উম্মে কুলসুমের (৬০) বসতবাড়ি ও জমিজমা মিলিয়ে প্রায় ১৬ কাঠা জায়গা ছিল। কয়েক বছর ধরে পাহাড়ি ঢলের কারণে ভোগাই নদের ভাঙন হচ্ছে। সে ঢলে ভিটেবাড়ির বেশির ভাগ অংশ নদে বিলীন হয়ে গেছে। গত বৃহস্পতিবার আবার ভাঙন হলে ঘরের জিনিসপত্র দ্রুত অন্যত্র সরিয়ে নেন। বাকি সব নদে বিলীন হয়ে গেছে। এখন শুধু থাকার একটি ঘর রয়েছে। তা–ও হুমকির মুখে।
কুলসুম শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার গোবিন্দ নগর গ্রামের মৃত আবু মোতালেবের স্ত্রী। স্বামী ১৫ বছর আগে মারা গেছেন। দুই মেয়ে রাজধানীতে শ্রমিকের কাজ করেন। একটি ছেলে বিদ্যুৎ মেরামতের কাজ করে তাঁদের সংসার চালায়। কুলসুম বলেন, ‘সাহায্যের দরকার নাই, বান্দের একটা ব্যবস্থা অইলে বিরাট উপকার অয়।’
শুধু কুলসুম একা নন। তাঁর মতো প্রায় শতাধিক পরিবার কয়েক বছর ধরে নদের ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাঁরা নদের বাঁধ নির্মাণের জন্য সরকারের সহযোগিতার দাবি জানিয়েছেন।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসী জানান, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার যোগানিয়া ইউনিয়নের গোবিন্দনগর গ্রামের ভোগাই নদের ৫০ মিটার বাঁধ ভেঙে যায়। ঢলের পানিতে ২০০ বাড়িতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এসব পরিবারের অনেকে নিজ বাড়ি ছেড়ে স্বজনদের বাড়িতে চলে গেছে। অনেকে আবার বাড়ির জিনিসপত্র নিয়ে ঠাঁই নিয়েছে উঁচু স্থানে।
স্থানীয় ব্যক্তিরা বলেন, চার দফা পাহাড়ি ঢলে আরও এক হাজার মিটার বাঁধে আংশিক ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। আবারও উজান থেকে ঢল নামলে যেকোনো সময় এই বাঁধ নদে বিলীন হয়ে যাবে। উজানের ঢলের পানিতে গোবিন্দনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে নদীর পাড় পর্যন্ত ৩০০ মিটার কাঁচা সড়ক বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোকছেদুর রহমান, ইউএনও মাহফুজুল আলম, ভাইস চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
গোবিন্দনগর গ্রামে কৃষক মোস্তাফিজুল রহমান বলেন, ‘বান্দের একটা ব্যবস্থা দ্রুত করুন লাগবো। তা না অইলে হিবার (আবার) গাঙ্গ ঢল আইলে আমগর আর বাঁচুনের কোনো উপায় থাকত না।’
যোগানিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মো. আমান উল্লাহ বলেন, গোবিন্দনগর গ্রামের ৫০ মিটার নদের ভাঙনে দুই শতাধিক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া নদের এক হাজার মিটার বাঁধ ভাঙনের কবলে রয়েছে। তাঁরা এর একটা স্থায়ী সমাধান চান।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বলেন, গত বছর গোবিন্দনগর গ্রামে ভোগাই নদে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু গত চার দফায় পাহাড়ি ঢলে সেই বাঁধ ভেঙে গেছে। দ্রুত বাঁধ সংস্কারের জন্য পাউবোর কর্মকর্তারা দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন বলে জানিয়েছেন।
শেরপুর পাউবোর সহকারী প্রকৌশলী মো.শাহজাহান বলেন, ভোগাই নদের ভাঙন অংশ পরিমাপ করেছেন। বাঁধ নির্মাণের জন্য একটি প্রকল্প করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।