পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার ধূলিয়া গ্রামের মিজান গার্ডেন। সেখানে গেলেই এখন প্রথমেই নাকে আসে বাতাসে ভেসে আসা টক-মিষ্টি কাঁচা মাল্টার গন্ধ। চারপাশে তাকাতেই চোখে পড়ে সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে মাল্টাসহ নানা ফল। গাছে গাছে ঝুলছে নানা রঙের ফল। ফলের ভারে নুয়ে পড়েছে ডালপালা।
এই অপরূপ দৃশ্যের পেছনে যাঁর শ্রম-ঘাম ও পরিকল্পনা, তাঁর নাম মিজানুর রহমান। তিনি ঢাকার নিউমার্কেটে ব্যবসা করেন। ঢাকায় অবস্থান করলেও প্রতি মাসেই তিনি বাড়িতে আসেন বাগানের গাছের পরিচর্যা করার জন্য। মাল্টা চাষে সফলতা অর্জন করে তিনি উপকূলীয় অঞ্চলে ফল চাষের ধারণা পাল্টে দিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় আট একর জমির ওপর বাগানটি করেছেন মিজান। নিজের নামে তিনি বাগানটির নাম দিয়েছেন ‘মিজান গার্ডেন’। সফল হওয়ায় মাল্টার বাগানটি এখন এলাকায় সাড়া ফেলেছে। তবে এই বাগানে মাল্টা ছাড়াও রয়েছে পার্সিমন, রামবুটান, ড্রাগন, প্যাশন, জাম্বুরা, পেঁপে, পেয়ারা ও কমলার মতো নানা জাতের দেশি-বিদেশি ফলের গাছ। প্রায় তিন বছর আগে বাগান করার উদ্যোগ নেন মিজানুর রহমান। সে সময়ই মাল্টার গাছগুলো লাগানো হয়েছিল।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, তিন বছর বয়সী গাছগুলোতে থোকায় থোকায় মাল্টা ধরেছে। বাউফলের মতো উপকূলীয় অঞ্চলে মাল্টা কিংবা কমলালেবুর মতো ফল চাষে মিজানের সফলতা এখন পথ দেখাচ্ছে বিশেষজ্ঞ ও অন্য চাষিদের। পটুয়াখালীসহ উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে এসব ফল বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ করে ভালো ফলন পাওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন তাঁরা। আগে ধারণা ছিল, বিদেশে ছাড়া মাল্টা বা কমলালেবু ভালো হয় না। দেশে নিদেনপক্ষে বৃহত্তর সিলেট, চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও পঞ্চগড় জেলার মাটিই কেবল এই ফলগুলো চাষের উপযোগী। মিজান সে ধারণা ভুল প্রমাণ করেছেন।
মিজানের অনুপস্থিতে বাগানটির দেখভাল করেন মিজানের আত্মীয় মো. আরিফুর রহমান। তিনি স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার পাশাপাশি বাগানটির পরিচর্যা করেন। তাঁর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাগানের গাছগুলো পরিকল্পিতভাবে বড় করে তোলা হয়েছে। পুষ্টি সরবরাহে ব্যবহৃত হয়েছে কেঁচো কম্পোস্ট, ভার্মিকম্পোস্ট, খৈল, গোবর ও জৈব সার। তিনি বলেন, মাটিতে গোবর মিশিয়ে রোপণ করা হয় নাগপুরী, বারি-১, চায়না, এলাচি, বেরাকাটা জাতের কমলা এবং পাকিস্তানি, ইন্ডিয়ান ও বারি জাতের মাল্টার চারা। জৈব সার আর প্রাকৃতিক উপায়ে পরিচর্যায় ফল আসে গাছগুলোতে।
বাগানের খুঁটিনাটি বিষয়ে কথা হয় খোদ মিজানুর রহমানের সঙ্গে। এ সময় তিনি বলেন, পুষ্টির বিষয়টি মাথায় রেখে ও বিষমুক্ত ফল পাওয়ার আশায় তাঁর এ উদ্যোগ। এসব ফল গাছের খাদ্য হিসেবে সম্পূর্ণ জৈব সার ব্যবহার করা হয়েছে। এ বছর পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে আত্মীয়স্বজনসহ প্রতিবেশী ও স্থানীয় দুস্থ লোকজনের মধ্যে এসব মাল্টা বিলিয়ে দেওয়া হবে। পরে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বিষমুক্ত এসব ফল চাষ করা হবে।