্ছে। অনেকবারই তা দেখেছি। সকালে কখনো ওগুলোকে ফুটতে দেখিনি। হঠাৎ এক দুপুরে গিয়ে সেসব কুঁড়ির ফুলগুলোকে দেখলাম ফুটে আছে। রক্তরঙা লাল ফুলগুলোর চেহারা অনেকটা বুনো গোলাপের মতো। কিন্তু গাছটা মোটেই গোলাপের মতো নয়। নরম আর রসাল ডালপালা। পুরু ভারী পাতা। ডালপালা ও পাতা ভাঙলে দুধের মতো কষ ঝরে। ডালের গায়ে তীক্ষ্ণ কাঁটা।
ডালের মাথায় একটি করে ফুল ফোটে। ফুলের উজ্জ্বল লাল রঙে আকৃষ্ট হয়ে দেখলাম খুদে খুদে মৌমাছি গুঞ্জন তুলে ওড়াউড়ি করছে। ফুলের মাঝখানে লাল একটি গোছায় কয়েকটা সরু ও খাটো সুতোর মতো পুরুষ কেশর। তার মাথায় খুদে বুটির মতো হলদে সাদা দানার পরাগধানী। কেন্দ্রস্থলে তারার মতো গর্ভমূল। এসব ধরে মৌমাছিটা লুটোপুটি খাচ্ছে।
এ ফুলে মৌমাছিরা আসে মধুর লোভে। ওরা তো মধু নিয়ে চলে যায়। আর ওদের ‘মাখব গায়ে ফুলের রেণু’ স্বভাবের কারণে ফুলটা গর্ভবতী হয়। বলধা গার্ডেনের একটা গাছে গত বছর ডিসেম্বরে দেখেছি রোজ ক্যাকটাসের বেশ কয়েকটা ফল। ফলগুলো ফানেলের মতো আকৃতির। পেকে হলুদ হয়ে নিষ্পত্র ডালের মাথায় দুলছিল। ভেতরে থাকে বীজ। বীজ থেকে চারা হয়। ডাল কেটেও চারা তৈরি করা যায়।
গাছটার নাম রোজ ক্যাকটাস। এ গাছকে ক্যাকটাস ভাবাই স্বাভাবিক, পরিবারও তা-ই বলে। কিন্তু সাধারণভাবে ক্যাকটাস বলতে আমরা যে ধরনের গাছকে বুঝি, রোজ ক্যাকটাস আবার তেমন নয়। ক্যাকটাসে সাধারণত পাতা থাকে না। থাকলেও খুব ছোট হয়। কিন্তু রোজ ক্যাকটাস গাছ সবুজ পত্রপল্লবে ঠাসা, কাণ্ড কাঁটাময়।
গাছটির উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Pereskia bleo, পরিবার ক্যাকটেসি। পেরেস্কিয়া গণের ১৭টি প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। এর মধ্যে পেরেস্কিয়া ব্লেও প্রজাতির উদ্ভিদ বাংলাদেশ, ভারত, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া প্রভৃতি দেশে দেখা যায়। এ দেশে বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন পার্ক ও বাড়ির বাগানে গাছটি দেখা যায়। এ গাছের কিছু ভেষজ গুণ, জলশোধন ও পোকা তাড়ানোর ক্ষমতা আছে। গাছটির জন্ম ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মধ্যবর্তী কোনো এক জায়গায়।