বায়ুদূষণে এবারও শীর্ষে বাংলাদেশ

বাংলাদেশ মূলত ২০১৮ সাল থেকে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর দেশের তালিকায় শীর্ষে উঠে আসে। ফাইল ছবি
বাংলাদেশ মূলত ২০১৮ সাল থেকে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর দেশের তালিকায় শীর্ষে উঠে আসে। ফাইল ছবি

বায়ুদূষণের দিক থেকে গতবারের মতো এবারও বিশ্বের শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। রাজধানী ঢাকাও বিশ্বের দূষিত বায়ুর শহরগুলোর মধ্যে গতবারের মতোই দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিশ্বের বায়ুর মান প্রতিবেদন-২০১৯ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ২০১৯ সালে বিশ্বের ৯৮টি দেশের সার্বক্ষণিক বায়ুর মান পর্যবেক্ষণ করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও সুইজারল্যান্ডভিত্তিক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার থেকে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। মূলত বাতাসে প্রতি ঘনমিটারে মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর সূক্ষ্ম বস্তুকণা পিএম-২.৫-এর পরিমাণ দেখে তালিকাটি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, গত বছর বাংলাদেশে বাতাসের প্রতি ঘনমিটারে পিএম ২.৫ এর মাত্রা ছিল ৮৩.৩। এর আগের বছর যা ছিল ৯৭.১। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মান অনুযায়ী প্রতি ঘনমিটারে যা থাকার কথা ১০-এর কম।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানমাত্রা অনুসরণ করে বৈশ্বিক বায়ুমানের ওই সূচকটি তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের তুলনায় গত বছর ভারত ও চীনে বায়ুদূষণ কমেছে যথাক্রমে ২০ ও ৯ শতাংশ। কিন্তু তারপরও এই দুটি দেশের বায়ুর মান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানমাত্রার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি খারাপ। অর্থনৈতিক মন্দার কারণে ভারতে বায়ুদূষণ কমতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আইনুন নিশাত প্রথম আলোকে বলেন, দেশে অনেকগুলো উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। এর ফলে বায়ুর মান দ্রুত খারাপ হবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এসব কাজের ধুলা ও যানবাহনের ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণে আগে থেকে ব্যবস্থা নিলে পরিস্থিতি এতটা খারাপ হতো না।

আইকিউর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বে বায়ুমান সবচেয়ে ভালো আছে—এমন দেশের তালিকায় প্রথম স্থানে রয়েছে বাহামা দ্বীপপুঞ্জ।

বাংলাদেশ মূলত ২০১৮ সাল থেকে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর দেশের তালিকায় শীর্ষে উঠে আসে। গত এক বছরে একাধিকবার বায়ুদূষণ রোধে সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোকে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন উচ্চ আদালত। দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি সংস্থা পরিবেশ অধিদপ্তর বায়ুদূষণ রোধে বেশ কিছু উদ্যোগও নেয়।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, মূলত শীতকালে বাংলাদেশে বায়ুর মান খারাপ অবস্থায় চলে যায়। কিছুদিন পর বৃষ্টি শুরু হলে বায়ুর মান ভালো হয়ে যাবে।

>

যুক্তরাষ্ট্র ও সুইজারল্যান্ডভিত্তিক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ারের প্রতিবেদন। বিশ্বের ৯০% মানুষ দূষিত বায়ুর মধ্যে বসবাস করে। বিশ্বে বছরে ৭০ লাখ মানুষ বায়ুদূষণজনিত রোগে মারা যায়।

তাহলে ২০১৮ ও ২০১৯ সালেও কেন বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম ছিল—এমন প্রশ্নের জবাবে পরিবেশমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা অবৈধ ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছি। প্রতিদিনই রাস্তায় ধুলা দূর করতে পানি ছিটানো হচ্ছে। আশা করি বায়ুর মান আস্তে আস্তে ভালো হবে।’

পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ মাসে দেশে ১ হাজার ৫৯টি ইটভাটা বন্ধ করেছে সংস্থাটি। কালো ধোঁয়া বের হওয়ায় ৪১টি যানবাহনকে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করে সংস্থাটি। বায়ুদূষণের আরেক বড় উৎস অবকাঠামো ও ভবন নির্মাণ করতে গিয়ে ধুলাদূষণ করায় ১৬৯টি প্রতিষ্ঠানকে মোট ১১ লাখ ৭৪ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অন্য দূষণকারীদের জরিমানা করা হয়েছে ৮১ লাখ টাকা।

পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে করা এক সমীক্ষা অনুযায়ী, ঢাকার বায়ুদূষণের জন্য দায়ী উৎসগুলোর মধ্যে ইটভাটার অবদান প্রায় ৫৮ শতাংশ। এরপরই রয়েছে নির্মাণ ও মেরামতকাজের সঙ্গে আসা ধুলা এবং মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন থেকে বের হওয়া ধোঁয়া।

বৈশ্বিক বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান এয়ার ভিজ্যুয়ালের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, গতকাল সকাল থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত ঢাকার বায়ুর মান বিশ্বে সবচেয়ে খারাপ ছিল। ঢাকার পরেই ছিল ভারতের মুম্বাই ও চীনের সাংহাই শহরের অবস্থান।