মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে টিলাপরিবেষ্টিত বিষামনি এলাকার বাড়িতে পরিবারের পরিবারের ১৬ সদস্য নিয়ে বসবাস করছেন মনির মিয়া। তাঁর বাড়ির ওপরের অংশের টিলার অনেক জায়গা কাটা হয়েছে আগেই। সেই জায়গায় বাইরে থেকে মাটি এনে ভরাট করে লাগিয়েছেন আনারসের চারা। বৃষ্টিপাত শুরু হওয়ায় ইতিমধ্যে সেই মাটি ধসে পড়তে শুরু করেছে। সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই তাঁদের। পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকির মধ্যেও জীবন কাটাচ্ছেন তাঁরা। তবে এ বাড়ির একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বললে তাঁরা জানান, কোনো ভীতি তাঁদের মধ্যে নেই।
বিষামনির কাছের আরেক টিলাঘেরা এলাকা রাধানগর। এখানকার সুমন মিয়া পরিবারের ছয় সদস্য নিয়ে বসবাস করছেন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণভাবে।
শ্রীমঙ্গল বিষামনি এলাকার রবিউল আলম বলেন, ‘মনির মিয়া যেভাবে পাহাড়ের নিচে বসবাস করছে, যেকোনো সময় পাহাড়ের মাটি ধসে বড় রকমের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাদের এই জায়গা থেকে সরে যাওয়ার জন্য আমরা এলাকাবাসী অনেকবার অনুরোধ জানিয়েছে। যদি মাটি ধসে পড়ে, তাহলে তার ঘরের বাসিন্দাদের বেঁচে থাকার সুযোগই থাকবে না।’ তবে সুমন মিয়া বলেন, তাঁর যাওয়ার বিকল্প কোনো জায়গা নেই।
শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া অফিসের সহকারী পর্যবেক্ষক মো. আনিসুর রহমান বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার আগাম ও বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। এ কারণে উঁচু টিলার এলাকাগুলো অনেকটা ঝুঁকিতে আছে। বেশি বৃষ্টির কারণে পাহাড় ও টিলার মাটিতে ধস নামার আশঙ্কা আছে।
পাহাড় রক্ষা ও উন্নয়ন সোসাইটির চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘টিলার মাটি বৃষ্টির পানিতে গলে গিয়ে যেকোনো সময় ধসে যেতে পারে। আমরা সংগঠনের সদস্যদের নিয়ে অনেকবার এই বাসিন্দাদের সচেতন করার চেষ্টা করেছি।’ তিনি জানান, গত ৩০ বছরের ব্যবধানে শ্রীমঙ্গলে মোট পাহাড়ি ভূমির ৩০ শতাংশ পাহাড়ই অপরিকল্পিত ও অবৈধভাবে কেটে ফেলা হয়েছে। কোনো ধরনের নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে অনেকেই আবার পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করছেন। কেউবা রিসোর্ট নির্মাণ করছেন।
সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, নির্বিচারে পাহাড় কাটায় উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত শতাধিক পরিবার এই মুহূর্তে পাহাড়ধসের ঝুঁকি নিয়েই বসবাস করছে। মাঝেমধ্যে প্রশাসন অভিযান চালালেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাতে ফল হয় না। এ ক্ষেত্রে প্রশাসনের নজরদারি ও আন্তরিকতার অভাব রয়েছে বলে অনেকে মনে করেন তাঁরা।
এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোবাশ্বেরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পাহাড়ি এলাকাগুলোতে পাহাড়ের নিচে বাড়িঘর না বানিয়ে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার জন্য মাইকিংসহ বিভিন্নভাবে অনুরোধ জানিয়েছি। এখন তারা না সরলে আমরা কী করব। জোর করেও তো আর তাদের বাড়িছাড়া করতে পারি না। করলে বলবে আমরা জোর করে উচ্ছেদ করেছি।’